1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫, ০৩:০৮ অপরাহ্ন

শুরু হচ্ছে ট্রানজিট

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : বুধবার, ৮ জানুয়ারী, ২০২০

চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট চালু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর আওতায় বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ অন্য যে কোনো দেশে সহজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। এর ফলে ৯ বছর আগে বহুমাত্রিক ট্রানজিট (নৌ, সড়ক ও রেল) চালুর বিষয়ে দু’দেশের সরকারপ্রধান যে একমত হয়েছিলেন, তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। অনেকে এ ব্যবস্থাকে ট্রান্সশিপমেন্টও বলছেন। এটি চালুর ফলে বাংলাদেশ ও ভারত লাভবান হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রানজিটের আওতায় পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ কমবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশেরও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেগবান হবে। তবে অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, ট্রানজিটের ফলে ভারত বেশি সুবিধা পাবে। এই চুক্তির ফলে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। বিনিময়ে ‘মাশুল’ বা ফি পাবে না বাংলাদেশ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই ট্রায়াল বা ‘পরীক্ষামূলক’ ট্রানজিট চালু হচ্ছে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠিত উভয় দেশের নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ওই সিদ্ধান্তই এখন কার্যকর হচ্ছে।

এদিকে ভারতকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিতে চট্টগ্রাম বন্দর প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেছেন, এ মাসেই দু-দফা পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল রান) ট্রান্সশিপমেন্ট হবে। গতকাল দুপুরে বন্দর ভবনে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, আমরা প্রস্তুত। আমাদের যথেষ্ট সক্ষমতা আছে। জানুয়ারিতেই দুটি ট্রায়াল রান হবে চট্টগ্রাম বন্দর ও কলকাতা বন্দরের মধ্যে। তার পর নিয়মিত হবে। মাশুল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত যেটা সেটাই হবে।

এক বা একাধিক দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সড়ক, রেল ও নৌপথে পণ্যসামগ্রী পরিবহন করার প্রক্রিয়াকে ট্রানজিট বলে। অন্যভাবে বলা যায়, ট্রানজিট হলো নিজ দেশের পণ্য অন্য কোনো দেশের ভূমি ব্যবহার করে নিজ দেশ বা তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানো। সংশ্নিষ্টরা বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিলেও বাংলাদেশের প্রস্তাব এখনও কার্যকর করেনি ভারত। ভারতের ভূখ ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটানে পণ্য পাঠাতে চায় বাংলাদেশ। ভারত সরকার এটি নিশ্চিত করলে বাংলাদেশ আরও লাভবান হবে বলে মনে করেন তারা।

সূত্র বলেছে, জানুয়ারির ২০ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ভারতে কনটেইনারভর্তি দুটি জাহাজ কলকাতা বন্দর থেকে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে পৌঁছবে। এর পর পণ্যগুলো খালাস হয়ে সড়কপথে আখাউড়া হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরা এবং সিলেটের তামাবিল হয়ে আসামে পৌঁছার কথা। এ ছাড়া কিছু পণ্য আশুগঞ্জ বন্দর হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী রুটে আসামের ধুবিয়ানা এবং রাজশাহীর গোদাগাড়ী হয়ে মেঘালয়ের ধুলিয়ানায় নিয়ে যাওয়া হবে। এ লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে প্রক্রিয়া চলছে।

এর আগে ২০১৬ সালের জুনে বাংলাদেশের আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার করে নৌ-ট্রানজিটের আওতায় পণ্য পরিবহন শুরু করে ভারত। দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় এটি চালু হলেও এ ব্যবস্থা তেমন সক্রিয় নয়। জানা যায়, মাত্রাতিরিক্ত ফি, অবকাঠামো দুর্বলতাসহ নানা কারণে আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহারে খুব একটা আগ্রহী নন ভারতের ব্যবসায়ীরা। যে কারণে নৌ-ট্রানজিটের সুফল তেমন মিলছে না। এখন নতুন করে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম এবং মোংলা পোর্ট ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেওয়া করতে চায় ভারত। জানা যায়, ভারতীয় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যসহ নেপাল ও ভুটানে পণ্য পরিবহন করলে বর্তমানের চেয়ে দুই-তৃতীয়াংশ খরচ কমবে। যে কারণে বাংলাদেশি বন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে ট্রানজিট করতে বেশি আগ্রহী তারা।

যোগাযোগ করা হলে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ সমকালকে বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রানজিট চালুর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট তারিখ সম্পর্কে পরিস্কার কিছু বলা হয়নি। তবে জানুয়ারিতেই এটি চালু হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে সচিব জানান, পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের আওতায় প্রাথমিকভাবে অল্প কিছু পণ্য আসবে। এতে তেমন চাপ হবে না। ফলে নতুন করে অবকাঠামো উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে পণ্য পরিবহনের চাপ বাড়লে বন্দরের অবকাঠামো ও সড়ক সংস্কার করতে হবে। এ জন্য সরকার দীর্ঘমেয়াদে পরিকল্পনা নিয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, ট্রায়াল বেসিস ট্রানজিটের জন্য তাদের প্রস্তুতি রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (পরিকল্পনা) জাফর আলম বলেন, কী পরিমাণ পণ্য আসবে তা জানা যায়নি। তবে পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের আওতায় যা আসবে তা হ্যান্ডল করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তিনি জানান, ছয় মাসের মধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার ডিপো চালু হচ্ছে। ফলে কোনো সমস্যা হবে না। তবে ভবিষ্যতে পণ্যের পরিমাণ বাড়লে বন্দরের অবকাঠামোর আরও উন্নয়ন করতে হবে। আশুগঞ্জ বন্দর সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন। অনেক রাজ্য নিজেই স্বয়ংসম্পূর্ণ। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে না। আর চাহিদা না বাড়লে বাণিজ্যের প্রসার ঘটে না। যে কারণে আশুগঞ্জ বন্দর এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি বলে মনে করেন তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবাল ও মেরিন) ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আলী চৌধুরী বলেন, এটি হবে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট। ফলে এখন যে অবকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে। তিনি বলেন, বন্দর ব্যবহারের জন্য সবার কাছ থেকে প্রযোজ্য হারে নির্ধারিত যে ফি আদায় করা হয়, ট্রানজিটের পণ্য পরিবহনে ভারতের কাছ থেকে একই ফি আদায় করা হবে। এটি সরকারি সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অবকাঠোমো উন্নয়ন ছাড়া ট্রানজিটের সুফল মিলবে না। একই সঙ্গে চার্জ বা ফি যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করতে হবে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বলেন, ট্রানজিট চুক্তির ফলে বাংলাদেশ সুবিধা পাবে না। কারণ, এর বিনিময়ে মাশুল বা ফি দেবে না ভারত। এই চুক্তি দেশের স্বার্থের পরিপন্থি- এ কথা উল্লেখ করে প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, এতে বাংলাদেশের পাওনাগুলো নিশ্চিত না করে একতরফাভাবে ভারতকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশের জনগণের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। সাধারণ মানুষের মতামত উপেক্ষা করে কোনো চুক্তি করলে দেশের জন্য সুখকর হয় না বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও এফবিসিসিআইর সাবেক পরামর্শক মঞ্জুর আহমেদ একই মন্তব্য করে বলেন, ট্রানজিটের ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মোংলা পোর্ট ব্যবহার করে ভারত তার নিজ ভূখণ্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মধ্যে কানেক্টটিভিটি (যোগাযোগ) জোরদার করতে পারবে। এতে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। এই ট্রানজিটের ফলে বাংলাদেশ তেমন লাভবান হবে না বলে মনে করেন তিনি।

সূত্র জানায়, ট্রানজিটের বিনিময়ে নতুন করে মাশুল বা ফি ধার্য করা হয়নি। কোনো কাস্টমস ডিউটি বা শুল্ক্ক নেবে না বাংলাদেশ। তবে বন্দর ব্যবহারের জন্য অপারেশনাল ও সার্ভিস চার্জ আদায় করা হবে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এই চার্জ আদায় করা হবে বন্দরের বিদ্যমান ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী। অর্থাৎ অন্যান্য জাহাজের ক্ষেত্রে যে পরিমাণ চার্জ আদায় করা হয়, ট্রানজিটের পণ্যের ওপর একই রেট প্রযোজ্য হবে। আবার সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, রাস্তা ব্যবহারের জন্য প্রযোজ্য হবে চার্জ। ট্রানজিটের পণ্যে ই-লক ব্যবহার হবে। অর্থাৎ ভারত থেকে কোনো পণ্য বন্দরে আসার পর বাংলাদেশ কাস্টমস সেটিকে ই-লক করবে। ওই পণ্য আখাউড়া বা অন্য কোনো বন্দরে গেলে সেই লক খুলে দেওয়া হবে। এনবিআর সূত্র বলেছে, ট্রানজিটের পণ্য স্ক্যান করা হবে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় থাকবে না।

