আজমীর হোসেন তালুকদার, ঝালকাঠি::
অবশেষে রাজাপুর সাবেক ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াস ও ওয়ালিউর ইসলাম অলি’র মিথ্যা মামলার খেলা শেষ হয়ে গেছে। ঝালকাঠির আদালতে ওসি মুনীর ও বাদী অলি’র দায়েরকৃত জিআর নং ১৭৪/১৬ (রাজা) ও জিআর নং ১৩/১৭ (রাজা) দুটি মিথ্যা-বানোয়াট মামলার চার্জ থেকে অব্যহতি প্রদান করেছে। মঙ্গলবার ঝালকাঠি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ ইখতিয়ারুল ইসলাম মল্লিক সর্বশেষ ফৌ: রিভিশন নং-১৮৭/১৭ (রাজা) ও ফৌ: রিভিশন নং-১৮৯/১৭ (রাজা) মামলার চার্জ খারিজ করে দিয়েছে। এর মাধ্যমে গত দু’বছরের আইনী হয়রানি, পুলিশী নির্যাতনের শিকার, সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান ও কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেন আদনান সকল মামলা থেকে মুক্ত হয়েছে বলে তার আইনজীবী জানিয়েছে।
আদানান ও মুরাদের আইনজীবী জানায়, গত ৭ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টায় রাজাপুর থানার বিতর্কিত সাবেক ওসি মুনির উল গিয়াসের নির্দেশে টিএন্ডটি রোডস্থ বাসা থেকে কলেজ ছাত্র আদনান ও তার ছোট ভাই কামরুল হাসান মুরাদকে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় ডেকে আনেন। সেখানে ওসি মুনির ৭ ডিসেম্বর বেলা ১০টা থেকে ১টার মধ্যবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার ভাই ওলিউর রহমান অলির বাসায় কথিত চুরি ঘটনায় জড়িয়ে আদনানকে স্বীকারোক্তি প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে।
প্রায় ৪০বছর সৌদি আরবে চাকুরিরত থাকা মরহুম পিতা মোঃ শাহজাহানের পুত্র কলেজ ছাত্র আদনান তার এ অন্যায় দাবীতে বিস্মিত হয়ে স্বীকারোক্তি প্রদানে অস্বীকৃতি জানলে তাকে আটকে অবস্থায় মধ্যযুগীয় নির্যাতন চালায়। খবর পেয়ে তার ছোটভাই মুরাদ ও মা তাছলিমা বেগম থানায় ছুটে আসলে তাকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে ৫লাখ টাকা দাবী করে অন্যথায় ক্রসফায়ার দেয়ার হুমকি দেয়।
এসময় ছেলের প্রান বাচাতে তাছলিমা বেগম সেই রাতে আদনানের বিদেশে যাওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে তুলে ঘর রাখা দু’লাখ টাকা ওসি মুনিরকে দিলে মারধর থামায়। পরের দিন ৮ডিসেম্বর অসুস্থ আদনানকে উক্ত অলির দায়েরকৃত চুরি মামলার সন্দিগ্ধ আসামী করে আদালতে প্রেরন করে। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে উক্ত মামলার চার্জশীট প্রদানসহ বাদী অলির দায়েরকৃত অপর এক ননজিআর মামলায় অন্তর্ভূক্ত করে চার্জশীট প্রদান করে।
সকল মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আদানান ও মুরাদ জানায়, তারা সাবেক ওসি মুনীর, ওসি তদন্ত হারুন এবং চুরি ও ননজিআর মামলার বাদী অলির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে তারা আইনজীবীর সাথে আলাপ করতে দু/এক দিনের মধ্যে ঢাকায় যাবে। যারা গত দুটি বছর আইন ও আদালত নিয়ে খেলা করেছে আর তাদের জীবন অতিষ্ট করে দিয়েছে আইন’ই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে।
আদালতের রায়ের পর আদনান-মুরাদের মা তাসলিমা বেগম সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, মিথ্যার পক্ষে যতো শক্তিশালী ব্যক্তিরাই থাকুক যেটা সত্যি তা একদিন প্রমানিত হবেই। আমার ছেলেরা যে কোন অন্যায় অপকর্মে জড়িত নয় বরং ওসি মুনিরের মতো দুএকজন দূর্নীতিবাজ পুলিশী ক্ষমতার অপব্যাবহার করে ও ওলি-মুন্নীর মতো দুস্কৃতিকারীদের দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে তার সত্যতা প্রমান হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ আগস্ট রাজাপুর সদর ইউপি সদস্য নাজমা আক্তার মুন্নীর সাথে একটি জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের ঘটনায় প্রতিপক্ষ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি জুলফিকার আলী ও তার বড়ভাই মুক্তিযোদ্ধা আ: খালেকের সাথে সংঘর্ষ হলে সাবেক ওসি শেখ মুনীর উল গিয়াসের ঈন্ধনে ইউপি সদস্য মুন্নী বাদী হয়ে রাজাপুর থানায় ধর্ষন প্রচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করে যাতে কলেজ ছাত্র ইমরান হোসেন আদানান, তার ছোটভাই সাংবাদিক কামরুল হাসান মুরাদকে প্রদান আসামী করা হয়। পরবর্তীতে ওসি মুনিরের চাপে উক্ত মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় তাদের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান করলে তারা উক্ত চার্জ থেকে অব্যহতি চেয়ে জেলা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করলে শুনানী শেষে আদালত সেই মামলাও খারিজ করে দিয়েছে। সরকারের গোয়েন্দা তালিকা অনুযায়ী বিএনপি ঘরের চিহ্নিত দূর্নীতিবাজ সাবেক ওসি মুনীর রাজাপুর থানায় দায়িত্ব পালনকালে চোর-ডাকাত,মাদক সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত বখরা আদায়, জামায়াত-বিএনপি নেতাদের সাথে সখ্যতা, নারীকেলেংকারী, তক্ষক পাচার ও এক মহিলা আ’লীগ নেত্রীর সাথে বিশেষ সম্পর্কের মাধ্যমে জনমনে পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ভ‚লুন্ঠিত ও বিতর্কিত করে আসছিল বলেও অভিযোগ ছিলো।#