স্টাফ রিপোর্টার: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে উসকানিমূলক ও মিথ্যা তথ্য প্রচারের অভিযোগে রিমান্ডে থাকা আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে হাই কোর্টের আদেশে হাসপাতালে নেওয়ার পর স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে আবার গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহ-আল-হারুন বলেন, আমাদের মেডিকেল বোর্ড তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে। তাকে ভর্তি করার মত অবস্থা দেখিনি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে গতকাল বুধবার বেলা ২টার পর শহিদুল আলমকে আবার গোয়েন্দা পুলিশ নিয়ে গেছে জানিয়ে পরিচালক বলেন, উনার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল আমরা আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) পাব। এর আগে আদালতের আদেশে গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে শহিদুল আলমকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। দৃক গ্যালারি ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা শহিদুলকে রোববার রাতে গ্রেফতার করার পর সোমবার আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু শহিদুলকে ডিবি হেফাজতে নির্যাতন করার অভিযোগ এনে রিমান্ডের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত মঙ্গলবার হাই কোর্টে রিট করেন তার স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ। ওই আবেদন শুনে আদালত দ্রুত শহিদুলকে ডিবি হেফাজত থেকে হাসপাতালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শহিদুলের শারীরিক অবস্থার বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত শনি ও রোববার জিগাতলা এলাকায় সংঘর্ষের বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েক বার ফেসবুক লাইভে আসেন অধিকারকর্মী আলোকচিত্রী শহিদুল। ওই আন্দোলনের বিষয়ে আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি সরকারের সমালোচনাও করেন। এরপর রোববার রাতে শহিদুলকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় ‘কল্পনাপ্রসূত তথ্যের’ মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে ‘মিথ্যা প্রচার’ চালানো, উসকানিমূলক তথ্য উপস্থাপন, সরকারকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকর’ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিম-লে উপস্থাপন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘অবনতি ঘটিয়ে’ জনমনে ‘ভীতি ও সন্ত্রাস ছড়িয়ে’ দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নে ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ‘অপপ্রচারের’ অভিযোগ আনা হয় আলোকচিত্রী শহিদুলের বিরুদ্ধে। সোমবার আদালতে তোলার আগে গাড়ি থেকে নামার সময় শহিদুল সাংবাদিকদের বলেন, আমাকে আঘাত করা হয়েছে। আমার রক্ত মাখা পাঞ্জাবি ধুয়ে আবার পরানো হয়েছে। আর হাকিম আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে শহিদুল বলেন, গ্রেফতারের সময় তার চোখ-মুখ বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তোলা হয়েছিল। তারা আমাকে মোসাদ, আইএসআইর এজেন্ট বলে গালি দেয়, দেশদ্রোহীও বলে তারা। তারা আমাকে মারধরও করে। ৬৩ বছর বয়সী শহিদুলকে হাসপাতালে পাঠানোর আবেদন জানিয়ে গত মঙ্গলবার হাই কোর্টে তার স্ত্রী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমার করা আবেদনে বলা হয়, পুলিশ হেফাজতে শহিদুলকে ‘নির্যাতন’ এবং চিকিৎসা না দিয়ে তাকে রিমান্ডে পাঠানোর মাধ্যমে সংবিধানের ৩১, ৩২, ৩৩ এবং ৩৫(৫) অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে।