1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৫২ অপরাহ্ন

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর নেই

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক: বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) মৃত্যুবরণ করেছেন। মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

বিএনপি তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান এবং খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান এই খবর নিশ্চিত করেন। একই ব্যথাজনক তথ্য বিএনপি মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হয়, “বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ সকাল ৬টায় ফজরের ঠিক পরে ইন্তেকাল করেছেন।”

খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাঁর জটিল চিকিৎসা চলছিলো ফুসফুসে সংক্রমণ, লিভার ও কিডনি জটিলতা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী অসুখের কারণে। ২৭ নভেম্বর তাঁর অবস্থা আরও সংকটময় হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত ২টায় তাঁর চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “উনি অত্যন্ত সংকটময় সময় অতিক্রম করছেন, মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে দেশবাসীর দোয়া কামনা করছি।”

খবর ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিএনপি নেতাকর্মী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাধারণ মানুষ সামাজিক মাধ্যমে বিক্ষোভ, শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করেছেন।

খালেদা জিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক জীবনে এক উজ্জ্বল পরিচয়। ১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট জলপাইগুড়িতে জন্ম নেওয়া খালেদা খানম অর্থাৎ খালেদা জিয়া রাজনীতিতে গিয়েছিলেন সংগ্রাম ও নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে। ১৯৮২ সালে বিএনপির সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশের পর তিনি দলীয় ভাইস-চেয়ারম্যান ও পরে চেয়ারম্যান হন। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে ১৯৮০-এর দশকের গণতন্ত্র আন্দোলনে অটল ভূমিকা রেখে তিনি ‘আপসহীন নেত্রী’ হিসেবে লোকমুখে পরিচিত হন।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হয়ে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে ২০০১ ও ২০০৮ সালে তিনি আবারও নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হন, এবং কোনো আসনে পরাজিত না হওয়ার বিরল রেকর্ড গড়েন। তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষা, চাকরি ও সামাজিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কার হয়, এবং ২০০৫ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় স্থান দেয়।

রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ কখনো সহজ ছিল না। পরিস্থিতি যখন কঠিন, তিনি তখনই রাজপথে নেমেছিলেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন, গৃহবন্দী হয়েছেন, কিন্তু কখনো রাজনীতি ছাড়েননি। ২০১৮ সালে বিতর্কিত এক মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়, যদিও সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে সেই রায় নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রশ্ন ওঠে।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে বর্তমানে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির আদেশে মুক্তি পান। উভয় অভিযোগ থেকে খালাস পান, তবে দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে তিনি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সশরীরে অংশ নিতে পারেননি। গত বছর জানুয়ারিতে তাঁর বড় ছেলে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে দেখা হয়েছে, যা বহুদিন পর তাদের সাক্ষাতের একটি স্মরণীয় মুহূর্ত ছিল।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, তারেকের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে জাইমা রহমান, পরিবার সদস্য ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অনেকেই হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন। চিকিৎসক, নার্সেরা কন্ঠভঙ্গ করে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়।

উন্নত বয়স, দীর্ঘ চিকিৎসা এবং নানা জটিলতার সম্মিলিত ফলেই বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক নেত্রীর জীবনাবসান ঘটে আজ সকাল ৬টায়। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দেশব্যাপী দোয়া ও শোক র‍্যালি শুরু হয়েছে।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম লিমিটেড
Theme Customized BY LatestNews