আলমাস হোসেন: শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ভূমি অফিসে লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। গ্রাহকরা পাচ্ছেন ডিজিটাল অনলাইন সেবা। গ্রাহকরা খুব সহজেই মিসকেইসের নোটিশ গ্রহন থেকে শুরু করে জমি সংক্রান্ত সকল ধরনের সেবা পাচ্ছেন অনলাইন ও ডাকযোগে। সুবিন্যস্ত ও সুসজ্জিত করা হয়েছে আশুলিয়া ভূমি অফিসের রেকর্ড রুম । সার্বক্ষণিক সিসি টিভি ক্যামেরায় মনিটর করা হচ্ছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের, রয়েছে ডিজিটাল হাজিরা মেশিন। গ্রাহকদের ভুগান্তি কমাতে ২০১৬ সাল থেকে অদ্যাবধি যে কোন জমি জমার রেকর্ড ডাটাবেজের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে সেখানে। মৌজার নাম, দাগ নাম্বার এবং সন তারিখ লিখে সার্চ করলেই জমির হাল হকিকত সব জানা যাচ্ছে। সেবা প্রত্যাশীরা ঘরে বসেই অনলাইনে জমির মিসকেইস ও রেকর্ড পর্যালোচনা করতে পারছেন।
একসময় ভূমি অফিসটিতে দালালের দৌরাত্ব সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ এবং জিম্মি হয়ে পড়েছিলো। দালালরা কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছত্রছায়ায় দালালী করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিতো লাখ লাখ টাকা। দালালদের চাহিদা মাফিক অর্থ দিয়েও প্রতারিত হতে হয়েছে অনেক সেবা গ্রহীতাকে। আশুলিয়া ভূমি অফিসের সামনের ল’চেম্বার ও চায়ের দোকানগুলোতে আগে প্রতিদিন দালালদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখনকার চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অফিসের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাজহারুল ইসলাম দায়িত্ব গ্রহণ করেন ২০১৭ সালের পহেলা নভেম্বর। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ভূমি অফিসটিতে দালালী ও দুর্নীতি বন্ধে তিনি গ্রহণ করেছেন নানা পদক্ষেপ। বর্তমানে অফিসটি অনেকটাই দালাল মুক্ত হয়েছে। জানা গেছে, দালালী ও দুর্নীতি বন্ধে তিনি নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। অনলাইনে ডিজিটাল সেবা প্রদান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় গ্রাহক হয়রানী বহু গুনে কমে গেছে। এতে এর সুফল পেতে শুরু করেছেন গ্রাহকরা। পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। কমে গেছে দালাল ও অসাধু চক্রের দৌরাত্ব।
ধামসোনা ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের আবুল খায়ের, মাসুদ মিয়া, মোঃ জুয়েল, রিজু সরকার, হাবিল উদ্দিন, গোহাইলবাড়ী এলাকার মোঃ ইউসুফ আলী, বাশবাড়ী এলাকার আলাউদ্দিন, মরিয়ম ও রাকিবুল ইসলাম জানান, আগে ভূমি অফিসে দালালদের ভীড় লেগেই থাকতো। দালালদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে কোন কাজই হতোনা। আর এখন কোন ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই মাত্র ১১৫০ টাকায় নামজারী সম্পন্ন করেছেন তারা।
আশুলিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার মোঃ লুৎফর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত এক বছর যাবত গ্রাহকদের ডিজিটাল অনলাইন সেবা দিয়ে আসছি। নামজারীর জন্য ৪৫ দিন নির্ধারিত থাকলেও আমরা গ্রাহকের সুবিধার্থে ৩০ দিনেই তা সম্পন্ন করে দিচ্ছি। আশুলিয়া ভূমি অফিসে এসিল্যান্ড অফিসার মাজহারুল ইসলাম স্যার যোগদানের পর পরই তিনি সার্ভেয়ার, অফিস সহকারীসহ ভূমি অফিসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে মিটিং করেছেন। তিনি আমাদের বলেছেন কোন দালাল চক্র যেন ভূমি অফিসে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া কোন সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে যেন কোন ভাবেই সরকারী নামজারীর ১১৫০ টাকার অতিরিক্ত গ্রহন করা না হয়। আমরা স্যারের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি এবং দালালদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। আর সেজন্যই দালালরা আজ আমাদের উপর ক্ষিপ্ত বলেও তিনি জানান।
এদিকে আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মাজহারুল ইসলাম বলেন, আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলে প্রথম দিকে দাপ্তরিক জটিলতা ছিলো। তবে বর্তমানে অফিসটিতে ছন্দ ফিরে এসেছে। এ অফিসে কাজের জন্য কোন দালালের দরকার নেই। অনলাইনের পাশাপাশি যে কোন ব্যক্তি আমার সাথে সরাসরি দেখা করে সেবা নিতে পারছেন। দালালী, ঘুষ বাণিজ্য ও অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।