
নিজস্ব প্রতিনিধি: কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার আল-ইসলাম হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক প্রসূতির ওপর অপচিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত চিকিৎসক হলেন ওই হাসপাতালের গাইনী বিভাগের চিকিৎসক ডা. রোজিনা আক্তার।
ভুক্তভোগী প্রসূতি জোসনা আক্তারের স্বামী মো. নাছির বিষয়টি লিখিতভাবে কুমিল্লা সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও দেবিদ্বার উপজেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত ১৮ মার্চ সকালে গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় আল-ইসলাম হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ১৪,৫০০ টাকার চুক্তিতে সিজার অপারেশনের কথা থাকলেও বিকেল ৩টার পর কোনও ধরনের এনেস্থেশিয়া না দিয়েই অপারেশন শুরু করা হয়।
অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেশনের সময় চিকিৎসক জরায়ু ও মূত্রথলিতে ভুলভাবে কাটা দেন, ফলে রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। পরে চার ব্যাগ রক্ত দিতে হয়। আট দিন পর রোগীর অবস্থা আরও খারাপ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জোর করে রিলিজ দিতে চায়। স্বজনদের অভিযোগ, রিলিজ না দিলে রোগীকে ‘মেরে ফেলার’ হুমকি দেওয়া হয়। ভয়ে রোগীর স্বামী তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে বাধ্য হন। চুক্তির চেয়ে বেশি অর্থ, প্রায় ২০ হাজার টাকারও বেশি দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বাড়িতে নেওয়ার পর প্রসূতির প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায়, শরীর ফুলে যায় এবং অবস্থা আরও খারাপ হয়। পরে তাকে কুমিল্লা স্টার লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। অর্থ সংকটের কারণে পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর কিছুটা উন্নতি হয়।
ভুক্তভোগী জোসনা আক্তার বলেন, “ডা. রোজিনার ভুল চিকিৎসার কারণে আমি চরমভাবে অসুস্থ। নার্সরাও আমাকে অবমাননাকরভাবে ব্যবহার করেছে। আমি সঠিক বিচার চাই।”
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. রোজিনা আক্তার মোবাইলে কথা বললে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, তিনি ভুল চিকিৎসা করেননি। রোগীর এমন পরিস্থিতির দায়ভারও তিনি নেননি।
এ ঘটনায় পুরনো একটি অভিযোগও উঠে এসেছে। জানা যায়, ২০২০ সালে একই চিকিৎসক এক প্রসূতির সিজারিয়ানের সময় পেটের ভিতরে গজ রেখে সেলাই করেন। পাঁচ মাস পর সেই গজ অপারেশন করে বের করতে হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, দেবিদ্বারে অনুমোদনহীন ও নিয়ম না মেনে পরিচালিত বহু প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গজিয়ে উঠেছে। চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা যেন সেখানে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঠিক তদারকি না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা সিভিল সার্জন জানান, অভিযোগ পেয়েছেন এবং তদন্তের জন্য একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভুক্তভোগীর স্বামী মো. নাছির জানান, দিনমজুর এই জীবনে তিনি তার স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাতে অটোরিকশা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এখন চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্য তার নেই। তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।