
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: তুরস্কে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় লিবিয়ার সেনাবাহিনী প্রধান মোহাম্মদ আলি আহমদ আল-হাদ্দাদ নিহত হয়েছেন। একই ঘটনায় বিমানটিতে থাকা আরও চার আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা থেকে উড্ডয়নের পরপরই এই দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
লিবিয়ার জাতিসংঘ স্বীকৃত ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুলহামিদ দ্বেইবাহ এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আঙ্কারায় একটি সরকারি সফর শেষে দেশে ফেরার সময় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাটিকে তিনি দেশের জন্য এবং সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বড় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিতে জানানো হয়, বিধ্বস্ত বিমানটিতে সেনাপ্রধান আল-হাদ্দাদের সঙ্গে ছিলেন লিবিয়ার গ্রাউন্ড ফোর্সেসের প্রধান, প্রতিরক্ষা উৎপাদন শিল্পের পরিচালক, সেনাপ্রধানের একজন উপদেষ্টা এবং তাঁর দপ্তরের একজন ফটোগ্রাফার। দুর্ঘটনায় বিমানে থাকা সবাই নিহত হন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কমিউনিকেশনস ডিরেক্টরেটের প্রধান বুরহানেত্তিন দুরান জানান, দুর্ঘটনার সময় বিমানটিতে থাকা তিনজন ক্রুও প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, বৈদ্যুতিক ত্রুটির কারণে বিমানটি জরুরি অবতরণের অনুমতি চেয়েছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া জানিয়েছেন, যাত্রীবাহী ফ্যালকন ৫০ মডেলের জেটটি আঙ্কারার এসেনবোগা বিমানবন্দর থেকে ত্রিপোলির উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। উড্ডয়নের কিছু সময় পর বিমানটির সঙ্গে নিয়ন্ত্রণকক্ষের সংযোগ হারিয়ে যায়। পরে আঙ্কারার হায়মানা জেলার কেসিককাভাক গ্রামের কাছে এর ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
এ ঘটনায় তুরস্কের আইনমন্ত্রী ইলমাজ তুনচ জানিয়েছেন, আঙ্কারার প্রধান প্রসিকিউটর অফিস ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে। আল জাজিরাকে তুরস্কের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রাথমিক তদন্তে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের আলামত পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই দুর্ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন লিবিয়ার সঙ্গে তুরস্কের সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক নতুন করে গুরুত্ব পাচ্ছে। এর ঠিক আগের দিনই তুরস্কের পার্লামেন্ট লিবিয়ায় নিজেদের সেনা মোতায়েনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। ত্রিপোলিভিত্তিক সরকারের সঙ্গে আঙ্কারার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা রয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
লিবিয়ার সেনাবাহিনীতে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা আল-হাদ্দাদ পশ্চিম লিবিয়ায় একজন প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় সামরিক নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। মুয়াম্মার গাদ্দাফিবিরোধী বিদ্রোহেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।