*সর্বত্র নিন্দার ঝড় * দোষীদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে
হোসাইন মামুন : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আবদুল হাই কানু নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্চিত করে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে এলাকা ছাড়া করেছে স্থানীয় কিছু বখাটে যুবক। এ ঘটনার একটি ভিডিও রোববার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। লাঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা উপজেলার বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। ১ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে সর্বত্র নিন্দার জড় উঠে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে রাতেই থানা পুলিশ অভিযানে নেমে পড়ে। আবদুল হাই কানুর ঘটনার সাথে স্থানীয় জামায়াত সমর্থকরা জড়িত রয়েছে বলে একটি মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করতে থাকে। তবে বিষয়টি সরাসরি প্রত্যাখান করেছে উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। তারাও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। আবদুল হাই কানু কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সদস্য।
ভিডিওতে দেখা যায়, রোববার দুপুরে কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ঔই গ্রামের প্রবাসী আবুল হাশেমের নেতৃত্বে অহিদ, রাসেল ও পলাশসহ ১০/১২ জন ব্যক্তি মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুর গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দেয়। ভিডিওতে ওই ব্যক্তিরা বলতে শুনা যায় তুমি বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করেছো, নির্যাতন, জুলুম ও মিথ্যা মামলা হয়রানী করে আমাদের বাড়ি ছাড়া করেছো। এ সময়ে আবদুল হাই কানু দু’হাত তুলে তাদের কাছে মাফ চায়। কিন্তু বিক্ষুদ্ধ ব্যক্তিরা বলেন, তুমি এলাকাতে থাকতে পারবানা। তুমি কুমিল্লা ছেড়ে চলে যাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ ঘটনার পরে আবদুল হাই কানু এলাকা ছেড়ে পাশ^বর্তী ফেনি শহরে তার ছেলে গোলাম মোস্তফা বিপ্লবের বাসায় উঠেন। আবদুল হাই কানু বলেন, তিনি এখন ফেনিতে তার ছেলের বাসায় অবস্থান করছেন। মারধর করায় তিনি সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, রোববার দুপুরে বাড়ির পাশের পাতড্ডা বাজারে একটি ফার্মেসী দোকানে ঔষধ কিনতে যান, এ সময়ে স্থানীয় আবুল হাশেমের নেতৃত্বে ১০/১২ জন লোক তাকে জোরপূর্বক ধরে স্কুল মাঠে নিয়ে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে দ্রæত এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন চৌদ্দগ্রামের তৎকালীন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মুজিবুল হকের বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তার সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে বিগত ১০ বছরের অধিক সময়ে আমি আমার গ্রামের বাড়িতে আসতে পারতাম না এবং একাধিকবার আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আমার বাড়ি-ঘর ভাংচুর ও লুটপাট করে। আমাকে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামী করে দীর্ঘদিন জেলও খেটেছি।
আবদুল হাই কানুর স্ত্রী রেহানা বেগম বলেন, রোববারের ঘটনায় আমার স্বামী আত্ম-সম্মানে আঘাত পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। তিনি অসুস্থ্য হয়ে ফেনিতে ছেলের বাসায় চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সহকারী কমান্ডার বাবু প্রমোদ রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আবদুল হাই কানুর ঘটনাটি অত্যান্ত নিন্দনীয়। জুতার মালা পড়িয়ে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করা হয়েছে। এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হবে। তাদের গ্রেফতারের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের নিন্দা ও প্রতিবাদ
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে অপমান ও অপদস্ত করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতে ইসলামী। সোমবার বিকালে উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মোঃ বেলাল হোসাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবাদলিপিতে তিনি উল্লেখ করেন, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করে গলায় জুতার মালা পড়ানোর ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল উপজেলা জামায়াত ইসলামকে জড়িয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হচ্ছে। চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াত ইসলামী গণমাধ্যম কর্মীদেরকে জানাচ্ছে যে, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জামায়াত কোন অবস্থাতেই জড়িত নয়। যাহারা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত অথবা জুতার মালা পড়িয়েছে তারা জামায়াতে ইসলামী ও তার সহযোগী সংগঠনের কেউ নয়। যাহারা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করেছে প্রশাসনের প্রতি আমাদের আহ্বান তদন্তপূর্বক দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। জামায়াতে ইসলাম কোন অন্যায়কে সমর্থন করে না। বরাবরেই জামায়াতে ইসলামী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শাখার নেতৃৃবৃন্দরা আব্দুল হাই কানুর বিষয়টি জানার পরে স্থানীয় ভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, যে সকল ব্যক্তিদ্বয় আব্দুল হাই কানুকে লাঞ্ছিত করেছেন তাহাদেরকে বিগত আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন আবদুল হাই কানু বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছে। এছাড়াও আব্দুল হাই কানুর নিজ দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে বিরোধ রয়েছে। এমন ধরণের কর্মকান্ডটিওবাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সমর্থন করে না। এছাড়াও আব্দুল হাই কানুর বিরুদ্ধে যুবলীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ রানা হত্যার ঘটনায় ২০১৬ সালে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা একাধিক মামলা দায়ের করে। যা বর্তমানে বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ৬ জুন চৌদ্দগ্রামে আওয়ামীলীগের দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মুজিবুল হকের স্বশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী মিয়া বাজার এলাকা থেকে বীর প্রতিক বাহার রেজাকে অপহরণ করে সীমান্তবর্তী এলাকায় নিয়ে নির্মম ভাবে নির্যাতন করে। নির্যাতন করে মৃত ভেবে ফেলে রেখে আসে। যাহা সে সময়ে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.টি.এম আক্তার উজ জামান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে অপমান করার বিষয়টি অত্যান্ত নিন্দনীয় ও দুঃখজনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি দেখার পর থেকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে রোববার রাত থেকে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
সম্পাদক : জীবন খান, উপদেষ্টা : ডি আই জি আনোয়ার (অব:) , মোহাম্মদ আমিমুল এহসান খান, আইন উপদেষ্টা : ফেরদৌস কবির খান, সহকারি সম্পাদক: মোঃ জিল্লুর রহমান খান, মোঃ ইমরান হোসেন নির্বাহী সম্পাদক : মতিউর রহমান ( জনি), সিনিয়র সহ-সম্পাদক: সজীব হোসেন (জয়), মফস্বল সম্পাদক: এহতেশামুল হক (মাশুক)।
চৌধুরী মল (৫ম তলা), ৪৩ শহীদ নজরুল ইসলাম সড়ক, হাটখোলা রোড, টিকাটুলী, ঢাকা-১২০৩। মোবাইল : ০১৭১৪-০২২৮৭৭, E-mail : jibonnews24@gmail.com
জীবন নিউজ ২৪ ডট কম