1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৩:২৯ পূর্বাহ্ন

নারীর অংশগ্রহণে নতুন বাংলাদেশ গড়ার ওপর গুরুত্বারোপ প্রধান উপদেষ্টার

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক: প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বিশেষ করে বেগম রোকেয়ার নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আজকের নারীসমাজ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নারী সমাজ। একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন নারী সমাজ। তাদের হাত ধরেই নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছে। তাঁরা কেবল নারীদের জন্য নয়, সকলের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। নারীদের সামনে রেখেই আমাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক। তাদেরকে আমাদের সমুন্নত রাখতে হবে।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বেগম রোকেয়া দিবস ২০২৫ উদযাপন ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন ।

প্রতি বছরের মতো এবারও নারীশিক্ষা, নারী অধিকার, মানবাধিকার এবং নারী জাগরণে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ চার বিশিষ্ট নারীকে রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়েছে।

এ বছর নারীশিক্ষায় (গবেষণা) রুভানা রাকিব, নারী অধিকারে (শ্রম অধিকার) কল্পনা আক্তার, নারী জাগরণে (ক্রীড়া) ঋতুপর্ণা চাকমা ও মানবাধিকার ক্যাটাগরিতে নাবিলা ইদ্রিসকে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যে আদর্শে বেগম রোকেয়া আমাদের নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন, অতি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছিলেন তাঁর বক্তব্যে, তাঁর লেখায়, আজকে যে চারজন পুরস্কার পেলেন তাঁরা রোকেয়ার সেই পথে আমাদের জাতিকে এগিয়ে দিলেন। এটি আরও একটি পুরস্কার না, এটা যুগান্তকারী পুরস্কার। তাঁরা আমাদেরকে দুনিয়ার সামনে অন্য স্তরে নিয়ে গেছেন। তাঁরা শুধু বাংলাদেশের না, তাঁরা সারা পৃথিবীর নেতৃত্ব দেয়া নারী।’

আজকের আয়োজনে শুধু বেগম রোকেয়াকে স্মরণ নয়, বরং ব্যর্থতা খুঁজে বের করা প্রয়োজন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ১০০ বছর পার হলেও আরেকজন রোকেয়া সৃষ্টি করতে পারিনি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি যেসব দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন, যেসব স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন, এ স্বপ্নকে আমরা আমলে আনতে পারিনি। কথা বলেছি কিন্তু অগ্রসর হতে পারি নাই। কেন পারলাম না এটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’

১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ও গ্রামীণ ব্যাংকের শুরুর দিককার স্মৃতিচারণ করে নারীদের কঠিন সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘দুর্ভিক্ষের আঘাত প্রথমে আসে নারীদের ওপর, শিশুদের ওপর।’

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখলাম, মেয়েরা জানে না তাদের নাম কী? সবাই চিনে, অমুকের মা, অমুকের স্ত্রী, অমুকের মেয়ে, অমুকের নাতি-নাতনি। নাম জানে না। সমাজের একটা অংশ কীভাবে সমাজ থেকে তাদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলে এটা তার নমুনা। আমরা নাম ঠিক করে দিলাম। নাম লিখতে শেখানোর জন্য হাতে কাঠি ধরিয়ে দিলাম। দিনরাত পরিশ্রম করে, চোখের পানি ফেলে তারা নাম লেখা শিখল… এটা একশ বছর পরের অবস্থা। একশ বছর আগে রোকেয়া সেই আমলে যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেটা বিশ্বাস করা যায় না। আজকে অনেকে বলে, ‘হ্যাঁ, সুন্দর কথা বলেছে…’ সুন্দর কথা না, রোকেয়া বিপ্লবী কথা বলেছে। সমাজকে ঝাঁকুনি দিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু সেই ঝাঁকুনি বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো ব্যক্তি আর এলো না। এটাই আমাদের দুর্ভাগ্য।’

প্রধান উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘বেগম রোকেয়া কোনো কাজ সমাজকে বাদ দিয়ে করেননি। সবসময় সমাজকে নিয়েই সব কাজ করেছেন। একশ বছর আগে রোকেয়া লিখেছেন, নারী-কন্যাদের লেখাপড়া শেখাও যাতে সে অন্ন উপার্জন করতে পারে। সেখান থেকে আমরা শিখতে পারছি না কেন? আয়োজন করছি কিন্তু শিখতে পারছি না। আমাদের দৈনন্দিন পথে রোকেয়া সাথে থাকুক, তাহলেই অগ্রসর হতে পারব।’

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা যখন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ি; ইকনোমিক্স অনার্সে অনেক ছেলে ছিল, মেয়ে ছিল মাত্র চার জন। কোনো কোনো বিভাগে কোনো মেয়েই ছিল না। এখন যে কোনো শিক্ষায়তনে যাও। মেয়ে শিক্ষার্থীরা উপচে পড়ছে। আমি খোঁজ নিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন অর্ধেক-অর্ধেক। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মেয়েদের হল কয়টা? আমাকে বলল পাঁচটা। আর ছেলেদের হল ১৩টা। এটা কেমন বিচার হলো? মেয়েদের থাকার ব্যবস্থা তো আগে করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়’ করার ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম লিমিটেড
Theme Customized BY LatestNews