জীবন নিউজ, ভোলা : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, দেশের পর্যটন সম্ভাবনা খুবই উজ্জল। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা ও স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে। পর্যটন শিল্পের বিকাশ নিশ্চিত করতে পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটেছে। সেই চিন্তাধারা থেকে আপনাদের নেতা জ্যাকবের উদ্যোগ এবং চরফ্যাশন পৌরসভার তত্ত্বাবধানে ১৮তলা বিশিষ্ট ২শ’ ২০ ফিট উচ্চতা সম্পন্ন টাওয়ার নির্মাণ একটি যুগান্তরকারী পদক্ষেপ। এই টাওয়ার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্বাধুনিক ও সুউচ্চ জ্যাকব টাওয়ার উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে এক নতুন দিগন্তে সূচনা হলো। আজ ২৪ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে চরফ্যাশন টিবি স্কুল মাঠে চরফ্যাশন পৌরসভা আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একথা বলেন।
সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। পৌর মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথের সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-২ আসনের এমপি আলী আযম মুকুল, চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কায়সার আহমেদ দুলাল বক্তব্য রাখেন। সঞ্চালনায় ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির আহমেদ শুভ্র।
সুধি সমাবেশের আগে রাষ্ট্রপতি চরফ্যাশনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার ‘জ্যাকব টাওয়ার’ উদ্বোধন করেন। এছাড়াও বেগম রহিমা ইসলাম কলেজ, অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজ, চরফ্যাশন টিসার্স ট্রেনিং কলেজের একাডেমিক ভবন ও রসুলপুর-এওয়াজপুর মৈত্রি সেতুর ফলক উন্মোচন করেন।
প্রধান অতিথির ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আরো বলেন- চরফ্যাশনে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ, বেগম রহিমা ইসলাম ডিগ্রি কলেজ, নজরুল ইসলাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ উদ্বোধন শিক্ষা ক্ষেত্রে যাগান্তরকারী পদক্ষেপ। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এলাকার গুনগত শিক্ষা প্রসারে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস। শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সরকার এ লক্ষ্যে অবকাঠামো সহ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিনামূল্যে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে বই দিচ্ছে। পর্যাপ্ত বৃত্তি প্রদান সহ উৎসাহব্যঞ্জক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। এখন দরকার গুণগতমানের শিক্ষা। শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন আপনারা ছেলে মেয়েদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। একবিংশ শতাব্দি হবে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। বর্তমান প্রজন্মকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে স্থানীয় এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে তারা যে কোন প্রতিযোগিতায় নিজেদের যোগ্য ও দক্ষ হিসেবে প্রমাণ করতে পারে।
রাষ্ট্রপতি বলেন উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। উন্নয়ন কেউ কাউকে দেয়না। এটা অর্জন করতে হয়। তাই অন্যের উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের যা আছে তা নিয়ে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। ৫৪ হাজার বর্গমাইলের ছোট দেশটিতে প্রায় ১৭ কোটি লোকের বসবাস। এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে না পারলে দেশের সব উন্নয়ন পরিকল্পনাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা খুবই উজ্জল কিন্তু আমাদের এই সম্ভাবনা সমুহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই একবিংশ শতাব্দিতে দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে হলে এসব উন্নয়ন সম্ভাবনাসমুহকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। আর এজন্য দরকার জনপ্রতিনিধি, উদ্যোক্তা, সরকারি কর্মচারী ও স্থানীয় জনগণের সমন্বিত প্রয়াস।
সমাবেশে চরফ্যাশনকে জেলা ঘোষণা ও একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রীর দাবির জবাবে রাষ্ট্রপতি মো.আবদুল হামিদ বলেছেন- চরফ্যাশন জেলা হওয়ার যোগ্য এবং এখানে সরকারি বা বে-সরকারি উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় হতেই পারে। এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে যেকোন উদ্যোগ নেয়া হলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সার্বিক সহযোগিতা করবো।