মাদকবিরোধী অভিযান চালানোর পাশাপাশি মাদকাসক্তদের শনাক্ত করে তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। নইলে এই অভিযান নতুন করে বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে তার আশঙ্কা।
মাদকাসক্তদের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের ওই চিকিৎসক জানান, পুনর্বাসনের উদ্যোগ ছাড়া মাদক সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সামাজিকভাবে সুফল পাওয়ার বদলে ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
মাদকাশক্তি নিরাময় কেন্দ্র ‘লাইট হাউজ রিহ্যাব অ্যান্ড সাইকোটিক ট্রিটমেন্ট সেন্টার’- এর চিকিৎসক জসিম চৌধুরী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আসক্তরা প্রয়োজনের সময় ইয়াবা না পেলে অস্থির হয়ে ওঠে। এ সময় তাদের স্বাভাবিক মানসিকতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে তারা যে কোনো কিছু করে বসতে পারে।’
‘নিজের শরীরকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে এ সময় তারা ভাবে না।’
এই চিকিৎসক বলেন, ‘যদি ইয়াবা আসক্তরা ইয়াবা না পায়, প্রাথমিকভাবে তাদের ঘুম পাবে। হতে পারে সেটা ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা। এরপরেও ঘুমের রেশ না কাটলে তারা আবার ঘুমাবে। ঘুম কাটলে এরা ইয়াবা খুঁজবে। না পেলে অস্থির হয়ে উঠবে।’
‘ডিপ্রেশ চলে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সেক্ষেত্রে এরা নিজের ক্ষতি করতে পারে। নিজের শরীরের ক্ষত তৈরি করতে পারে।’
অতিরিক্ত ঘুমের এসব লক্ষণ দেখা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবকদেরকে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই চিকিৎসক।
ইয়াবার দামে ‘ঝুঁকিভাতা’, সরবরাহও কম
দেশজুড়ে আলোচিত মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্যে ভীতির মধ্যে রাজধানীতে ইয়াবাসহ সকল মাদক বিক্রেতাদের দৃশ্যমান আনাগোনা কমেছে। ঘাটতি আর ঝুঁকির কারণে ইয়াবার জন্য আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আসক্ত।
বেশি টাকা দিলেও মাদক পেতে সময় বেশি লাগছে-এমনটাও জানালেন দুই জন মাদকাসক্ত।
গত ৪ মে সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলেও রাজধানীতে ঘটা করে অভিযান শুরু হয় ২৫ মে। নগরীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প, হাজারীবাগ, কারওয়ানবাজার, সূত্রাপুর, মিরপুরের শাহ আলীর ঝিলপাড় বস্তিসহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে আটক হয়েছে কয়েকশ।
আর এসব অভিযানের পর এলাকাভিত্তিক মাদক কারবারিরা গা ঢাকা দিয়েছেন। আর এই অভিযানের পর জেনেভা ক্যাম্পের শনিবার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ক্যাম্পের মদিনা প্রিন্টিং প্রেসের কাছে দুই জন ইয়াবা বিক্রির চেষ্টা করলে জেনেভা ক্যাম্পের কয়েকজন তাদেরকে পিটুনি দেয়। মার খেয়ে ক্যাম্প ছাড়েন দুই মাদক বিক্রেতা।
ইয়াবায় আসক্ত একাধিক ব্যক্তির তথ্যমতে তবে এখনও ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়, সাত মসজিদ হাউজিং, চাঁদ উদ্যান, নবীনগর ও আদবর এলাকায়।
হাজারীবাগে ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে বউ বাজার, ঝাউচর এলাকায়।
কামরাঙ্গীচর, লালবাগ এলাকাতেও ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে বেশ গোপনীয়তার সঙ্গে। তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চললেও ফোনে ফোনে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে নাখালপাড়া, ইন্দিরা রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকার আবাসিক ভবনগুলোতেও বিক্রি হয় ইয়াবা।
তবে মোহাম্মদীয়া হাউজিং, নবোদয় হাউজিং এলাকার চিহ্নিত ইয়াবা বিক্রেতারা আত্মগোপনে। ঢাকাউদ্যান এলাকার এক মাদক বিক্রেতা ঢাকার বাইরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। তারপর থেকে ওই এলাকার ইয়াবাবিক্রেতাদের আর দেখা যাচ্ছে না।
বিক্রেতা কমলেও কমেনি ইয়াবাসেবীর সংখ্যা। বেশ কিছু দরজা বন্ধ হলেও এখনও খোলা আছে অনেক জানলা। তবে ইয়াবার দামে যোগ হয়েছে ‘ঝুঁকি ভাতা’। আতঙ্ককে দাম দিয়ে কিনছেন ইয়াবা আসক্তরা।
২০০ টাকা করে বিক্রি হওয়া ইয়াবা বড়ি এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। এক জোড়া নিলে পাওয়া যাচ্ছে ৪৫০ টাকায়।
ইয়াবায় আসক্ত মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা এক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এগুলা (অভিযান) জিনিসের (ইয়াবা) দাম বাড়াইব। কাহিনি শুরু, দামও বাড়ল। ডিলাররা সব দৌঁড়ের উপরে। জিনিসের সাপ্লাই নাই। যে মাল আছে তাও বাড়তি দামে বেচে।’
‘স্পট খোলে না, বহু কষ্টে জিনিস নেওয়া লাগে। ফোন দিলে দুই ঘণ্টা পর জিনিস পাওয়া যায়। এত প্যারা ভাল লাগে না।’
‘জ’ অদ্যাক্ষরের অপর এক ইয়াবা সেবনকারী বলেন, ‘আপনের কি মনে হয় প্রশাসনরে টাকা না দিয়া স্পট চালান যায়? ব্যাডারা রাস্তায় চা বেচে, তাতেই দিনে ১০ টাকা দেওয়া লাগে। আর এইডা তো বাবা (ইয়াবা)।’
এখন ইয়াবা কীভাবে যোগাড় করছেন-জানতে চাইলে এই আসক্ত বলেন, ‘এহন একটু চাপ পরছে তো, কী করব? নিজেরা চাইপা গিয়া আমগোরে ফাসাইতাছে। কয়জন ডিলার ধরা পরে? যেগুলায় কিনতে যায়, ওগুলারে নিয়া যায়।’
‘ডিলার সব ধরা পরলে আমরা মাল পামু কই? অভিযান কয়দিন চলব? তারপর তো আবার হ্যাগো টাকা লাগব। তাই, নরমাল পোলাপানগুলারে নিয়া আটকাইতাছে।’