ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের নবীনগর থেকে ধামরাইয়ের বাথুলী পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ঢাকা ও আরিচামুখী উভয় সড়কে যানজটের কারণে অত্যন্ত ধীরগতিতে চলছে যানবাহনগুলো। গত ৪/৫ দিন ধরেই এই যানজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
মহাসড়কটিতে যারা যাতায়াত করছেন তাদের ২০ মিনিটের পথ অতিক্রম করতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় বেশি লাগছে। যাত্রীরা ও অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আশুলিয়ার নবীনগর থেকে ধামরাইর বাথুলী পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও এই যানজট সামাল দিতে পুলিশেরও কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। যাত্রী সাধারণ শিকার হচ্ছেন চরম ভোগান্তির। আগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি যানজট শুরু হয়েছে। এই যানজট গত ৪/৫ দিন ধরে সৃষ্টি হয়েছে বলে তারা অভিযোগ করেন।
যানজটের কারণ হিসেবে ধামরাই-গুলিস্তান রুটের একটি বাসের চালক মকবুল হোসেন অভিযোগ করেন, মহাসড়কে অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে এই অংশটুকুতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কটি গাবতলী থেকে নবীনগর পর্যন্ত বেশ প্রশস্ত ও চার লেনের। কিন্তু এরপর আরিচা পর্যন্ত রাস্তার প্রশস্ততা কম।
লোকাল বাসসহ দূরপাল্লার বাসগুলো মহাসড়কে অনেকক্ষণ পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করায়। মহানসড়কের দুই পাশের মাটি বৃষ্টির কারণে অনেক সরে গেছে। এ ছাড়া রং সাইড দিয়ে রিকশা-ট্যাক্সি চলাচলের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। সংযোগ সড়ক থেকে মহাসড়কে আসা যানবাহনের সংখ্যাও ইদানিং অনেক বেড়ে গেছে। ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতাও একটি বড় কারণ।
ধামরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবু সাঈদ আল মামুন কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসড়কটিতে হঠাৎ যানবাহনের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ। সে হিসেবে তাদের জনবল বাড়েনি। বাড়েনি কোন সুযোগ-সুবিধা। বছরের শেষে অনেকেই ছুটি নিয়ে বেড়াতে বের হয়। এ কারণে রাস্তায় যান চলাচল বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তাছাড়া গত ৩/৪ দিন ঘন কুয়াশা থাকায় পাটুরিয়া-দৌলদিয়া ফেরি চলাচল রাতে বন্ধ হয়ে যায়। সকাল বেলায় যখন ফেরি চলাচল শুরু হয় তখন হঠাৎ গাড়ির চাপ বেড়ে যায়।
এ ছাড়া প্রায়ই সড়কের কোথাও না কোথাও গাড়ি বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করে। বিকল গাড়ি সরানোর জন্য প্রয়োজসীয় রেকারের অভাব রয়েছে। তিনি আরো বলেন, শুক্র-শনিবার এলাকার সড়কগুলোতে যানবাহনের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে। ছুটির দিনে লোকজন বেড়াতে অথবা বাড়ির উদ্দেশে বের হয়। তাই এ দুদিন কিছুটা যানজট সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া শুক্র-শনিবার ফ্যান্টাসি কিংডম, নন্দনপার্কসহ বিভিন্ন পিকনিক স্পটে আসা গাড়ির সংখ্যাও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সে কারণেও কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাভারের হাইওয়ে ট্রাফিকের দায়িত্বে নিয়োজিত একজন সার্জেন্ট কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসড়কের দুই ধারের মাটি সরে যাওয়ায় কোনো গাড়ি সাইড দিতে পারে না। ফলে কোনো একটি গাড়ি বিকল হলেই কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শত শত যানবাহন যানজটের কবলে পড়ে।
সাভার হাইওয়ে থানার ওসি জাহিদুল ইসলাম এ পরিস্থিতিকে যানজট না বলে বলেন, ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়ায় সকালে থেমে থেমে চলে যানবাহনগুলো। তবে তাঁরা এ পরিস্থিতি নিরসনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ মহাসড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে মোতায়েন করা হয়েছে। মহাসড়কের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা ও রাস্তাঘাট দখলকারী হকারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। ধামরাইয়ের কালামপুর এলাকায় সকাল সন্ধ্যায় মহাসড়কের পাশে অবস্থিত কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকবাহী যানবানগুলো চলাচলের সময় এবং কারখানাগুলো ছুটি হলে কিছুটা ধীর গতিতে যানচলাচল করে। তবে অন্য সময় যানজটের মাত্রা কমতে থাকে।
সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে আলাপ করে আরো জানা যায়, গাবতলী থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো সাভারের হেমায়েতপূরে কিছুটা যানজটে পড়ে। এরপর সাভার থানা বাসস্ট্যান্ড থেকে সাভার রেডিও কলোনি পর্যন্ত গাড়ির চাপ বেশি থাকার কারণে প্রচণ্ড যানজটে পড়ে ঘরমুখো মানুষগুলো। নবীনগর বাসস্ট্যান্ডেও থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হয়। সকাল থেকে মহসড়কের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বাসের জন্য অনেক যাত্রীকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়।