রাস্তার কারণে ঈদ যাত্রায় যানজট হবে না, আবার নিশ্চিত করেছেন ওবায়দুল কাদের। তবে ফিটনেসহীন গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়ে যায় কি না, এ নিয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তায় তিনি।
সড়ক মনে করেন পুলিশ আর সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিআরটিএ এই বিপদটা অনুধাবন করতে পারছে না। তারা এ নিয়ে ঘুমিয়ে। তাদেরকে ‘নাক ডেকে ঘুমিয়ে’ না থেকে অভিযানে নামার নির্দেশও দেন।
শুক্রবার রাজধানীর মাতুয়াইলে গাড়ি মেরামত কারখানায় অভিযান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন কাদের।
রোজার অর্ধেক চলে গেছে। আগামী ১৬ জুন ঈদ ধরে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। বাসের টিকিট বিক্রিও চলছে। এর মধ্যেই আবার বাড়ি ফেরার চাপ সামাল দিতে মহাসড়কগুলো প্রস্তুতি কি না, এ নিয়ে তৈরি হয়েছে দুশ্চিন্তা।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকায় ময়মনসিংহের টঙ্গী থেকে জয়দেবপুর অংশ এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের খবর আসছে গণমাধ্যমে। যাত্রী চাপ বাড়লে কী হবে, সেটাও আছে ভাবনায়।
তবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনাদেরকে বলেছি যেটা হলো রাস্তার জন্য এবার যানজট হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের কোথাও রাস্তার জন্য যানজট হবে না, কিন্তু এই ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো যানজটের সৃষ্টি করতে পারে সেটাই হলো কারণ।’
‘রাস্তায় যদি গাড়ি বিকল হয়ে যায় রেকার এসে সরাতে সরাতে দীর্ঘ যানজট হয়ে যায়।’
দুদিন আগে গাবতলীতে গাড়ি মেরামতের একাধিক কারখানা ঘুরে এসেছেন কাদের। আজ গেলেন মাতুয়াইল। এসব কারাখানায় যে দৃশ্য তিনি দেখে এসেছেন তাতে তার উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
মন্ত্রী মনে করছেন, যেসব গাড়ি ফিটনেস নেই, সেগুলো ঈদে নামাতে রঙ করা হচ্ছে। কিন্তু এগুলো রাস্তায় বিকল হয়ে যেতে পারে।
‘মিরপুরে যা দেখলাম দুটি কারখানা, এখানে তো একটি দেখলাম। আরও আছে আমি খবর নিয়েছি সেগুলোতেও অভিযান চলবে।’
‘নাকে তেল নিয়ে ঘুমাচ্ছে পুলিশ, বিআরটিএ’
ফিসনেসহীন গাড়ির বিরুদ্ধে পুলিশ আর বিআরটিএর ভূমিকায় অসন্তোষ জানান কাদের। বলেন, ‘এগুলোর দায়িত্ব ছিল বিআরটিএ এর। তারা এ ব্যপারে কেন নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়েছে এই বিপদকে… এটা তো একটা বিপজ্জনক একটা বিষয়।’
‘বিপজ্জনক একটা প্রবণতা, যেটা রাস্তায় গাড়ি আটকিয়ে রাখে রাস্তায় দুর্ঘটনা সৃষ্টি করে। ঈদের সময় কোটি মানুষ ঢাকা থেকে ঢাকার বাইরে চলে যাবে। এ সময় ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো রঙচঙ করিয়ে… লক্কর-ঝক্কর গাড়ি গুলো রাস্তায় নামানো হয়।’
‘এ ধরনের অবৈধ কাজ কারবার আজকে পুলিশের নাকের ডগায় দিয়ে হচ্ছে। আমি পুলিশের যারা এখানে আছেন তারাও এগুলো নিয়ে ইনফর্ম করেননি। বিআরটিএ পুলিশ উভয়ের এ নিয়ে দায় দায়িত্ব আছে।’
দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে গাড়ি মেরামতের কারখানায় সিলগালা করার নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো রাস্তায় যানজট এবং দুর্ঘটনা দুটিরই কারণ হয়ে যায়। কাজেই এর বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।’
‘আমি বিআরটিএকে বলব, এখন বিআরটিএর প্রধান কাজ হলো ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে। এখানে অপরাধ অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে রাস্তায় না আসে এর জন্য উৎসমুখ বন্ধ করতে হবে।’
‘যারা এসবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।…এখানকার গাড়িগুলোর অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট।’
‘আমি পুলিশ এবং বিআরটিএকে বলব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। যেসব কারখানায় এইসব অপকর্ম হয়, তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নিতে হবে। জরিমানা শাস্তি, জেল জুলুম এমনকি সিলগালাও করতে হবে।’
ঈদের আগে খোঁড়াখুঁড়ি নয়
ঈদের আগে রাজধানীতে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধেরও আহ্বান জানান কাদের। বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ওয়াসা-ডেসাসহ সকলকে আমি অনুরোধ করছি, চেয়ারম্যন ডিটিসিএ কোন খোঁড়াখুঁড়ি যেন ঈদের আগে এবং পরের কয়েকদিন না হয়।’
‘এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মানুষ রাজধানীতে ভীষণ কষ্টে আছে। কাজেই জনজীবনকে আর দুর্বসহ না করে আপাতত খোঁড়াখুঁড়ি ডেসা হোক, ওয়াসা হোক, টেলিফোনের হোক এটা বন্ধ করতে হবে।’
‘ডেমরা রোড মেরামত করুন’
ডেমরা রোডের করুণ অবস্থা দেখে এটি সংস্কারেরও অনুরোধ জানান সড়ক মন্ত্রী। এই সড়কটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। মন্ত্রী বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশন, বিটিসিএলএর চেয়ারম্যনকে অনুরোধ করছি যে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে এই রাস্তাটি অনতিবিলম্বে মেরামত করা হোক, রিপেয়ার করা হোক।’