1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ০৮:২২ অপরাহ্ন

বাবা-মা ও বোনকে হত্যার পর নিজেই পুলিশকে খবর দেন

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : রবিবার, ২০ জুন, ২০২১

জীবন নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর কদমতলী মুরাদপুর হাইস্কুল সংলগ্ন বহুতল ভবনের একটি বাসা থেকে একই পরিবারের তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় একই পরিবারের মেয়ে মেহজাবিন মুনকে আটক করা হয়েছে। মূলত পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড বলছে পুলিশ ও প্রতিবেশীরা।

ওই তরুণী তার বাবা-মা ও বোনকে হত্যার পর নিজেই পুলিশকে খবর দেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওয়ারী জোনের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ। সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তারা দেখতে পান, দোতলার ওপর তিন কক্ষের বাসা এবং এর একটি কক্ষে হাত বাঁধা অবস্থায় বাবা মা ও বোনের মৃতদেহ বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে আছে।
এদিকে, শাহ ইফতেখার আহমেদ এর বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, পুলিশকে ফোন করে আত্মস্বীকৃত হত্যাকারী ওই তরুণী জানান যে, ‘তিনি খুন করেছেন এবং পুলিশ সেখানে পৌঁছাতে দেরি করলে আরও দুজনকে খুন করবেন।’
পুলিশ কর্মকর্তা শাহ ইফতেখার আহমেদ বলছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ক্ষোভ থেকেই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে এ ঘটনা ঘটানো হলো, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আটক হওয়া মেহজাবিনের স্বামী ও বোনের মধ্যে অস্বাভাবিক সম্পর্কের কথা তারা শুনছেন। এ নিয়ে অনেকদিন ধরেই পরিবারের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছিল।
এর আগে শনিবার (১৯ জুন) সকালে মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুলের (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। অচেতন অবস্থায় অভিযুক্ত মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম ও নাতনি তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
পরিবার ও পুলিশ বলছে, মা-মেয়ের মধ্যে দেহ ব্যবসা ও স্বামীসহ পরিবারের অন্যদের সঙ্গে অস্বাভাবিক সম্পর্কের কারণেই মেহজাবিন পরিকল্পিতভাবে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মূলত ঘুমের ট্যাবলেট গুঁড়ো করে চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাইয়ে অচেতন করে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা পুলিশকে জানিয়েছেন মেহজাবিন।
বিবিসি বাংলা ওয়ারী জোনের ডিসি শাহ ইফতেখার আহমেদ এর বরাত দিয়ে জানায়, ‘পরিবারের প্রতি মেহজাবিনের ব্যক্তিগত ক্ষোভ ছিল। বাবা প্রবাসে ছিল, সেখানে সে বিয়ে করেছেন। তিন মাস হলো দেশে এসেছেন। তার মা দুই বোনকে অসামাজিক কার্যকলাপে বাধ্য করতেন।এসব নিয়ে প্রতিবাদও করেছিল সে, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।’
এদিকে, আটক মেহজাবিন মুনের খালা ইয়াসমিন একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘আমার ভাগনি মেহজাবীনের স্বামী শফিক একজন খুনি ও একাধিক মামলার আসামি। ৫ বছর আগে কেরানীগঞ্জে একজনকে হত্যা করেন। সে মামলা থেকে রেহাই পেতে টাকার জন্য ভাগনি মেহজাবিনের সঙ্গে তার স্বামী শফিকুল ইসলামের প্রায় ঝগড়া হতো।
তাছাড়া শফিক তার শালি আমার আরেক ভাগনি নিহত জান্নাতুল ইসলামের সঙ্গে জোরপূর্বক অনৈতিক কাজ করত। এ ঘটনা আমার নিহত বোন মৌসুমী জানতে পেরে জামাতা শফিককে বাধা দিতেন। এ নিয়ে আমার বোনের সঙ্গে শফিকের প্রায় ঝগড়া হতো। শফিকের সঙ্গে আমার বোন পেরে উঠতে না পেরে তার ছোট মেয়ে জান্নাতুল ইসলামকে (শফিকের শালিকে) কারাগারে দিয়ে দেন। শফিক তদবির করে ৫ মাস পর তাকে কারাগার থেকে বের করে নিয়ে এসে আবার তার সঙ্গে অনৈতিক কাজ করেন।
এ নিয়ে আমার ভাগনি ও বোনের সঙ্গে শফিকের কলহ লেগেই থাকত। দরজা-জানালা বন্ধ করে আমার বোন ও ভাগনিকে প্রায়ই মারধর করত। এ বিষয়ে কদমতলী থানায় অভিযোগ জানিয়ে কোনো ফল না পেয়ে কোর্টে মামলাও করা হয়েছে।’ জানা গেছে, মেহজাবীনের মা মৌসুমী সাবেক একজন বিএনপি নেতার পিএস হত্যা মামলার আসামি।
মেহজাবীনের বাবা মাসুদ রানা স্ত্রী-মেয়ের এসব অপকর্মের বিষয়ে জানতেন। গুরুতর অসুস্থ অভিযুক্তের স্বামী শফিকুল ইসলাম অরণ্য জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মেহজাবিন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেন।
তারা বাসার সবাই খেয়েছে, কিন্তু পরে কী হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট মনে নেই। তিনি আরও বলেন, তার স্ত্রী উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করছিলেন। পরিবারের সঙ্গে নানা কলহে জড়াতেন। এমনকি স্বামী অরণ্যের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে লিপ্ত হতেন।
অভিযুক্ত মেহজাবিনের চাচাতো বোন পরিচয় দেওয়া শিলা গণমাধ্যমকে বলেন, দুদিন আগে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে মায়ের বাড়িতে বেড়াতে আসে মেহজাবিন। এসেই তার ছোট বোন জান্নাতুলের সঙ্গে তার স্বামীর পরকীয়া রয়েছে বলে বাবা-মাকে অভিযোগ করেন। এ নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয়।
প্রতিবেশীরা অবশ্য বলছেন, তারা এই পরিবারের মধ্যে কোন ক্ষোভ কখনও টের পাননি। যে ভাড়া বাড়িতে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানকার অন্য অধিবাসীদের সঙ্গেও তাদের কারও কখনো কোনো সমস্যা হয়নি। তারা নিজেদের মতো করেই ফ্ল্যাটে থাকত।
তবে পরিবারটির ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয়ের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, মৃতদেহগুলো যে অবস্থায় পড়ে ছিল, একজন নারীর পক্ষে একা বাবা-মা-বোনকে হত্যা করে এক কক্ষে রেখে দেয়া অসম্ভব বলেই মনে করেন তারা।
তিনি বলেন, পরিবারটির অভ্যন্তরে মেহজাবিনকে নিয়ে আগেও নানা ঘটনা ঘটেছে। সেগুলো তদন্ত করলেই এ হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ উদঘাটিত হবে বলে মনে করেন তারা।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews