1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
  2. adminbockup@wordpress.org : adminbockup :
  3. wordpresupport@www.jibonnews24.com : admlnlx :
  4. admin@wordpress.org : admn :
  5. : archive_option :
  6. jibonnews24wy@gmail.com : trumpweiss :
শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন

বাংলাদেশে প্রবীণ সেবার হালচাল

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর, ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক:     গতকাল ১ অক্টোবর বিশ্বজুড়ে পালিত হয়েছে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯০ সালে এই দিনটিকে স্বীকৃতি দেয় এবং ১৯৯১ সাল থেকে এটি প্রতি বছর পালিত হয়ে আসছে। এই দিনটি প্রবীণ নাগরিকদের অমূল্য অবদান, তাদের প্রজ্ঞা ও মর্যাদা তুলে ধরার পাশাপাশি তাদের সম্মুখীন হওয়া চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় উৎসর্গীকৃত। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যেমনটি বলেছেন, ‘এই বছরের প্রতিপাদ্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, প্রবীণ ব্যক্তিরা পরিবর্তনের শক্তিশালী চালিকাশক্তি। নীতি নির্ধারণ, বয়স-বৈষম্য দূরীকরণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে তাদের কণ্ঠস্বর শোনা অত্যন্ত জরুরি।’

২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্য হলো— ‘প্রবীণ ব্যক্তিরা স্থানীয় ও বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি: আমাদের আকাঙ্ক্ষা, আমাদের সুস্থতা এবং আমাদের অধিকার’। এই প্রতিপাদ্যটি স্থিতিস্থাপক ও ন্যায়সঙ্গত সমাজ গঠনে প্রবীণদের রূপান্তরমূলক ভূমিকাকে তুলে ধরে। প্রবীণরা কেবল সুবিধাভোগী নন, বরং স্বাস্থ্য সমতা, আর্থিক সুস্থতা, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং মানবাধিকারের মতো ক্ষেত্রগুলোতে তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেন। ২০০২ সালে গৃহীত রাজনৈতিক ঘোষণা এবং মাদ্রিদ আন্তর্জাতিক প্রবীণ কর্মপরিকল্পনা (MIPAA) বৈশ্বিক প্রবীণ নীতির ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করছে, যা সব বয়সের জন্য একটি সমাজ গঠনে উন্নয়নে, স্বাস্থ্যসেবায় এবং সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ করে।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক কিছু পদক্ষেপ এই এজেন্ডাকে আরও শক্তিশালী করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে, মানবাধিকার কাউন্সিল ৮১টি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে একটি প্রস্তাব (৫৮/১৩) গ্রহণ করে, যা প্রবীণদের মানবাধিকার প্রচার ও সুরক্ষায় একটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক দলিল প্রণয়নের জন্য একটি উন্মুক্ত কর্ম-গোষ্ঠী গঠনের অনুমোদন দেয়। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি প্রবীণদের অধিকার-ধারক এবং পরিবর্তন-নির্মাতা হিসেবে ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির প্রতিফলন।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবীণদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাই এই পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত জরুরি। প্রবীণদের ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুরক্ষায় ন্যায়সঙ্গত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং বৈষম্য দূরীকরণ নীতিগুলো একটি বার্ধক্যপ্রাপ্ত বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। প্রবীণদের কণ্ঠস্বরকে উচ্চকিত করে এবং তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে, ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস প্রবীণদের তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ, তাদের অধিকারের জন্য সোচ্চার হওয়া এবং তাদের মর্যাদা ও সুস্থতা নিশ্চিত করে এমন নীতিগুলোর আহ্বান জানানোর একটি মঞ্চ হিসেবে কাজ করবে।

জনমিতিক পরিবর্তন: একটি বৈশ্বিক ও স্থানীয় চিত্র

বিশ্বজুড়ে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৯৫ সালে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫৪১ মিলিয়ন, যা ২০২৫ সালে ১.২ বিলিয়নে পৌঁছেছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ২.১ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০৮০ সালের মধ্যে, ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষ ১৮ বছরের কম বয়সি শিশুদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে যাবে। ১৯৯৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু ৮.৬ বছর বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩.৫ বছরে পৌঁছেছে। ৮০ বছর বা তার বেশি বয়সি মানুষের সংখ্যা আরও দ্রুত বাড়ছে এবং ২০৩০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই সংখ্যা নবজাতকদের সংখ্যাকে ছাড়িয়ে ২৬৫ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এই চিত্র ভিন্ন নয়। গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৪৭ বছর থেকে বেড়ে বর্তমানে ৭২ বছরের বেশি হয়েছে। এই সাফল্য নিঃসন্দেহে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতিকে নির্দেশ করে, তবে এটি একটি নতুন ধরনের জনমিতিক চ্যালেঞ্জও তৈরি করেছে। বর্ধিত আয়ুষ্কাল মানে দীর্ঘস্থায়ী রোগ, বহুমুখী অসুস্থতা এবং বার্ধক্যজনিত সিনড্রোমগুলোর (যেমন ডিমেনশিয়া, পড়ে যাওয়া) বৃদ্ধি, যা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে। ডিমেনশিয়া, যা বয়স্কদের মধ্যে পরাধীনতা ও অক্ষমতার একটি প্রধান কারণ, তার প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষায়িত যত্নের প্রয়োজনীয়তা আরও অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

জনসংখ্যা বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তার চাহিদা বেড়েছে, বিশেষ করে ডিমেনশিয়া-এর মতো অসুস্থতাগুলোর জন্য, যা বয়স্কদের মধ্যে পরাধীনতা ও অক্ষমতার একটি প্রধান কারণ। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণের জন্য বিশেষায়িত যত্ন এখন অপরিহার্য। এটি লক্ষ্যণীয় যে, বিশ্বব্যাপী অনানুষ্ঠানিক সেবাপ্রদানকারীদের প্রায় ৭০% নারী, যারা সেবাপ্রাপ্তদেরও সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, যেখানে সেবার সীমাবদ্ধতা রয়েছে, সেখানে নারীরা বার্ধক্যে দারিদ্র্যের ঝুঁকির শিকার বেশি হন।

প্রবীণ চিকিৎসাবিদ্যা: বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রবণতা

ঐতিহ্যগতভাবে, বাংলাদেশের সমাজ প্রবীণদের যত্ন ও সমর্থন পারিবারিক কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখেছিল। filial piety বা জ্যেষ্ঠদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং যৌথ পরিবারের শক্তিশালী বন্ধন বয়স্কদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করত। তবে, দ্রুত নগরায়ন, অর্থনৈতিক মাইগ্রেশন এবং একক পরিবারের উত্থান এই ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থায় ফাটল ধরিয়েছে। প্রবীণরা প্রায়ই একা হয়ে পড়ছেন এবং তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলোর জন্য আনুষ্ঠানিক সহায়তার প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে।

বিশ্বব্যাপী, প্রবীণ চিকিৎসাবিদ্যা রোগকেন্দ্রিক মডেল থেকে একটি সামগ্রিক, রোগী-কেন্দ্রিক পদ্ধতির দিকে সরে আসছে। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় জেরিয়াট্রিক্সের সংহতি, স্বাস্থ্যকর বার্ধক্যের প্রচার, স্বাধীন জীবনযাপনের জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উপশমমূলক ও শেষ জীবনের যত্নের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। অনেক উন্নত দেশে প্রবীণদের যত্নের জন্য সুসংগঠিত জাতীয় নীতি, পর্যাপ্ত তহবিল এবং চিকিৎসক, নার্স ও সহযোগী স্বাস্থ্য পেশাদারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম রয়েছে। কার্ডিওভাসকুলার রোগ, আর্থ্রাইটিস এবং স্নায়ুবিক অসুস্থতার মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্রমবর্ধমান প্রকোপের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রবীণ চিকিৎসাবিদ্যার বাজারও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রবীণসেবার বর্তমান চিত্র এবং একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রবীণ চিকিৎসাবিদ্যা এখনও একটি নবীন ক্ষেত্র। বিশেষায়িত সেবার অভাব, প্রশিক্ষিত পেশাদারদের স্বল্পতা এবং একটি সমন্বিত সরকারি নীতির অনুপস্থিতি এই খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ। তবে, কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে—

• বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জেরিয়াট্রিক ডে কেয়ার সার্ভিস: এদেশের প্রবীণ চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন হলো • বারডেম জেনারেল হাসপাতালে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে চালু হওয়া জেরিয়াট্রিক ডে কেয়ার সার্ভিস। এটি সপ্তাহের শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং প্রবীণদের জন্য জেরিয়াট্রিক এসেসমেন্ট ও সেবা প্রদান করে। এখানে প্রশিক্ষিত কনসালটান্ট, আবাসিক চিকিৎসক এবং নার্স আছেন। সরকারি সহায়তা পেলে এই পরিষেবা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা অন্যদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

• সরকারি নীতি ও পদক্ষেপ: সরকার “প্রবীণ ব্যক্তি (জাতীয়) নীতিমালা ২০১৩” এবং “বাবা-মার ভরণপোষণ আইন ২০১৩” এর মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতি ও আইন প্রণয়ন করেছে। তবে, এগুলোর বাস্তবায়ন এবং পরিধি এখনও সীমিত। একটি আরও ব্যাপক এবং সমন্বিত জাতীয় নীতি প্রয়োজন, যা কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, বরং স্বাস্থ্যসেবা, আবাসন, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং প্রবীণদের অধিকারের বিষয়গুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করবে। এই নীতিতে বিশেষত উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে সরকারি স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় প্রবীণসেবা অন্তর্ভুক্ত করার একটি পরিকল্পনা থাকা উচিত।

• গবেষণা ও উন্নয়ন: বাংলাদেশের প্রবীণদের নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে গবেষণার অভাব একটি বড় শূন্যতা। পলিফার্মেসি, বার্ধক্যজনিত সিনড্রোম (যেমন, পড়ে যাওয়া ও ডিমেনশিয়া), এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট চিকিৎসার কার্যকারিতার মতো বিষয়গুলোতে তথ্য সংগ্রহ ও গবেষণার জন্য একটি জাতীয় জেরিয়াট্রিক গবেষণা কর্মসূচী প্রয়োজন।

কর্মসংস্থানের সুযোগ ও প্রশিক্ষণ

প্রবীণ চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে দক্ষ জনবলের চাহিদা বাড়ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে জেরিয়াট্রিক মেডিসিনে এফসিপিএস বা এমডি স্তরে কোনো আনুষ্ঠানিক স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নেই। এই প্রশিক্ষণ পথগুলো তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। এছাড়া তত্ত্বাবধায়কদের জন্য প্রত্যয়িত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম তৈরি করা হলে তা দেশে এবং বিদেশে উভয় ক্ষেত্রেই কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে, যা ক্রমবর্ধমান গৃহভিত্তিক সেবার চাহিদা মেটাবে।

প্রবীণদের জন্য দরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ

বাংলাদেশের জনসংখ্যায় প্রবীণদের ক্রমবর্ধমান অনুপাত একটি চ্যালেঞ্জ হলেও এটি নতুন সুযোগও তৈরি করছে। অতীতকালে অনানুষ্ঠানিক পারিবারিক যত্ন ছিল প্রধান অবলম্বন, বর্তমানে খণ্ড খণ্ড পরিষেবা বিদ্যমান। তবে, বিশ্বব্যাপী প্রবণতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, মানবসম্পদে বিনিয়োগ করে এবং একটি ব্যাপক ও সু-তহবিলযুক্ত জাতীয় নীতি প্রণয়ন করে, বাংলাদেশ একটি সুসংগঠিত এবং সহানুভূতিশীল স্বাস্থ্যসেবা মডেল তৈরি করতে পারে। এর মাধ্যমে আমরা শুধু আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করব না, বরং সমাজের প্রতি তাদের মূল্যবান অবদানকেও সম্মান জানাব এবং ২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসের প্রতিপাদ্যকে বাস্তবে রূপ দেব – যেখানে প্রবীণরা স্থানীয় ও বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবেন, তাদের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হবে, তাদের সুস্থতা নিশ্চিত হবে এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত থাকবে।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম লিমিটেড
Theme Customized BY LatestNews