কুমিল্লায় নাশকতার দুই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আপিল বিভাগে স্থগিতের আদেশটিকে নজিরবিহীন বলেছেন তার আইনজীবী জয়নুল আবেদিন।
২৮ মে দুই মামলায় বিএনপি প্রধানকে জামিন দিয়ে হাইকোর্টের আদেশ আপিল বিভাগ ২৪ জুন পর্যন্ত স্থগিত করার পর এ কথা বলেন তার আইনজীবী।
আদালত থেকে বের হয়ে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল বলেন, ‘অতীতে এমনটি আমরা দেখেনি, হাইকোর্ট মেরিটে বেইল কনসিডার করলেও সুপ্রিম কোর্ট এটা এন্টারটেইন করেছে।’
এর আগে কারাদণ্ড হওয়া জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাতেও হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত হয়েছিল আপিল বিভাগে। পরে রাষ্ট্রপক্ষ এবং দুদকের আপিল গ্রহণ না করে বিএনপি নেত্রীকে জামিনের নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
আর এই নির্দেশ আসার আগ অবধি আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশকেও নজিরবিহীন বলেছিলেন খালেদার আইনজীবীরা। তাদের দাবি, হাইকোর্ট কাউকে জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করে না।
জয়নুল বলেন, ‘আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা আছে। আমরা আদালতে বলেছিলাম অতীতে এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। মাননীয় অ্যাটর্নি জেনারেল ডিসক্রিমিনারি ওয়েতে খালেদা জিয়ার আপিলটি নিয়ে এসেছেন।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেলেও আরও অন্তত ছয়টি মামলায় তাকে জামিন পেতে হবে। এর মধ্যে তিনটি কুমিল্লায়, দুটি ঢাকায় এবং নড়াইল আদালতে চলেছে একটি মামলা।
২০১৬ এবং ২০১৭ সালের বিভিন্ন সময় এসব মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু পুলিশ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করেনি আর বিএনপিও সে সময় এগুলোকে পাত্তা দেয়নি।
কিন্তু গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর এই পরোয়ানাগুলোই মাথাব্যাথার কারণ হয়েছে বিএনপি। এরপর থেকে দলের আইনজীবীরা আদালতে ছুটোছুটি করছেন। আর স্ব স্ব আদালতে জামিন আবেদন সময়সাপেক্ষ বলে হাইকোর্টের বিভিন্ন বেঞ্চে আবেদন করা হয়েছে।
গত ২৮ জুন খালেদা জিয়া যে দুটি মামলায় জামিন পান, সেগুলো ২০১৫ সালে বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় করা হয়েছিল। এর একটি কুমিল্লায় বাসে পেট্রল বোমা হামলা চালিয়ে আট জনকে হত্যা এবং অপরটি পুলিশ ভ্যানে হামলার ঘটনায় করা হয়।
আইনজীবী জয়নুলের দাবি, এসব মামলা চলতেই পারে না। তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওয়ারেন্ট হয়েছে সেহেতু আমরা আবেদন করেছি। আদালত আমাদের বেইল দিয়েছে। আমরা সেই বেইলটা বহাল রাখার জন্য বলেছি।’
২০১৫ সালে বিএনপির ডাকে লাগাতার অবরোধ এবং হরতাল চলার সময় বিএনপি নেত্রী তার গুলশান অফিসে অবস্থান করছিলেন।
জয়নুল বলেন, ‘রাজনৈতিক মামলায় যেখানে খালেদা জিয়া বন্দী ছিলেন গুলশান অফিসে। তাকে সম্পৃক্ত করে আসামি করা হয়েছে।’
‘বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে রাজনৈতিকভাবে দীর্ঘ দিন তাকে জেলে রাখতে চায়। যেহেতু ইতোমধ্যে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা হবে এটা সরকারও জানে। ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।’
‘আমরা চাচ্ছি ন্যায় নীতির মাধ্যমে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে বের করে আনব। আর সরকার চাচ্ছে, যেকোনো উপায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে রাখতে হবে, কারাবন্দী রাখতে হবে।’
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার বিষয়ে ইঙ্গিত করে জয়নুল বলেন, ‘যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে সে মামলায় আমরা জামিন পেয়েছি।’