মানিক দুই দশক আগে প্রাণঘাতী নিপা ভাইরাস আবিষ্কৃত হওয়ার পর এটি বিজ্ঞানীদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এ রোগের ব্যবস্থা নিতে ওষুধ বা টিকার মতো প্রয়োজনীয় উপকরণ এখনো তৈরি করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা। ৭০ শতাংশ মৃত্যু হারের এ রোগটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রাণঘাতী রোগের তালিকায় শীর্ষ দশে রয়েছে।
নিপা ভাইরাস সম্পর্কে জানা প্রয়োজন আপনারও। ঢাকাটাইমস পাঠকদের জন্য প্রাণঘাতী নিপা ভাইরাস সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো—
নিপা ভাইরাস কী?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী নিপা বা নিভ প্রধানত বাদুর জাতীয় প্রাণীর থেকেই ছড়ায়। নিপা অপেক্ষাকৃত নতুন ভাইরাস যা অতি সহজেই বাদুর জাতীয় তৃণভোজী প্রাণীর থেকে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। শুধুমাত্র বাদুর নয়, শূকরের বর্জ থেকেও ছড়ায় এ ভাইরাস।
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ার নিপাতে প্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। সেখানে বাড়ির পোষ্য কুকুর, বেড়াল, ঘোড়া, ছাগলের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। ওই অঞ্চলে প্রতিটি বাড়িতেই শূকর প্রতিপালন হয়। গবেষণার পর দেখা যায়, ওই শূকরদের থেকেই নিপার প্রভাব ছড়িয়েছে পোষ্যদের দেহে। এরপর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
২০০৪ সালে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশেও ৩৩ জনের মৃত্যু হয়। যদিও এরপর বাংলাদেশে এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিপার প্রভাবে ৪৭৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৫২ জনের।
যেভাবে ছড়ায়
নিপা ভাইরাস বাদুড় থেকে পশুপাখি ও মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত রোগীর কফ ও থুথু থেকে অন্য ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে রোগটি। এই ভাইরাস মানুষের দেহের রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে একেবারেই শেষ করে দেয়।
সংক্রমণের লক্ষণ
ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার ৩–১৪ দিনের মধ্যে উপসর্গ শুরু হয়৷ প্রথমে জ্বর মাথাব্যথার মতো সাধারণ কষ্ট থাকে। আস্তে আস্তে রোগী আচ্ছন্ন হয়ে যায়, ভুল বকা শুরু হয়, কাউকে চিনতে পারেন না। এমনটি হলে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে। নাহলে এর ২৪–৪৮ ঘণ্ঢার মধ্যে রোগী কোমা স্টেজে চলে যেতে পারে৷ ব্রেনে প্রদাহ (এনসেফেলাইটিস) হলে অবস্থা গুরুতর হয়ে ওঠে৷ রোগের প্রথম দিকে অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়৷ শ্বাসকষ্টের মাধ্যমেই রোগ ছড়ায় বেশি৷ তবে রোগীকে আলাদা করে রাখলে এবং সতর্ক থাকলে সংক্রমণের মাত্রা কম থাকে।
রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা
সাধারণ পরীক্ষায় এ রোগ ধরা পড়ে না৷ থ্রোট সোয়াব অর্থাৎ গলা থেকে তরল নিয়ে রিয়েল টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন নামের পরীক্ষা করা হয়৷ শিরদাঁড়ার তরল, ইউরিন ও রক্ত পরীক্ষাও করতে হয়৷ সেরে ওঠার পর রোগটা নিপা ভাইরাস থেকেই হয়েছিল কিনা জানতে আইজিজি ও আইজিএম অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা হয়৷
চিকিৎসা বলতে মূলত সাপোর্টিভ কেয়ার অর্থাৎ রোগীর কষ্টের উপশম করার চেষ্টা করা হয়৷ জটিল অবস্থায় ইনটেনসিভ থেরাপি ইউনিটে ভর্তি করে চিকিৎসা করতে হয়৷ কারণ নিপা ভাইরাসের এখন পর্যন্ত কার্যকরী প্রতিষেধক তৈরি করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা।
নিপা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
খেজুরের কাচা রস পান করা উচিত নয়। এছাড়া গাছ থেকে যে-কোন ধরনের আংশিক ফল ভক্ষণ করা ঠিক না। ফলমূল খাওয়ার আগে পরিষ্কার পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে। আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলে সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধৌত করা উচিত।