বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত হননি বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার নেত্রীর শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করে বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রিত’ আদালত ‘অন্যায়ভাবে’ এই শাস্তি দিয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে এক ইফতার পূর্ব বক্তব্যে এ কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।
একই দিন বিকালে গণভবনে করা সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দাবি কেন তার কাছে করা হচ্ছে সেটা তার বোধগম্য নয়। এতিমের টাকা আত্মসাতের দায়ে আদালত তাকে সাজা দিয়েছে।
খালেদা দিয়াকে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, তার কাছে বলে লাভ নেই। তার সাজা দেয়ারও এখতিয়ার নেই, কারাগার থেকে বের করারও ক্ষমতা নেই। এটা আদালতের বিষয়।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রীকে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আপনার বাধ্যগত যে আদালত, সে আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় শাস্তি দেয় নাই।’
‘আপনাদের নির্দেশে, সরকারের নির্দেশে শাস্তি দিয়েছে। এবং বারবার জামিন পাওয়ার পরও সরকারের নির্দেশে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করছে না, মুক্ত হতে দিচ্ছে না।’
১৯৯১ সালে বিদেশ থেকে এতিমখানার নামে আসা দুই কোটি ১০ লাখের বেশি টাকা ট্রাস্টের নামে স্থানান্তর করে তা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে খালেদা জিয়ার। একই মামলায় তার বড় ছেলে তারেক রহমানের কারাদণ্ড হয়েছে ১০ বছরের।
তবে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে তাতে দুর্নীতির কথা বলা নেই দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় আজকে কারাগারে। আমি তাকে স্মরণ করে দিতে চাই আপনি দয়া করে এই যে একটি নিয়ন্ত্রিত আদালতের রায় আপনি পড়ুন।’
‘মামলা হয়েছে দুর্নীতি দমন আইনে। আর দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে দণ্ডবিধিতে। তিনি (খালেদা জিয়া) নাকি ওয়াদার বরখেলাপ করেছেন।’
‘তাই বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট, আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) মনগড়া কথা। আপনার বাধ্যগত যে আদালত, সে আদালত বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় শাস্তি দেয় নাই।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বৈরাচারিনী হিসেবে ‘খ্যাতি’ অর্জন করেছেন দাবি করে মোশাররফ বলেন, ‘এই সরকার মনে করেছিল দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পরে বিএনপি ও তাদের সমর্থকরা নিশ্চুপ বা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু দেশনেত্রীকে কারাগারে নেওয়ার পরে তার ভাবমূর্তি আগের থেকে উন্নত হয়েছে।’
‘তিনি (খালেদা জিয়া) দেশনেত্রী থেকে বিশ্বনেত্রী হয়েছেন। তিনি গণতন্ত্রের মাতা হয়েছেন, দেশ মাতার উপাধি লাভ করেছেন।’
‘অন্য দিকে যিনি বানোয়াট কথা বলছেন, শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ভাবে তিনি স্বৈরাচারিনী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।’
সরকার আদালতকে ‘সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে’ অভিযোগ করে আদালতের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না বলেও মনে করেন মোশাররফ। বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে।’
‘নেত্রীর মুক্তি এদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক সূতাতে গাঁথা।’
আয়োজক সংগঠন জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই শিকদার, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।