
ধর্ম ও জীবন ডেস্ক: পবিত্র কুরআনের সুরা মুমিনুনের শুরুতে আল্লাহতায়ালা সফল মুমিনদের কয়েকটি গুণের কথা বর্ণনা করেছেন।
১. একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করা
সফল মুমিনের প্রথম গুণ হলো, তারা একাগ্রতার সঙ্গে নামাজ আদায় করে। এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর সামনে নিজেদেরকে বিনয়ের সঙ্গে উপস্থাপন করে।
ওমর বিন খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, এমনভাবে ইবাদত–বন্দেগি করবে, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে নাও দেখ, তাহলে বিশ্বাস রাখবে যে, তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন। (মুসলিম, হাদিস: ০১)
২. অনর্থক কাজ থেকে বিরত থাকা
মুমিনের দ্বিতীয় গুণ হলো তারা অনর্থক কথা ও কাজ থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকবে। অপ্রয়োজনীয় বিষয় থেকে দূরে থাকা তাদের উন্নত চরিত্রের পরিচায়ক।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক আচরণ ত্যাগ করা। (তিরমিজি, হাদিস: ২৩১৭)
৩. জাকাত আদায় করা
সফল মুমিনরা তাদের সম্পদের জাকাত সঠিকভাবে আদায় করে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের সম্পদকে পবিত্র করে এবং দরিদ্রদের অধিকার নিশ্চিত করে।
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি বিদায় হজের অবস্থায় রাসুলকে (সা.) ভাষণ দিতে শুনেছি, তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, তোমাদের পাঁচ ওয়াক্তের (ফরজ) নামাজ পড়, তোমাদের রমজান মাসের রোজা রাখ, তোমাদের মালের জাকাত আদায় কর এবং তোমাদের নেতা ও শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্য কর (যদি তাদের আদেশ শরিয়ত বিরোধী না হয়), তাহলে তোমরা তোমাদের প্রভুর জান্নাতে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৬১৬)
৪. লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করা
মুমিনরা তাদের লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণ করে। এর অর্থ হলো, তারা যৌন চাহিদা পূরণের জন্য কোনো অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে না। অবৈধ পন্থার মধ্যে সমকামিতা, ব্যভিচার, হস্তমৈথুন ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
সাহাল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহ্বা) এবং দু’রানের মাঝখানের বস্তুর (লজ্জাস্থান) জামানত আমাকে দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার। (বুখারি, হাদিস: ৬৪৭৪)
দুনিয়াতে যত ফেতনা-ফাসাদ ও অপকর্ম ঘটে, তার অধিকাংশই জিহ্বা ও লজ্জাস্থানের কারণে হয়। যে ব্যক্তি এই দুটি অঙ্গকে সংযত রাখবে, রাসুল (সা.) তাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তবে বৈধ পন্থায়, অর্থাৎ বিবাহের মাধ্যমে জৈবিক চাহিদা পূরণ করতে কোনো বাধা নেই। তাই আমাদের উচিত সময়মতো বিবাহ করা। যারা এর বাইরে অন্য কোনো পথ অবলম্বন করে, তারা সীমালঙ্ঘনকারী এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
৫. আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা
সফল মুমিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো, তারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে।
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) খুব কমই এমন খুতবা দিয়েছেন, যেখানে এ কথা বলেননি যে, ‘যার আমানতদারী নেই, তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা-অঙ্গীকারের মূল্য নেই, তার দীনও নেই।’ (মিশকাতুল মসাবিহ)
৬. নামাজের প্রতি যত্নবান
নামাজের হেফাযত বা যত্ন নেওয়া মুমিনের একটি বিশেষ গুণ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) একদিন নামাজ সম্পর্কে আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করবে, তা কিয়ামতের দিন তার জন্য জ্যোতি, প্রমাণ ও মুক্তির উপায় হবে। আর যে ব্যক্তি নামাজের হেফাযত করবে না, তার জন্য এটা জ্যোতি, প্রমাণ বা মুক্তির কারণ হবে না। কিয়ামতের দিন সে কারুন, ফেরাউন, হামান ও উবাই ইবনে খালাফের সঙ্গে থাকবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ৬৫৭৬)
সর্বোচ্চ প্রতিদান
আল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা এসব গুণাবলির অধিকারী হবে, তারা সবচেয়ে উত্তম জান্নাত, জান্নাতুল ফিরদাউসের বাসিন্দা হয়ে সফলতার পরিচয় দেবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে এসব গুণাবলি অর্জন করে জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।