1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:

বিতর্ক, দুর্ঘটনা, সমালোচনা পিছু ছাড়ছে না হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক :    একের পর বিতর্ক প্রতিষ্ঠানটি গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে, ফেলছে অস্বস্তিতে। সর্বশেষ কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর সিলগালা করা স্ট্রংরুমের (ভল্ট) তালা ভাঙার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘটল মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা, যা ঘটিয়েছেন এক দায়িত্বরত আনসার সদস্য। তার পোশাকের ভেতরে লুকানো অবস্থায় পুরোনো মডেলের ১৫টি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

ঘটনা জেনে সেই আনসার সদস্যকে বাহিনী থেকে বহিষ্কার ও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপপরিচালক ও গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. আশিকউজ্জামান বলেছেন, আনসার সদস্যের কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধারের ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই বলছেন, আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা সদস্য রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকা নিয়েছে, যা বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সূত্রমতে, দেশের প্রধান বিমানবন্দরে প্রতি বছর লাগেজসহ হাজার হাজার চুরির ঘটনা ঘটে আসছে, যা কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। অনেকের মতে, বছরের পর বছর ধরে বিমানবন্দরে চোর ও লাগেজ সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। যাদের মধ্যে নিরাপত্তায় নিয়োজিত সদস্যরাও জড়িত রয়েছে।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সরকারি হিসাবমতে, বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন গড়ে তিনটি লাগেজ চুরি বা গায়েব হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই লাগেজ গায়েব চক্র তত্পরতা চালালেও পুরোপুরি প্রতিরোধ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভেতরে কারা, কীভাবে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে অপতত্পরতা চালাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী ও এভিয়েশন বিশ্লেষকরা। গত ১৮ অক্টোবর কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরও অগ্নিপ্রতিরোধী স্ট্রংরুমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য আমদানি করা বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল। তবে সিলগালা অবস্থায় থাকা স্ট্রংরুমে তালা ভাঙা হয়। ঘটনার ১০ দিন পর ২৭ অক্টোবর বিমানবন্দর থানায় জিডি হলে গত ৪ নভেম্বর তা প্রকাশ পায়। অনেকের আশঙ্কা, স্ট্রংরুম থেকে কয়েকটি অস্ত্র চুরি গেছে। সেই ঘটনার রেশ শেষ না হতেই কার্গো ভিলেজে ভস্মীভূত দ্রব্যের মাঝে থাকা ১৫টি বাটন ফোন লুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্য।

এর আগে বিমানবন্দরে যাত্রীর লাগেজ থেকে ৬ হাজার ৮০০ ইউরো (৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকা) চুরির ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পাঁচ কর্মীকে গত ৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার করা হয়। গত ২ আগস্ট ভারতের চেন্নাইগামী সেই যাত্রীর চেক করা লাগেজ থেকে ইউরো চুরির ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর সিসিটিভির ফুটেজ থেকে কর্মীদের শনাক্ত করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় মামলার পর আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার আগে গত ৭ জানুয়ারি ওমরাহ পালন শেষে সৌদি আরবের জেদ্দা থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরে লাগেজ খুইয়ে ফেলেন ভুক্তভোগী কাজী মোশতাক আহম্মেদ। ইমিগ্রেশনে দুই ঘণ্টা দাঁড়িয়েও লাগেজ না পেয়ে অভিযোগ দেন বিমানের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগে। শেষ অবধি লাগেজ ফিরিয়ে দিতে না পেরে বিমান কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১৯ হাজার টাকা দেয়।

তবে ভুক্তভোগীর ভাষ্য, খোয়া যাওয়া লাগেজে ১১ কেজি ওজনের বিভিন্ন সামগ্রী ছিল, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭০ হাজার টাকা। অথচ পাঁচ মাস পরে তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ১৯ হাজার ৫২০ টাকা। সেই ঘটনার পর ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন আমেরিকান নাগরিক ও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সৌদিপ্রবাসী এক যাত্রীর লাগেজ খোয়া যায়। বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহযোগিতায় পরে তারা লাগেজ ফিরে পান। এরপর ২৪ ফেব্রুয়ারি আরিফ প্রামাণিক নামে এক সৌদি আরবপ্রবাসী দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পথে দুষ্কৃতকারীরা তার টাকা ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজ থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুষ্কৃতকারীদের আটক এবং উদ্ধার করা টাকা ও মালামাল বুঝিয়ে দেয়। বিমানের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ বিভাগের সূত্রমতে, প্রতিদিন গড়ে তিনটির মতো লাগেজ চুরির অভিযোগ পাওয়া যায়। গত ছয় মাসে ৫৪০টি অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে সিভিল এভিয়েশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, বাইরে যতই কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয়। কিন্তু ভেতরে তেমন শক্তিশালী কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাই নেই। বাইরে কড়াকড়ি, ভেতরে ঢিল। ভেতরের এই প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে সিন্ডিকেট চক্রের ঔদ্ধত্য এতটা বেপরোয়া। শাহজালালে এত এত বাহিনীর স্ট্রং সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও তারা কিছুই টের পেল না! সিভিল এভিয়েশনের সিকিউরিটি চুরি-পাচারসহ অমুক করে তমুক করে বলে অ্যাবসেক বাহিনী আনা হলো। কার্যত কিছুই হচ্ছে না! শো অফ হলো। সিন্ডিকেটবাজি থামছেই না। অবশ্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ ইত্তেফাককে বলেন, ‘নিরাপত্তাবলয় ছিল বলেই চোর সফল হতে পারেনি। এটা ব্যক্তির অসাধুতা, যা কোনোভাবেই পুরো আনসার বাহিনীর পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে না। বাহিনী যথেষ্ট ভালো কাজ করছে।

ভালোদের কারণে খারাপদের এসব কর্মকাণ্ড আমরা শনাক্ত করতে পারছি।’ এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, পুরো এয়ারপোর্টের মালিকানা অনেকটা সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। সরকারের পক্ষ থেকে তারা এ দায়িত্বপ্রাপ্ত। এয়ারপোর্টের ভেতরে অন্য কোনো সংস্থার কর্তৃত্ব নেই। এর ভেতরে ভালো কিছু হলে প্রশংসা, মন্দ হলে নিন্দিত হতে হবে তাদেরই। অথচ এর ভেতরে কিছু ঘটলেই দেখা যায়, সবার মধ্যে দায়িত্ব এরিয়ে যাওয়ার সংস্কৃতি, এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ইত্তেফাককে বলেন, এভাবে একের পর অপ্রীতিকর ঘটনা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচয়ে কলঙ্কের কালিলেপন করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির নামে সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা দায় এড়াচ্ছেন এবং বিষয়টিকে বারবারই উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। আর কতটা মূল্য দিলে বিমান এদের কাছ থেকে রেহাই পাবে।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম লিমিটেড
Theme Customized BY LatestNews