পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমে আবারও দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দরে ঠেকেছে। তিন দিন ধরে এর দাম টানা বেড়েছে। বাজারে এর সরবরাহও কমে গেছে। এ সময়ে আমদানি করা ও দেশি পেঁয়াজের মানভেদে দাম কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল শুধু দেশি পেঁয়াজের দামই কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে।
দেশি নতুন পেঁয়াজের একটি অংশ বাজারে এলেও দামে প্রভাব ফেলতে পারেনি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের পরে দু’মাস পেরিয়ে গেলেও আমদানি করে পেঁয়াজের সরবরাহ খুব বেশি বাড়ানো সম্ভব হয়নি। পুরাতন পেঁয়াজের সরবরাহ ধীরে ধীরে কমে আসছে। এতে বাজারে পেঁয়াজের এখন সরবরাহ ঘাটতির কারণে দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আগামী মাসে দেশি নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দাম দ্রুত কমবে বলে আশা করছেন তারা।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। কিছু দোকানি জরিমানার ভয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। এতে ঘাটতি আরও বেড়ে যাচ্ছে। দেশি পুরাতন পেঁয়াজ এখন খুচরা বাজারে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পেঁয়াজসহ গাছের কেজি আগের মতো ১১০ থেকে ১২০ টাকায় রয়েছে। আমদানি করা মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজিতে ৭০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মিয়ানমার ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। তবে চীনের পেঁয়াজ মিলছে ১৪০ টাকায়। আর মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, মিসর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজ ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজিতে আমদানি হচ্ছে। আর মিয়ানমারের পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকায়। তবে পাকিস্তানের পেঁয়াজ উড়োজাহাজে আমদানিতে ব্যয় বেশি হয়েছে। মিসর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজ আমদানি খরচের তিন গুণ দামে কিনছেন ক্রেতারা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। পাকিস্তানের পেঁয়াজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান শ্যামবাজারের পবিত্র বাণিজ্যালয়ের ব্যবসায়ী হাফিজ উদ্দিন জানান, আমদানিতে ব্যয় বেশি হওয়ায় ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে দ্রুত সরবরাহ বাড়াতে উড়োজাহাজে আমদানি করেছেন।
কারওয়ান বাজার, মিরপুর-১ নম্বরসহ অন্যান্য পাইকারি আড়তে গতকাল দেশি পেঁয়াজ ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়। মিসর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজ ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। মিরপুর-১ নম্বরের মজুমদার ট্রেডার্সের পাইকারি ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মজুমদার সমকালকে বলেন, এ বাজারে ৩০টির বেশি পাইকারি আড়ত রয়েছে। কিছু আড়তদার এখন জরিমানার ভয়ে পেঁয়াজ তুলছেন না। আবার যারা আনছেন, তারা পরিমাণে কম এনে দ্রুত বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, দেশি পেঁয়াজ যারা বিক্রি করতেন তারা এখন মোকামে তেমন পুরাতন পেঁয়াজ পাচ্ছেন না। এ কারণে বাজারে সরবরাহ বাড়ছে না। দেশি নতুন পেঁয়াজ এলেই দাম স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।
টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। আর এখন পেঁয়াজের বাজারের অস্থিরতার কারণে পাইকারির সঙ্গে খুচরার দামের ব্যবধান কেজিতে প্রায় ৪০ টাকা।
এদিকে বাজারে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি বাড়ালেও ক্রেতা সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডিলাররা। প্রত্যেক ট্রাকের সামনেই দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে। অনেকে শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজ নিতে পারছেন না। গতকাল মিরপুর-১ নং গ্রামীণফোন সেন্টারের পাশে টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে অপেক্ষমাণ অনেকে শেষ পর্যন্ত ট্রাকের পিছু ছুটলেও পেঁয়াজ কিনতে পারেননি। শতাধিক ক্রেতা পেঁয়াজ না পেয়ে ফেরত যান। এই এলাকার বাসিন্দা রোজিনা বেগম জানান, দুই দিন ধরে অফিসে দুপুরের ছুটির ফাঁকে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়ে পেঁয়াজ পাচ্ছেন না। অন্য সবার মতো আগে এসে লাইনে দাঁড়ানোর সুযোগ না থাকায় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।
সিলেটে আবার বেড়েছে পেঁয়াজের দাম
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বলে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সিলেট লাগোয়া ভারত সীমান্তের ওপার থেকে অবৈধভাবে পেঁয়াজ এলেও ঘন ঘন আটকের কারণে বাজারে পেয়াজের উত্তাপ বলে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কৌশলে আলাপ করে জানা গেছে। এ ছাড়া পরিবহন ধর্মঘট ও অন্যান্য কারণে পেঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছে। এ কারণে খুচরা বাজারে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
আমদানি করা পাকিস্তান ও তুরস্কের পেঁয়াজ সিলেটের বাজারে এখনও আসেনি। এসব কারণেই সিলেটের বাজারে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী।
গতকাল রোববার সকালে সিলেটের বড় পাইকারি বাজার কালীঘাট ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের তীব্র সংকট। অনেক আড়তে পেঁয়াজ থাকলেও সেগুলো বেশ পুরোনো। তাও বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকায়। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায়। গত তিন-চার দিনের মধ্যে নতুন করে কোনো পেঁয়াজ বাজারে না আসায় এমনটি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি তাহমিন আহমদ সমকালকে বলেন, বাজারে পেঁয়াজ সংকট রয়েছে। আবার অনেক ব্যবসায়ী পেঁয়াজ বিক্রিও করতে পারছেন না। সরকার পেঁয়াজ আমদানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে। বাজার স্বাভাবিক রাখতে বিমানেও পেঁয়াজ আনা হয়েছে। এখন কিছুটা দাম থাকবে। তবে ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই প্রতারিত না হন।