রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। শনিবার সকাল ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুই অংশের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এবং নাম ঘোষণা করা হবে। মহানগরীর সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার কাউন্সিলর এবং প্রায় তিন হাজার ডেলিগেট সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
প্রায় সাত বছর পর অনুষ্ঠেয় সম্মেলনকে ঘিরে নগরীর নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নৌকাকৃতির সুবিশাল মঞ্চ তৈরি ছাড়াও সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকাকে মনোরম সাজে সাজানো হয়েছে।
এবারের সম্মেলনের মাধ্যমে উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বে আমূল পরিবর্তন আনার কথা শোনা যাচ্ছে। নতুন কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ত্যাগী ও দক্ষ এবং বিতর্কমুক্ত, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদেরই প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে দলে আলোচনা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণের দুই অংশের নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনো কেলেঙ্কারিতে সম্পৃক্ততাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থের বিনিময়ে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ফ্রিডম পার্টির ক্যাডারসহ মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিতদের ঢোকানোর অসংখ্য লিখিত অভিযোগও কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা আছে। এসব বিতর্কিত নেতাকে বাদ দেওয়া হতে পারে।
এই অবস্থায় মহানগর উত্তরের শীর্ষ পদে বর্তমান সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এমপি ছাড়াও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, নগর উত্তরের বর্তমান সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমান, আসলামুল হক আসলাম এমপি, আজিজুর রহমান বাচ্চু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমএ কাদের খান, যুবলীগের সদ্য সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার প্রমুখের নাম আলোচনায় রয়েছে।
উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান এমপি স্বপদে বহাল থাকার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান এবং দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ সাইফুল সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে চাচ্ছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বর্তমান সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত ছাড়াও আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, নগর দক্ষিণের বর্তমান সহসভাপতি নূরুল আমিন রুহুল এমপি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, আওলাদ হোসেন, ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির এবং কেএল জুবিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সমরেন্দ্র নাথ রায় সমর।
মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ স্বপদে থাকতে আগ্রহী। তিনি ছাড়াও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী হিসেবে তৎপর রয়েছেন বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দিলীপ রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন, গোলাম আশরাফ তালুকদার, অ্যাডভোকেট কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মোহাম্মদ আকতার হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আবদুল আজিজ তামিম, কার্যনির্বাহী সদস্য ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিএম সিরাজুল ইসলাম, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমান লাভলু, সূত্রাপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আবু সাঈদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সরকার পলাশ, গোলাম সারোয়ার কবির প্রমুখ।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহানগর পর্যায়ে প্রতি তিন বছর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও এবার ঢাকা মহানগরের দুই অংশের সম্মেলন হচ্ছে সাত বছর পর। ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।