জানা যায়, বাংলাদেশ ও ভারত জেনারেল অ্যাগ্রিমেন্ট অন ট্রারিফ অ্যান্ড ট্রেড বা ‘গ্যাট’ স্বাক্ষরকারী দেশ। নিয়ম অনুযায়ী, গ্যাট স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ট্রানজিট ও ট্রানশিপমেন্ট পণ্যের ওপর কাস্টমস ডিউটি প্রযোজ্য নয়। তবে বিভিন্ন ধরনের ফি ও চার্জ প্রযোজ্য। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলেছে, মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান নিজ নিজ ট্যারিফ শিডিউল অনুযায়ী ট্রানজিটের ফি আদায় করা হবে। এ ছাড়া ট্রানজিটের পণ্য আখাউড়া বা অন্য কোনো বন্দর যেখানে যাক না কেন, বাংলাদেশের ট্রাক-ট্রেইলার বা নৌযান ব্যবহার করবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম বলেন, পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের পণ্য সড়ক ও নদীপথে যাবে। আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল (আইসিটি) তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ প্রকল্পের কনসালট্যান্ট নিয়োগের জন্য ভারতের কাছে সুপারিশের জন্য পাঠানো হয়েছে। তারা অনুমোদন দেওয়ার পর নিয়োগ দেওয়া হবে। তার পরই আইসিটির কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, ভারতীয় ঋণের (এলওসি) সহায়তা অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মনোজ কান্তি বড়াল বলেন, জানুয়ারিতে পরীক্ষামূলক ট্রানজিট শুরু হওয়ার পর জানা যাবে কোনো সমস্যা আছে কিনা। এ ছাড়া কোন রুটে, কোন পয়েন্টে কত চার্জ পড়বে তা জানা যাবে।

জানা যায়, বর্তমানে নৌ-ট্রানজিটের আওতায় মাশুল বা ফি পায় বাংলাদেশ টনপ্রতি ১৯২ টাকা। এর বাইরে টনপ্রতি ৫০ টাকা এসকর্ট বা নিরাপত্তা ফি এবং বন্দরে ল্যান্ডিং শিপিং বাবদ ৩৪ টাকা মাশুল ধার্য আছে। সব মিলিয়ে প্রতি টনে ২৭৭ টাকা মাশুল। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ট্রানজিটের বিপরীতে শুল্ক্ক আদায় করার সুযোগ নেই। তবে পণ্য পরিবহনে অবকাঠামো ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি সেবার জন্য মাশুল আদায় করা যাবে।

পেছনের কথা :২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। সফর শেষে দুই দেশের যৌথ ইশতেহারে চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক (নৌ, সড়ক ও রেল) ট্রানজিট চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক হয় (এমওইউ)। এক বছর পর ২০১৬ সালের জুনে নদীপথে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রানজিট চালু হয় নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায়। গত অক্টোবরের প্রথম দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যে সড়ক, রেল ও নদীপথে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে ট্রানজিট চুক্তি কার্যকরের বিষয়ে সই হয়। একই সঙ্গে এটি কীভাবে পরিচালিত হবে সে বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরসের বিষয়ে (এসওপি) চুক্তি হয়। দুই দেশের সরকারপ্রধানের সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সর্বশেষ ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় নৌ সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়। এখন সেই সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে যাচ্ছে উভয় দেশ।

আশুগঞ্জ বন্দরকে শক্তিশালী করতে হবে :ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ভারতের সঙ্গে ট্রানজিটের সুফল পেতে হলে নৌপথে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। কারণ নদীপথে পণ্য পরিবহন সস্তা। এ জন্য আশুগঞ্জ বন্দরকে আধুনিক করতে হবে। সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীপথে কলকাতা বন্দর থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত দূরত্ব ৭৫০ কিলোমিটার। এ পথ অতিক্রম করে আশুগঞ্জ বন্দর এসে পৌঁছাতে কনটেইনারভর্তি একটি জাহাজের সময় লাগে সাত থেকে দশ দিন। প্রতিটন পণ্যের খরচ পড়ে ১১০০ রুপি। অন্যদিকে, কলকাতা শহর থেকে ভারতের নিজ দেশের সড়কপথে ঘুরে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঙ্গরাজ্যে যেতে সময় লাগে ৩০ দিন। ট্রাকে করে নিলে প্রতি টনে খরচ পড়ে সাড়ে চার হাজার রুপি। গালফ ওরিয়েন্ট সি ওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস কে মাহফুজ হামিদ সমকালকে বলেন, নৌ-ট্রানজিটের আওতায় বাণিজ্য বৃদ্ধির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, এত বছরে আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার টার্মিনাল হয়নি। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। জানা যায়, নৌ-ট্রানজিট চালু হওয়ার পর গত তিন বছরে মাত্র ১৩টি চালান ভারতের কলকাতা থেকে আশুগঞ্জ হয়ে ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় গেছে। এই সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে বাংলাদেশ মাশুল পেয়েছে মাত্র ২৮ লাখ টাকা। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নৌ-ট্রানজিট চালুর সময় বলা হয়েছিল, আশুগঞ্জ বন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত করা হবে। আখাউড়া থেকে ত্রিপুরা সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কথা থাকলেও এর কাজ শুরু হয়নি। বন্দরের অবকাঠামো এখনও দুর্বল। এসব কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনে খুব একটা আগ্রহী নন।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews