
অনলাইন ডেস্ক: ঠান্ডা লাগলে আমাদের অনেকের হাত কিংবা শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। আপনার ত্বকের ওপর ছোট ছোট দানা বা উঁচু হয়ে যাওয়া অংশ, যা লোমের গোড়ার ক্ষুদ্র পেশি সংকুচিত হলে ঘটে থাকে সে হচ্ছে গুজবাম্পস। বাংলায় যাকে বলে লোম খাড়া হওয়া।
বিষয়টি শুনতে অদ্ভুত মনে হতে পারে যে, এটি আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া একটি পুরোনো প্রতিক্রিয়া। ঠান্ডা লাগুক, ভয় লাগুক কিংবা কোনো আবেগঘন মুহূর্তে মন ভরে উঠুক—গুজবাম্পস আপনার শরীরের সেই প্রাচীন প্রতিক্রিয়া, যা আমাদের অনুভূতি ও পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে থাকে। এটি কোনো ক্ষতিকর বিষয় নয় এবং সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। তবে যদি বারবার গুজবাম্পস হয় কিংবা এর সঙ্গে জ্বর, অসাড়তা বা অন্যান্য শারীরিক উপসর্গ দেখা দিয়ে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
গুজবাম্পস সাধারণত কয়েকটি কারণে হয়—
ঠান্ডা লাগলে শরীর তখন উষ্ণতা ধরে রাখার চেষ্টা করে। চুল খাড়া হলে পশুদের শরীরে ঘন লোমস্তর তৈরি হয়, যা ঠান্ডা থেকে রক্ষা করে। মানুষের ক্ষেত্রে এটি কেবল সেই পুরোনো প্রতিক্রিয়ার একটি অবশিষ্ট রূপ। আবেগজনিত কারণেও হয়ে থাকে। ভয়, আনন্দ, উত্তেজনা কিংবা অনুপ্রেরণার মুহূর্তে শরীরের স্নায়ু ব্যবস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভয় লাগলে শরীর ‘ফাইট অর ফ্লাইট’ প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়। তখনই গুজবাম্পস দেখা যায়। হঠাৎ স্পর্শ বা চমকের কারণেও হতে পারে। হঠাৎ ঠান্ডা লাগা, আবেগপূর্ণ গান শোনা কিংবা অপ্রত্যাশিত কোনো উদ্দীপনা থেকেও গুজবাম্পস হয়ে থাকে।
আর প্রতিটি চুলের গোড়ায় একটি ছোট পেশি থাকে। যাকে বলে অ্যারেক্টর পিলি। স্নায়ু থেকে যখন সংকেত যায় ঠান্ডা কিংবা ভয়ের কারণে, তখন এই পেশি সংকুচিত হয়ে চুল টেনে তোলে। এটি সম্পূর্ণ অবচেতন বা স্বয়ংক্রিয় প্রতিক্রিয়া, যা আমরা ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।
আমাদের প্রাণী পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়া জীবনরক্ষাকারী ভূমিকা রাখত। ঠান্ডায় তারা গায়ের লোম খাড়া করে উষ্ণতা ধরে রাখত, আর ভয়ের সময় শরীর ফুলিয়ে নিজেকে বড় দেখাত, যাতে শত্রু ভয় পায়। মানুষের শরীরে লোম প্রায় বিলুপ্ত হলেও এই স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া রয়ে গেছে।