
অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীতে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টারসহ চারটি প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। মামলাও দায়ের হয়েছে, তদন্ত চলছে একাধিক সংস্থার সমন্বয়ে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এসব গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গ্রেপ্তারদের মধ্যে সাতজনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে। তারা হলেন মো. কাশেম ফারুক, মো. সাইদুর রহমান, রাকিব হোসেন, মো. নাইম, ফয়সাল আহমেদ প্রান্ত, মো. সোহেল রানা ও মো. শফিকুল ইসলাম। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও গোয়েন্দা পুলিশ আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের পরিচয় যাচাই চলছে।
ঘটনার পেছনের চিত্র উঠে এসেছে ভিডিও ফুটেজ ও জিজ্ঞাসাবাদে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোববার (২১ ডিসেম্বর) প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছে, এসব ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ভিডিও বিশ্লেষণ করে অন্তত ৩১ জনকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রামে ভারতের সহকারী হাইকমিশনারের বাসভবনের কাছে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার ঘটনায়ও তিনজনকে ভিডিওতে শনাক্ত করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে কাশেম ফারুক বগুড়ার আল জামিয়া আল ইসলামিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসার সাবেক ছাত্র এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার নোয়াকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইদুর রহমান। শেরপুরের রাকিব হোসেনকে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আইডি থেকে ঘটনাস্থলের ধ্বংসস্তূপের ছবি পোস্ট করা হয় এবং উসকানিমূলক পোস্টের তথ্যও পাওয়া গেছে।
তদন্তে সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে লুটের টাকা নিয়ে। ঢাকার তেজগাঁওয়ের কুনিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. নাইমকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে এ ঘটনায় লুট হওয়া ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাইম স্বীকার করেছেন, তিনি মোট ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা লুট করেছিলেন। সেই টাকা দিয়ে মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে একটি টিভি ও একটি ফ্রিজ কেনেন, যা ইতোমধ্যে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কারওয়ান বাজার রেললাইন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. সোহেল রানার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে ঢাকার একাধিক থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অতীতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়াও এগিয়েছে। রবিবার রাত ১২টার পরে প্রথম আলো কার্যালয়ের হেড অব সিকিউরিটি অবসরপ্রাপ্ত মেজর মো. সাজ্জাদুল কবির বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন। মামলায় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীতে প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ততক্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, ঘটনার বিস্তারিত জানাতে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম সেখানে ব্রিফ করবেন।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত থাকবে।