চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আরো ১৮ জন বিকাশ এজেন্টকে ধরতে সারা দেশে অভিযানে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই ১৮ জনের মধ্যে ১০ জনই হচ্ছে পাবনা জেলার। আর বাকি ৮ জন ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার। এ চক্রটি প্রায় ২ কোটি টাকা তাদের মোবাইল ব্যাংকিং-এ অস্বাভাবিকভাবে লেনদেন করেছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রাপ্য রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচারের কারবারের সঙ্গে জড়িত ওইসব দোকানগুলো বন্ধ রয়েছে।পুলিশের ধারণা, তারা তাদের সহকর্মীদের পুলিশের হাতে ধরা পড়ার খবর পেয়ে পালিয়েছে। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও বিকাশ নম্বরে টাকা পাচার করা হতো সেগুলোও বন্ধ রয়েছে। এ চক্রের সঙ্গে আরো অনেক এজেন্ট জড়িত রয়েছে বলে ধারণা সিআইডির। পলাতকদের গ্রেপ্তার আর নতুন যেসব চোরাকারবারি রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সিআইডির পক্ষ থেকে। গত বুধবার রাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে টাকা চোরাকারবারিতে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং আইনে ৮টি মামলা করেছে।
এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে সিআইডির (মুখপাত্র) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, একটি চক্র বিদেশ থেকে প্রবাসীদের টাকা মোবাইল এজেন্টকে ব্যবহার করে বাংলাদেশ নিয়ে আসছে এমন একটি তদন্ত প্রতিবেদন উঠে আসে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) একটি প্রতিবেদনে। সিআইডির পক্ষ থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হয়। তদন্ত অনুযায়ী ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আরো জানান, এ চক্রের সঙ্গে আরো ১৮ জন জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশ তাদের খুঁজছে। এদের গ্রেপ্তার করা গেলে এ চক্রের রথি ও মহারথি কারা তা জানা যাবে। এ ছাড়াও এ চক্রের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তাদেরও চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত সিআইডির একজন এএসপি জানান, বাংলাদেশে মোট প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ মোবাইল ব্যাংকিং গ্রাহক রয়েছে। তবে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এর প্রায় ৮০ হাজার এজেন্ট রয়েছে।
সূত্র জানায়, গত দেড় বছরে অস্বাভাবিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল সিআইডির কাছে। সেখানে ২৮৮৬ জন মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের অস্বাভাবিক লেনদেনের বিষয়টি তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে বলা হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে পুলিশ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
সূত্র জানায়, এই চক্রের সদস্যরা গত দুই বছর মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে চোরাকারবারির কাজ করে যাচ্ছিল। তারা সারা বাংলাদেশসহ বিদেশে অবস্থানরত তাদের পরিচিত হন্ডি ব্যবসায়ীদের মধ্যে লিয়াজোঁ করে তৈরি করেছে বিশাল এক নেটওয়ার্ক। তারা রাতের বেলায় বিকাশের ক্যাশইন এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতো। মোবাইল এজেন্টের জন্য ব্যবহৃত নম্বরগুলোতে মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের যেসব শ্রম বাজার রয়েছে সেখান থেকে তাদের পরিচিত জনেরা শুধু এসএমএস পাঠাতো। তখন এদেশে থাকা তাদের লোকজনকে টাকা পরিশোধ করতো। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার প্রাপ্য রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হতো। সূত্র জানায়, এ চক্রটি শুধু টাকা চোরাকারবারিতে জড়িত নয়, তারা মাদকসহ বিভিন্ন অবৈধ পণ্যের টাকা লেনদেনে জড়িত। এ চক্রের সঙ্গে ২৫ জন জড়িত। তার মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরো ১৮ জন এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তাদের ধরতে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
সূত্র জানায়, সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে যে ২৫ জন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত তাদের মধ্যে আবার একটি লিয়াজোঁ রয়েছে। বিদেশ থেকে আসা বিভিন্ন এসএমএসগুলো তারা একে অপরকে আদান-প্রদান করতো। এতে তাদের মধ্যে একটি বড় নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল। পলাতক ১৮ জনের মধ্যে ১০ জন পাবনা জেলার। চার জন চট্টগ্রাম, চার জন মাদারীপুর এবং দুই জন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার। একজনের সঙ্গে আরো পাঁচ থেকে ছয় জন সক্রিয়ভাবে কাজ করতো। বিদেশ থেকে যাদের নামে টাকা পাঠানোর এসএমএস আসতো সেই এসএমএস অনুযায়ী তারা টাকা সরবরাহ করতো। তাছাড়াও এ চক্রের সদস্যরা মাদকের টাকা লেনদেনও জড়িত বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ চক্রের যোগসূত্র রয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের তাদের দালালদের দিয়ে সীমান্তে মাদক নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতো। পরে এ এজেন্টদের মাধ্যমে তারা এসএমএস দিয়ে টাকা পরিশোধ করতো। পলাতক এমন একটি ভয়ঙ্কর চক্রকে গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে সিআইডি।