অপরিপক্ক আমের বাজারজাত ঠেকাতে গাছ থেকে আম পাড়ার সময়সীমা বাঁধা। যে আম যত আগে পাকে, সে আম পাড়ার দিন ঠিক করা হয়েছে তত আগে। সে অনুযায়ী গোপালভোগ জাতের আম পাড়ার দিন ঠিক ছিল রবিবার (২০ মে)। উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে চলতি মৌসুমে এই আমটিই প্রথম পাড়ার অনুমতি ছিল রাজশাহীর চাষিদের।
গোপালভোগের নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থেকেই চাষিরা এই আম নামানো শুরু করেছেন। সকাল থেকেই বাগানে বাগানে শুরু হয় আম পাড়ার উৎসব। দুপুরে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারের কয়েকটি ফলের দোকানে গায়ে আঠা লেগে থাকা গোপালভোগ আম বিক্রি হতে দেখা যায়।
বিক্রেতা শাহীন আলম জানালেন, কয়েকদিন আগেই আঁটি আম বাজারে এসেছে। তবে উন্নতজাতের আম গোপালভোগই প্রথম। প্রতিবছরই আমটির চাহিদা থাকে ভালো। তাই এবার পুঠিয়ার একটি বাগানমালিককে তিনি আগাম টাকা দিয়ে রেখেছিলেন। নিষেধাজ্ঞা কেটে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাগানমালিক আম নামিয়ে তার দোকানে দিয়ে গেছেন।
শাহীনের দোকানে দেখা যায়, গায়ে বোটা ও আঠা লেগে থাকা তাজা আম। শাহীন বলেন, আমের বাইরের খোসা সবুজ হলেও ভেতরটা হলদে। বাসায় দু-একদিন রাখলে এমনিতেই পেকে যাবে। এ জন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। প্রতি কেজি আম তিনি বিক্রি শুরু করেছেন ১২০ টাকা দরে। সরবরাহ বাড়লে আমের দাম কিছুটা কমবে বলেও জানান তিনি।
বাঘা উপজেলার মনিগ্রাম এলাকার আম চাষি আমিনুল ইসলাম জানান, রবিবার তিনি তার বাগানের দুটি গাছ থেকে চার মণ গোপালভোগ আম পেড়েছেন। ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন ১৬ হাজার টাকায়। আমিনুল জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার গাছে সবচেয়ে বেশি মুকুল এসেছিল। তাই ফলন হয়েছে বেশি। তবে মৌসুমের শুরুতেই টানা কয়েকটি ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হয়েছিল অনেক।
এদিকে রাজশাহীর বাগানগুলোতে এখন আম ঝুলছে থোকায় থোকায়। নুইয়ে পড়েছে গাছের ডাল। তা দেখে মুগ্ধ চাষি। মুখে হাসি নিয়ে তারা বিভিন্ন জাতের আম পাড়ার অপেক্ষায়। জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময় অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে বাজারে আসবে নানাজাতের আম। এর মধ্যে হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত ও লক্ষ্মণভোগ আসবে ১ জুন থেকে। আর ল্যাংড়া নামবে ৬ জুনের পর। এছাড়া আমরুপালি ও ফজলি ১৬ জুন এবং আশ্বিনা জাতের আম ১ জুলাইয়ের আগে চাষিরা গাছ থেকে পাড়তে পারবেন না।
জেলা প্রশাসক এসএম আবদুল কাদের বলেন, যখন বাজারে অনেক আগে কিংবা পরে আম পাওয়া যায়, তখন অনেকে মনে করেন যে এতে রাসায়নিক দেয়া আছে। ক্রেতাদের এই ভীতি দূর করতেই আম পাড়ার একটা নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নেয়া হয়েছিল। এতে কেউ মনে করবে না যে এই আম এখন গাছে থাকার কথা নয় অথবা এতো আগে স্বাভাবিকভাবে পাকার কথা নয়। এতে চাষিদেরই লাভ।
জেলা প্রশাসক জানান, ঠিক করে দেয়া সময় অনুযায়ী আম নামানো হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এ জন্য প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান ও কৃষি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর আমের বাজার জমে উঠলে জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিনে আট ঘণ্টা করে ২৪ ঘণ্টা পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ১৬ হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে আম বাগান ছিল। এবার তা বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ৪৬৩ হেক্টর। আর বাগানে রয়েছে ২৪ লাখ ২৬ হাজার ১৮৯টি আম গাছ। কোনও দুর্যোগ না হলে এবার ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন আশ্বিনা, ল্যাংড়া, লক্ষণভোগ, ক্ষীরসাপাত, আমরুপালি, তোতাপরী ও স্থানীয় জাতের গুটি আমের ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, আর কয়েকদিন আবহাওয়া ভালো থাকলে আম নিয়ে চাষিরা এবার ভালো লাভ করবেন। এবার বাঘা উপজেলার ১৪ জন চাষির সঙ্গে আম রপ্তানিকারকরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। চাষিরা ২৬টি শর্ত মেনে আম উৎপাদনে রাজি হয়েছেন। এবার ১০০ টন আম বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।