1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
রবিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৪ অপরাহ্ন

দৃষ্টিনন্দন পেখমে মিলছে বিনোদন

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : বৃহস্পতিবার, ৩১ মে, ২০১৮

ময়ূর তার ঝলমল পাখা ছড়িয়ে চমৎকার নৃত্য প্রদর্শনের জন্য খ্যাত। তার এই চোখ জুড়ানো প্রদর্শনীর উদ্দেশ্যে, প্রজননের সময় অন্য ময়ূরীদের আকৃষ্ট করা। বর্ষাকাল মূলত ময়ূরের প্রজননকাল।

বর্ষাকালের আগমনী বার্তার সাথে সাথেই গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ময়ূর বেষ্টনী যেন নজর কাটছে পার্কে আসা দর্শনার্থীদের। এখন ময়ূর তার পূর্ণ পেখম মেলে যেমন ময়ূরীকে যেমন আকর্ষণে ব্যস্ত, তেমনি তার পেখম মেলা দৃশ্য পার্কে আসা দর্শনাথীদের বিনোদনের একটি অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ময়ূরের চমৎকার প্রদর্শনের প্রতি ময়ুরীর বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে, আকর্ষণীয় নৃত্য প্রদর্শণকারী ময়ূরকে ময়ূরী সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়।

সাফারি পার্কের বণ্যপ্রাণি পরিদর্শক আনিছুর রহমান জানান, ময়ূরের প্রজননের সময় বর্ষাকাল। আর বর্ষাকালে ময়ূরীর সাথে মিলনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণে পেখম মেলে ময়ূর। যে ময়ূর পেখম তুলে যত সুন্দর নাচ প্রদর্শন করতে পারবে মিলনের জন্য সে তত ময়ূরীর প্রতি আকর্ষিত হবে। ময়ূর প্রথমে তার লম্বা পেখম সামনের দিকে বাঁকা করে পাখার মতো ছড়ায়। এরপর সে তার নজরকাড়া নাচ শুরু করে। সে যখন তার শরীর ঝাঁকায় তখন রঙিন বর্ণের পালকগুলো এর শরীরের দু’পাশে ঝুলে থাকে ও এই ঝাঁকানির ফলে খাড়া হয়ে থাকা পালকগুলো মর্মরধ্বনি করে। এছাড়া সে জোরে চিৎকার করে। এটা তেমন সুরেলা নয়, কিন্তু এটা অন্তত ময়ূরীকে জানায় যে, সে তার প্রতি মিলনে আগ্রহী। ময়ূররা একসঙ্গে পাঁচটি পর্যন্ত ময়ূরী সঙ্গিনী হিসেবে রাখে এবং এক বছরে এদের প্রায় ২৫টির মতো ডিম দেয়। পার্কে ময়ূরের পেখম মেলার দৃশ্য এখন পর্যটকদের অন্যতম প্রধান আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন দর্শনার্থীরাও সংরক্ষিত ময়ূর বেষ্টনিতে ভিড় করছেন। রশিক ময়ূরগুলো সে সময় দর্শনার্থীদের আনন্দ বাড়তে দৃষ্টিনন্দন পেখম তুলছে।

ময়ূর ফ্যাজিয়ানিডি প্রজাতির সুন্দর একটি প্রাণি। এশিয়ান অঞ্চলে সাধারণত দুই ধরনের ময়ূরের দেখা পাওয়া যায়। এদের রঙ হয় নীল ও সবুজ, মাঝে মাঝে সাদা রঙ এর ময়ূরের দেখাও মেলে। এরা সাধারণত বনের ভেতর মাটিতে বাসা বাঁধে। এরা সাধারণত চারা গাছের অংশ, কীটপতঙ্গ, বীজের খোসা, ফুলের পাপড়ি এবং ছোট ছোট সন্ধিপদ প্রাণি খায়। এরা ডিম পাড়ে ও ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এদের বাচ্চাগুলো মুরগির বাচ্চার মতই মায়ের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে খাবার খায়। বাচ্চাগুলো বিপদ দেখলেই মায়ের ডানার নিচে এসে লুকায়। ময়ূরের ছোট বাচ্চারা মুরগির বাচ্চার মতই বেড়ে উঠে। আকারের দিক দিয়ে ময়ূর ৭ ফুট লম্বা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের পেখমের দৈর্ঘ্য তিন ফুট পর্যন্ত হয়। এদের পেখমে রয়েছে নীল, সবুজ, সোনালীসহ বাহারি রঙের সমাহার। অনেকেই ময়ূরের পেখমের পালক ঘরের সৌন্দর্য হিসেবে ব্যবহার করে।

ময়ূর কিন্তু তার এই সুন্দর পেখম নিয়ে জন্মলাভ করে না। ৩ বছর বয়স পর্যন্ত পুরুষ ময়ূরের লেজ জন্মে না। এমনকি অনেক দিন পর্যন্ত এদের স্ত্রী ও পুরুষ হিসেবে আলাদাভাবে বোঝা যায় না। ময়ূর এবং ময়ূরী দেখতে একদম একই রকমের হয়ে থাকে। ৬ মাস বয়স থেকে ময়ূর রঙ বদলাতে শুরু করে। ময়ূর প্রতি বছর তাদের প্রজননের পর পেখম বদলায়। সে সময় পাখাগুলো দেহ থেকে ঝরে পড়ে। ময়ূর তার বন্যজীবনে গড়ে ২০ বছর বাঁচে। বিশাল পেখম থাকা সত্ত্বেও ময়ূর উড়তেও পারে। মধ্যযুগে ময়ূর ছিল আভিজাত্যপূর্ণ খাবার। এদের রোস্ট করে আবার পালক বসিয়ে সাজানো হতো এবং খাবারের টেবিলে পরিবেশন করা হতো। পাখিটি দেখতে যত সুন্দরই হোক না কেন, স্বাদে কিন্তু জঘন্য। সে সময় ফিজিয়ানরা খাবারটির সমালোচনা করেন কারণ ময়ূরের মাংস শক্ত এবং মোটা, হজমেও সমস্যা তৈরি করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কমকর্তা মোতালেব হোসেন জানান, পার্কের সূচনালগ্নে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত থেকে ময়ূর আনা হয়। বর্তমানে এর সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গিয়েছে। কিছু ময়ূরকে পার্কের আবদ্ধ পরিবেশ থেকে উন্মক্ত করে দেয়া হয়েছে। অত্যন্ত সচেতনতার সঙ্গে এদের পরিচর্যা করা হয়। প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি এদের বিশেষ যত্ন নেয়ায় দ্রুত বংশ বৃদ্ধি ঘটছে ময়ূরের। বর্ষাকালে পার্কের ময়ূর বেষ্টনীতে দর্শনার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম লিমিটেড
Theme Customized BY LatestNews