জুলাইয়ের শেষে যে তিনটি সিটি করপোরেশনে ভোট হচ্ছে তা মধ্যে সিলেটে মেয়র পদে নির্বাচন করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। জোটের শরিক বিএনপি যেন তাদেরকে ছাড় দেয়, সে জন্য দলটিকে নানাভাবে চাপ দেয়ার কৌশল ঠিক করছে তারা।
সিলেটের ছাড় নিশ্চিত করতে রাজশাহীতে এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। তবে আসলে সেখানে নির্বাচনের ইচ্ছা নেই তাদের।
জামায়াত নেতারা বলছেন, বিএনপি সিলেটে তাদেরকে ছাড় না দিলেই কেবল রাজশাহীতে ভোট করবেন তাদের প্রার্থী।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানোয় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের অবশ্য দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ নেই। তাদেরকে জোটের কারও প্রতীক অথবা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। আর সে প্রস্তুতিই নিচ্ছে তারা।
আগামী ২৬ জুন ভোট হতে যাওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে এস এম সানাউল্লাহকে বিএনপির হাসান উদ্দিন সরকারের বিপরীতে প্রার্থী করা, তারও আগে স্থগিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিম উদ্দিনের ভোটের প্রচার শুরু করার পেছনেও জামায়াতের উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে ‘জিম্মি’ করে সিলেটে ছাড় দেয়ার প্রতিশ্রুতি আদায়।
জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বলছেন, সিলেটে যে কোনো মূল্যে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন তারা। সেক্ষেত্রে তাদের পছন্দের প্রার্থী জামায়াতের মহানগরের আমির এহসানুল মাহবুব যোবায়েরকে ঠিক করা হয়েছে। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে জোরেশোরে প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন সাবেক শিবির নেতা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট হবে। আর মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ২৮ জুন।
২০১৩ সালে সিলেটে জেতা বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী আবারও ভোটে দাঁড়াতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ওই নির্বাচনে দেশের পাঁচ মহানগরে জেতা বিএনপির মেয়রদের মধ্যে নগরের উন্নয়নের আরিফুলের করা কাজগুলোই সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। ফলে তিনি আবার জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
সিলেটে বিএনপির আরও একজন নেতা মেয়র হিসেবে নির্বাচন করতে চাইলেও বিএনপির কেন্দ্র আরিফুলের পক্ষেই বলে নিশ্চিত করেছেন একাধিক নেতা।
এর মধ্যেই অবশ্য জামায়াত নেতা যোবায়ের নানাভাবে নিজের অবস্থান পোক্ত করার চেষ্টায়। বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে দুঃস্থদের মধ্যে সেলাই মেশিন, নগদ অর্থ বিতরণ করছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের দিচ্ছেন বৃত্তি। রমজানের ইফতারকেও রাজনৈতিক প্রচারের অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন তিনি। করছেন গণসংযোগ।
গত জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে উপ-নির্বাচনে মেয়র পদে জামায়াত নেতা সেলিম উদ্দীন জনসংযোগ শুরু করেন। বিএনপি ওই নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণা গত তাবিথ আউয়ালকে। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে আলোচনা না করেই জামায়াতের ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপিতে তখন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
পরে আদালতের নির্দেশে ভোট স্থগিত হয়ে যায়। এরপর আস গাজীপুর সিটি নির্বাচন। সেটাও ৪১ দিন পিছিয়েছে আইনি জটিলতায়। এখানে জোটের শরিক জামায়াত প্রার্থীকে ময়দান থেকে তুলতে বিএনপিকে ঘাম ঝরাতে হয়।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে আগে জামায়াতের প্রার্থী সানাউল্লাহ ভোট থেকে সরলেও তখন সিলেটের ছাড় দেয়ার শর্তের কথা জানিয়ে রাখে তারা।
জামায়াতের তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা ঢাকাটাইমসকে বলেছেন, খুলনা, গাজীপুরে তারা বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু সিলেটে দেবেন না।
জামায়াতের নায়েবে আমীর মিয়া গোলাম পরওয়ার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সিলেটে আমাদের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব যোবায়ের। তিনি কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। জনপ্রিয়তাও আছে। আশা করি আগামী সিটি নির্বাচনে জোট থেকেও তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।’
বিএনপির মেয়রকে বাদ দিয়ে আপনাদেরকে কেন মনোনয়ন ছেড়ে দেবে-এমন প্রশ্নে জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমরা তো সব জায়গাতে ছাড় দিচ্ছি। সিলেট আমরা চাই। এখনকার ব্যাপারে আমরা ডিটারমাইন্ড।’
সদ্য কারামুক্ত আরেকজন জামায়াত নেতা বলেন, ‘সিলেটে তো আমাদের একজন কাজ শুরু করেছেন অনেক আগে থেকে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
বিএনপিকে জিম্মি করবে জামায়াত
সিলেটে সমর্থন নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তেমন ভোট না থাকলেও ঢাকা উত্তরে সেলিম উদ্দিনকে মাঠে রাখবে জামায়াত।
ঢাকাটাইমসকে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘আমি তো কাজ শুরু করেছিলাম। এখনও চলছে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।’
এরই মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরশনে সিদ্দিক হোসাইনকে মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে ভোটের প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপির জোটের মিত্র।
যে তিন মহানগরে ভোট হচ্ছে তাতে জামায়াতের সবচেয়েছে বেশি শক্তি উত্তরের এই শহরটিতেই।
১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে রাজশাহী সদর আসন থেকে বিএনপি জিতলেও তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ৭১ এ পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা দলটিই। আওয়ামী লীগের অবস্থান তখন অনেক পেছনে ছিল। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দলটির প্রার্থী সে সময় তৃতীয় হন।
তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় চার জাতীয় নেতার একজন মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। তিনি ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের অবস্থান সংহত করেছেন। ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনে তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থীকে হারিয়ে দেন। ১৯৭৩ সালের পর এই প্রথম ভোটে ওই নগর থেকে আওয়ামী লীগের কেউ জেতে।
রাজশাহীতে জামায়াতের অবস্থান এখন তৃতীয়। তবে দলটির বিশ্বাস, তাদের সমর্থন ছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি সেখানে পেরে উঠবে না।