মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভিয়েতনামের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের দেশগুলোর শান্তি ও স্থিতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি এবং রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমি ভিয়েতনামের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি।’
সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের সঙ্গে এক যৌথ বিবৃতিতে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারের কাছে আট হাজার ৩২ রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। এই তালিকা মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যাচাইয়ের পরই প্রত্যাবাসন শুরু হবে। তবে কোন তারিখ থেকে ফেরত পাঠানো শুরু হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
গত বছরের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর সেনা অভিযানের মুখে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক। এদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চু্ক্তি হয়েছে জানুয়ারিতে।
মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ২৩ জানুয়ারি থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল। কিন্তু সে প্রত্যাবাসন এখনও শুরু হয়নি। এই চুক্তির পর রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিতে বিক্ষোভ করে। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানিয়েছিলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই তারা প্রত্যাবাসন শুরু করবেন।
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের পর বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সকল বিষয়ে বৈঠকে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছেন এবং পারস্পারিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে করতে সক্ষম হয়েছেন।
এ সময় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টে ত্রান দাই কুয়াং সমস্যার একটি সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রতি তাঁর সহযোগিতার বিষয়ে সমর্থন প্রকাশ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরো পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি তাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন এবং ব্যবসা সংক্রান্ত যৌথ কমিটির দ্বিতীয় বেঠক এ বছর অনুষ্ঠানের বিষয়ে উভয়ে বৈঠকে একমত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ, যন্ত্রাংশ তৈরি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে দু’দশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় আমরা আরো খুশি হয়েছি, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় আসিয়ানভূক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টির আগ্রহ প্রকাশ করে ‘মেকং-গঙ্গা’ সহযোগিতা ফোরামে যোগদানে আগ্রহের কথাও জানান এবং ‘মেকং-গঙ্গা’ ফোরামে যোগদানের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে ভিয়েতনামের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের আসার সময় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলকে সঙ্গে আনায় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্টকে ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। বলেন, তারাই (দুই দেশের ব্যবসায়ী) ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির উপায় ও পদ্ধতি খুঁজে বের করতে সমর্থ হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভিয়েতনামের মহান নেতা হোচি মিন তাঁদের দেশের জনগণের স্বাধীনতার জন্যই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন।
‘অসম শক্তির বিরুদ্ধে ভিয়েতনামীদের সংগ্রাম বাংলাদেশকে তাঁর মুক্তির সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ছাত্রনেতা হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ষাটের দশকের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে আমিও অংশ নিয়েছিলাম, আমি এখনও সেগুলো মনে করতে পারি, সেগুলো আমার স্মৃতিতে আজও সমুজ্জ্বল।
এর আগে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে শেখ হাসিনা তাকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। দুই নেতার মধ্যে একান্ত বৈঠক শেষে শুরু হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। সেখানে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা, ভিয়েতনামের পক্ষে তাদের রাষ্ট্রপ্রধান ত্রাণ দাই কুয়াং।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করবী হলে দুই নেতার উপস্থিতিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, যন্ত্র প্রকৌশল খাতে সহযোগিতাসহ তিনটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।