টেলিভিশনে চলছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের চেলসি বনাম হাডার্সফিল্ডের খেলা। বন্ধু দর্জি গেইলশেনকে নিয়ে থিম্পুর একটি রেস্তোরাঁয় বসে খেলাটা বেশ মনোযোগ দিয়েই দেখছিলেন প্রেমা ওয়াংচুক। প্রেমা খেলছেন ভুটানের ঘরোয়া ফুটবল ক্লাব ফুয়েনতসোলিং সিটি এফসিতে, গেইলশেন রিজুজং ক্লাবে। গলায় অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেখে এগিয়ে এলেন দুজনই। বাংলাদেশি সাংবাদিক শুনে মহা উৎসাহে কথা বললেন। ইংলিশ লিগের খেলা দেখা ছেড়ে প্রশংসা শুরু করলেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ মহিলা ফুটবল দলের।
চাংলিমিথাং স্টেডিয়ামে বসে দুজনই ৯ আগস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়টা দেখেছেন। মারিয়া, মণিকা, আঁখিদের খেলা দেখে রীতিমতো মুগ্ধ এই দুই ফুটবলার। প্রেমা তো মণিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ, ‘মাঝমাঠে তোমাদের ৭ নম্বর জার্সি (মণিকা) যা চমৎকার খেলেছে, এককথায় অসাধারণ। ফ্রি কিক থেকে দেওয়া ওর গোলটাও ছিল দেখার মতো।’ একটু পরই যোগ করলেন, ‘আমার তো ইচ্ছা করছে মণিকার একটা অটোগ্রাফ নিয়ে আসি। সঙ্গে একটা ছবিও।’
‘বাংলাদেশের মেয়েরা রয়েছে শহরের আরিয়া হোটেলে। যাও দেখা করে আসো’—প্রস্তাবটা দিতেই ভুটানের নিরাপত্তাবাহিনীর কথা ভেবে আর ওদিকে পা রাখতে চাইলেন না।
গেইলশেনের ভালো লেগেছে ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন ও অধিনায়ক মারিয়া মান্দার খেলা। ‘আমি ফুটবলার বলে বলছি না, এমন গোল তো ইউরোপের ফুটবলেও সব সময় হয় না। ৪০ গজ দূর থেকে কীভাবে মেয়েটা গোল দিল!’—গেইলশেনের কণ্ঠে শুধু আঁখির প্রশংসা।
শুধু এই দুই ফুটবলারই নয়, গত তিন দিনে বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলের প্রশংসার কথা শুনতে হচ্ছে শহরতলির সব জায়গাতেই। ট্যাক্সিচালক থেকে মুঠোফোন রিচার্জের দোকানি, রেস্তোরাঁর বয় থেকে রাস্তার ট্রাফিক পুলিশ সবাই যেন বাংলাদেশের মেয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ট্যাক্সিচালক কারমা দ্রাপচু বলছিলেন, ‘আমাদের যেমন রয়েছে একজন চেনচো গেইলশেন, ও পুরো ভুটানিদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। এই মেয়েরাও ঠিক তেমনি করেই বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করছে।’
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক কারমা বাংলাদেশ দলের খোঁজখবর বেশ ভালোই রাখেন, ‘এই দলটা তো গতবারও সাফের টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এবারও বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক।’ শুধু ভুটানের সাধারণ মানুষ নয়, টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া নেপালের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর জাপানের চিয়াকি তাকেদাও মুগ্ধ বাংলাদেশের মেয়েদের খেলা দেখে, ‘এই মেয়েরা অনেক প্রতিভাবান। বাংলাদেশের মেয়েরা যেন জাপানের মেয়েদের মতোই খেলল সেদিন। ৫ নম্বর জার্সি (আঁখি) যেভাবে গোলটা দিয়েছে, আমি মুগ্ধ। এই দলের ১১ নম্বর (শামসুন্নাহার জুনিয়র), ১০ নম্বর (তহুরা খাতুন), ৭ নম্বর (মণিকা চাকমা) দুর্দান্ত খেলেছে।’