খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরাজয় থেকে শিক্ষা নিতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বলেছেন, সামনে আরও বড় হার অপেক্ষা করছে দলটির জন্য।
বিএনপি জনগণকে পড়তে ভুল করেছে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। বলেন, ‘তারা (বিএনপি) সবসময় মনে করতো জনগণ তাদের ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত ও মুখিয়ে আছে।’
‘এখানেই নয় শুধু সামনে তাদের জন্য আরও বড় বড় হার অপেক্ষা করছে। জনবিচ্ছিন্ন হলে রাজনীতিতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে সেটি সামনের দিনগুলোতে আরও ভালোভাবে বুঝবে।’
মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
কাদের যখন বক্তব্য রাখলিছেন তখন খুলনায় দলের প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। পরে তিনি বেসরকারিভাবে প্রায় ৬৮ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারান বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে।
খুলনা শহরটি বরাবর আওয়ামী লীগের দুর্বল এলাকার একটি। স্বাধীনতাবিরোধী মুসলিম লীগ অধ্যুষিত এই শহরে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বেশিরভাগ নির্বাচনেই জিতেছেন বিএনপির প্রার্থীরা। ২০০৮ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খালেক সেখানে আওয়ামী লীগের সমর্থনে জিতেন। পাঁচ বছরে তিনি দৃষ্টিগ্রাহ্য উন্নয়ন করলেও ২০১৩ সালে ৬১ হাজার ভোটে হেরেছিলেন বিএনপির মনিরুজ্জামান মনির কাছে।
কাদের বলেন, ‘খুলনার অন্য অঞ্চলে আওয়ামী লীগের বিজয়ের রেকর্ড থাকলেও শহরাঞ্চলে তেমন ছিল না। এবার দেখুন ভোটের অবস্থা। এটা হয়েছে জননেত্রীর শেখ হাসিনার উন্নয়ন ও অর্জনের কারণে।’
বিএনপিকে কেন মানুষ ভোট দেবে, সে প্রশ্নও রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা। বলেন, ‘মানুষ তো বোকা নয়। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে উন্নয়নের কোন দৃষ্টান্ত রয়েছে যে তার জন্য ভোট চাইতে পারে?’
“আজকের এ দিনে মানুষ বিএনপির ‘লিপ সার্ভিস’কে ভোট দেবে? মানুষ কি তাদের ফ্রিস্টাইল বক্তব্য দেখে ভোট দেবে নাকি কাজ দেখে? খুলনা থেকে তাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।”
ভোটে কারচুপির বিষয়ে বিএনিপর অভিযোগ নিয়ে কাদের বলেন, ‘তারা সব সময় রেজাল্ট (ফল) পর্যন্ত কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ করে। এটা তাদের পুরানো ভাঙা রেকর্ড। হেরে গিয়ে প্রলাপ বকা ছাড়া তাদের আর কী করার আছে?’
‘কোন নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষক আজকের সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাই। নির্বাচন কমিশনও বলেছে বিএনপির অভিযোগ সঠিক নয়।’
‘বিএনপি ১০০ ভোট কেন্দ্র নিয়ে অহেতুক অভিযোগ তুলেছে। যার জবাব নির্বাচন কমিশন দিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যেখানে বলেছে তারা হ্যাপি সেখানে তো আমাদের কিছু বলার নাই।’
‘বিএনপি নেতাদের বসে বসে মিথ্যাচার করা ছাড়া কোন প্রোঅ্যাক্টিভ কাজ নেই। তারা দেশে কোন প্রোঅ্যাক্টিব মুভমেন্ট গড়ে তুলতে পারে নাই। এখন তাদের মিথ্যাচারই সম্বল। আর মাঝে মাঝে কূটনৈতিকদের কাছে ধর্ণা দিয়ে সরকারের নামে নালিশ করা। এটাই তাদের কাজ।’
আওয়ামী লীগ জনগণের চোখে ধূলো দিয়ে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরু ইসলাম আলমগীরের প্রশ্নেরও জবাব দেন কাদের।
বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) চোখে কি ধূলো পড়েছে? আপনারা কি মিড়িয়ার বাহিরে? আপনাদের প্রতিনিধিদের কি খুলনায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে?’
নির্বাচন কমিশন সরকার দলের প্রার্থীকে জেতাতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে বিএনপির অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, ‘কুমিল্লায় তো তারা এ কথা বলে নাই। আমরা তো তখন বলি নাই ইসি বিএনপির দিকে একচোখা নীতি নিয়ে অবস্থান নিয়েছে।’
আইনজীবীদের বার কাউন্সিলে ১৪ টি পদের মধ্যে ১২টিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর জয়ের কথাও উল্লেখ করেন কাদের। জানান, আজকে খুলনা মহানগর ছাড়াও ১২টি ইউনিয়নে ভোটে সাতটিতে আওয়ামী লীগ, তিনটিতে দলের বিদ্রোহী ও দুইটিতে বিএনপির প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে জিতেছেন। এর বাইরে একটি উপজেলা ও পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
কাদের বলেন, ‘এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনের শতকরা ৯০ ভাগে আমরা বিজয়ী হয়েছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এইচটি ইমাম, রাশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবদুস সোবহান গোলাপ, দেলোয়ার হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, আব্দুস সবুর, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ।