1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:
নতুন বাংলাদেশ গঠনে কাজ করছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা মহানবী (সা.) ও মুসা (আ.)-কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র আঁকায় চারজন কার্টুনিস্ট আটক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোরের আহ্বায়ক রাশেদ খান পদত্যাগ করেছেন ঝিনাইদহের শৈলকূপায় ট্রাক চাপায় এক ব্যক্তি নিহত গোলাম রাব্বানীর দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘আনটাং’ অফিসিয়ালি নির্বাচিত হচ্ছে ওয়াটারলু ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে টেলিফোনালাপ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ’কাঁটা লাগা’ গার্ল খ্যাত শেফালি জরিওয়ালা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে তুরস্কের পশ্চিমাঞ্চলীয় ইজমির প্রদেশ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলায় আরও ৭২ ফিলিস্তিনি নিহত পিআরকে ইস্যু করে দেশের মানুষের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাসী না

চামড়া খাতে বিপুল ব্যয় করেও সুফল মিলছে না

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ দেশের চামড়া খাত নিয়ে গবেষণা করছেন। পাশাপাশি সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর-প্রক্রিয়ার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। দেশে চামড়ার দর, চামড়া খাতের সম্ভাবনা, সংকট ও সমাধানের উপায় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাজীব আহমেদ

প্রথম আলো: চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বিশ্ববাজার অনেক বড়। এ বাজারে বাংলাদেশের সম্ভাবনা কতটুকু?

আবু ইউসুফ: বিশ্বে চামড়াজাত পণ্যের বাজারের আকার প্রায় ২৪ হাজার কোটি ডলারের। সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১০৮ কোটি ডলারের কিছু বেশি। ফলে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের হিস্যা খুবই নগণ্য, যা বাড়ানোর অনেক সুযোগ আছে। কয়েক বছর আগে আমাদের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে চামড়া শিল্পনগরে ট্যানারি স্থানান্তর সফল হলে বাংলাদেশ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় ২০২১ সালের মধ্যে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করতে পারে। কারণ আমাদের চামড়ার মান ভালো ও শ্রমের ব্যয় কম। পোশাক খাতের চেয়ে চামড়া খাতে মূল্য সংযোজন বেশি। এ ছাড়া এ দেশে চামড়ার জোগান বেশি ও দাম কম।

প্রথম আলো: এত সম্ভাবনার পরও চামড়া খাতে রপ্তানি আয় কমে গেছে। কয়েক বছর ধরে কাঁচা চামড়ার দাম কম। এর কারণ কী?

আবু ইউসুফ: বাংলাদেশ চামড়া রপ্তানি করে, আবার চামড়াজাত পণ্যও রপ্তানি করে। আমাদের চামড়ার একটা বড় অংশ কেনে চীন। তারা সেটা দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে তারা বাংলাদেশি চামড়া কেনা কমিয়েছে। দেশে চামড়ার দাম কমে যাওয়ার এটা একটা কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে যেসব ভালো ভালো চামড়াজাত পণ্য তৈরির কারখানা আছে, তারা দেশি চামড়া কেনে না। কারণ দেশে পরিবেশদূষণের কারণে তাদের ক্রেতা ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশি চামড়া কিনতে নিষেধ করে। আমরা মূলত ব্যবসা করি নন-ব্র্যান্ডেড বাজারে, যেখানে পণ্যের দাম কম। বড় বড় ব্র্যান্ড বা উচ্চমূল্যের বাজারে বাংলাদেশি চামড়া যায় না।

নব্বইয়ের দশকে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ চামড়া খাতে প্রায় ১৫ কোটি ডলার করে রপ্তানি আয় করত। এখন ভিয়েতনামের আয় ১ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি। তাদের সফলতার কারণ তারা পরিবেশবান্ধব কারখানা করতে পেরেছে। বড় ক্রেতারা এটাই চায়। আমরা যদি আমাদের চামড়া ব্যবহার করে ভালো ব্র্যান্ডের কাছে পণ্য বিক্রি করতে পারতাম, তাহলে ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি কোনো বিষয় হতো না।

প্রথম আলো: পরিবেশদূষণ রোধে তো ১ হাজার ৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চামড়া শিল্পনগর প্রতিষ্ঠা করা হলো। ট্যানারি সরিয়ে নেওয়া হলো। এর সুফল কী?

আবু ইউসুফ: যে আশা নিয়ে সাভারে ট্যানারি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, সেটা পূরণ হয়নি। ট্যানারি স্থানান্তরে মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয় ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর। আর স্থানান্তর ২০১৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। এখনো স্থানান্তরের কাজ শেষ হয়নি। এর অন্যতম কারণ কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ সময়মতো শেষ না হওয়া। এটি নির্মাণে ৬৩৮ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে, তবে তা এখনো পুরোপুরি কার্যকর বলা যাবে না। পত্রপত্রিকায় দেখছি সাভারে ধলেশ্বরী নদী দূষণ হচ্ছে। সিইটিপির চারটা মডিউল যেভাবে কাজ করার কথা, তা করছে না। আবার এ ক্ষেত্রে ট্যানারিগুলোরও দায় আছে।

প্রথম আলো: ২০১৭ সালের এপ্রিলে সিইটিপি প্রায় প্রস্তুত বলে দাবি করে ট্যানারি সাভারে নেওয়া হলো। এখনো অবস্থা আগের মতোই। কার ব্যর্থতা?

আবু ইউসুফ: একে আমি ব্যর্থতা বলব না, বলব চ্যালেঞ্জ। ট্যানারি হাজারীবাগ থেকে সাভারে নিতে যে প্রস্তুতি দরকার ছিল, আমার মনে হয় তা ছিল না। আদালতের নির্দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর হাজারীবাগে ট্যানারির সেবা-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। কিন্তু সাভারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত যে প্রস্তুতি দরকার ছিল, তা কিন্তু এখনো নেই। আগে হাজারীবাগ না ছাড়ার জন্য ট্যানারির মালিকদের দোষারোপ করা হতো, এখন প্রস্তুতির অভাব সামনে আসছে।

প্রথম আলো: সিইটিপি নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। এখন কী করা যেতে পারে?

আবু ইউসুফ: সিইটিপি যখন হয়, তখন আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে বলেছি, এটা যেন লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) নির্ধারিত মানে করা হয়। সিইটিপি করা হলো, সেটা যদি আন্তর্জাতিক সংস্থার সনদ না পায়, তাহলে বিশেষ লাভ হবে না। এলডব্লিউজির সনদ পেলে বড় ক্রেতারা বাংলাদেশের চামড়া কিনবে। এখনো সুযোগ আছে। এ জন্য এ ক্ষেত্রে দক্ষ কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিতে হবে। তারা সিইটিপির সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করবে। বিসিকের এ ধরনের কার্যক্রম চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। তারা পরামর্শক হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) নিয়েছে। তাদেরও এ ধরনের অভিজ্ঞতা নেই।

প্রথম আলো: এলডব্লিউজির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁরা বলেছেন, এই সিইটিপি অকার্যকর। সিইটিপি হলো, সেটা মানসনদ পেল না, তাহলে লাভ কী?

আবু ইউসুফ: আসলে যে আশা নিয়ে ট্যানারি স্থানান্তর করা হয়েছে, তা এখনো পূরণ হচ্ছে না। সরকার কিন্তু অনেক সহায়তা দিয়েছে। পরিবেশদূষণ রোধ করা ও মান রক্ষা না হলে আমরা ব্যয়ের সুফল পাব না।

প্রথম আলো: যে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সিইটিপি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের দায় কতটুকু?

আবু ইউসুফ: আমরা বিভিন্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে দেখেছি, চীনা ঠিকাদারের যে মান রক্ষার কথা, সেখানে ঘাটতি আছে। এ বিষয়ে বুয়েট ভালো বলতে পারবে। আমার মনে হয়, বিষয়টি আলাদাভাবে দেখা দরকার। কোনো সংস্থাকে দিয়ে নিরীক্ষা করা দরকার।  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।

প্রথম আলো: আমরা এখন যে বাজারে ব্যবসা করি, সেখানে থেকে কি রপ্তানি আয় ৫০০ কোটি ডলারে নেওয়া সম্ভব?

আবু ইউসুফ: না, সেটা সম্ভব নয়। আমাদের উচ্চমূল্যের বাজারে যেতে হবে, বড় ব্র্যান্ডের ক্রেতা ধরতে হবে। এখন দেশে যারা বড় ব্র্যান্ডের কাছে পণ্য বিক্রি করছে, তারাও যদি দেশি চামড়া ব্যবহার করতে পারত, তাহলে তাদের আয় বাড়ত।

প্রথম আলো: এপেক্স ও বে বলছে, তারা নিজেরা বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি করতে চায়। তাদের কি অনুমোদন দেওয়া উচিত?

আবু ইউসুফ: তাদের বাজারে টিকে থাকতে হবে, ব্র্যান্ডের সুনাম ধরে রাখতে হবে। তারা যদি নিজেরা ইটিপি করতে চায়, তাহলে সেটা করতে দেওয়া উচিত। তবে দেশের স্বার্থে কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারকে এলডব্লিউজির মানে উন্নীত করতে হবে। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

প্রথম আলো: ভারত, ভিয়েতনাম; এমনকি পাকিস্তানের আয় বাড়ছে। আমাদের কমছে কেন?

আবু ইউসুফ: আসলে আমাদের ব্র্যান্ডের ক্রেতা ধরতেই হবে। সেটার জন্য যা যা করণীয়, তা আমাদের করতে হবে। সরকার এত টাকা ব্যয় করছে, কিন্তু তার সুফল আমরা পাচ্ছি না শুধু সুষ্ঠু তদারকি ও সমন্বয়ের অভাবে।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews