জমে উঠেছে এবারের ঈদ-বাজার। আজ শুক্রবার পা ফেলার জায়গা ছিল না রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী নিউমার্কেট ও গাউছিয়া এলাকার বিপণিবিতানগুলোতে। ব্যতিক্রম ছিল না অভিজাত শপিং কমপ্লেক্স বসুন্ধরা সিটি। ক্রেতা সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে কেনাকাটার ধুম লেগেছে এসব বিপণিবিতানে।
শুক্রবার রমজান মাসের অর্ধেক ছাড়িয়েছে। তার ওপর ছিল ছুটির দিন। সকাল থেকেই মার্কেটমুখী হয়েছে রাজধানীবাসী। ঈফতারের পর ভিড় আরও বাড়ে। নারী ক্রেতার সংখ্যাই বেশি। পুরুষ ক্রেতার সংখ্যাও কম নয়। তবে তাদের আগমন বাড়ে বিকেলে ও সন্ধ্যার পর।
নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, চাঁদনি চক, নূর ম্যানশন শপিং কমপ্লেক্সসহ ডজন খানেক মার্কেট রয়েছে। দেশের অন্যতম ব্যস্ত এই মার্কেটগুলোতে ক্রেতা আনাগোনা প্রায় সারা বছরই থাকে। ঈদ সামনে রেখে এখন বেচাকেনার ধুম লেগেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, মূলত এবারের ঈদের বেচাকেনা শুরু হলো আজ। বিগত দিনগুলোতেও কমবেশি বিক্রি হয়েছে। সে তুলনায় আজ মার্কেটগুলোতে অনেক বেশি বেড়েছে দর্শনার্থীর সংখ্যা। কেবল দর্শনার্থী নয়, বেড়েছে ক্রেতাও। আর তাদের প্রায় ৭০ শতাংশ নারী।
সাধারণত শবেবরাতের পর থেকেই ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়ে যায় বিশেষ করে গাউছিয়া ও চাঁদনি চক মার্কেটে। নারীপণ্যের মার্কেটটিতে পাওয়া যায় তাদের প্রয়োজনের সবকিছু। সব ধরনের পোশাক, কসমেটিকস, গহনা থেকে শুরু করে জুতা। এক ছাদের নিচে সবকিছু মেলে। রাজধানীর অন্যান্য বড় আধুনিক শপিং কমপ্লেক্সের চেয়ে এখানে দাম তুলনামূলক কম।
গাউছিয়া মার্কেটে ঈদের শপিং করতে আসা পিংকি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সামনে ঈদ। মার্কেটে তো আসতেই হবে। দেখছি, কিনছি। এটাই আনন্দ। কয়েকটা ড্রেস নিয়েছি। আরো দেখছি। ফ্যামিলি মেম্বার অনেক। তাই আরো বেশ কয়েকবার মার্কেটে আসতে হবে।’
দামের প্রসঙ্গে পিংকি বলেন, ‘দাম কখনো কমে? গত বছরের চেয়ে তিন-চার শ টাকা বেড়েছে প্রতি ড্রেসে। অনেক দোকানদার খুব উল্টাপাল্টা দাম চাচ্ছে। কিন্তু চাইলেই তো আর দিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। অনেক দোকান আছে। বাছ-বিচার করে কিনছি।’
তবে এবার মার্কেটগুলোতে ভারতীয় পোশাকের আধিক্য কম বলে দাবি করছেন বিক্রেতারা।
গাউছিয়ার একজন বিক্রেতা মো. গাউস ঢাকাটাইমসকে বলেন, ভারতীয় পোশাকের কারণে গত বছর দেশীয় পোশাক তেমন বিক্রি হয়নি। এবার চিত্র ভিন্ন।
গাউস বলেন, ‘ইন্ডিয়ান ড্রেসের জন্য সমস্যা হয়। গত বছর কি হইছে তা আপনারা জানেন। এবার এখনো ইন্ডিয়ান ড্রেসের চাহিদা কম। দেশি থ্রি-পিছ, শাড়ির ভালো চাহিদা আছে। রোজার আগে থেকেই ভালো বেচাকেনা করছি। এভাবে চললেই আমরা খুশি।’
এতদিন কেবল নারীদের আনাগোনা থাকলেও আজ পুরুষেরও আনাগোনা বেড়েছে। বেড়েছে বিক্রি। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু।
বিক্রেতাদের দাবি, রমজান শুরুর পর আজ খরা কাটল। রমজানের ১৫তম দিনে শুরু হয়েছে এবারের ঈদের বেচাকেনা। হাসি ফুটেছে বিক্রেতাদের মুখে।
বিক্রেতা মো. মোস্তফা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আজ আসল বেচাকেনা শুরু হয়েছে। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে ভালো বেচাকেনা হবে। এখন থেকে চাঁদ রাত পর্যন্ত কাস্টমার থাকবে। দামও কম আছে। আমরা কোনো অতিরিক্ত দাম নিচ্ছি না।’
দামের বিষয়ে ক্রেতাদের খুব বেশি অভিযোগ পাওয়া গেল না। বন্ধুদের সঙ্গে প্যান্ট কিনতে এসেছেন মারুফ। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, “পাঞ্জাবি আর প্যান্ট দেখছি। কেনার জন্যই এসেছি। ভালো কিছু কালেকশন চোখে পড়ল। আর একটু দেখি, আরো ভালো কিছু যদি পাওয়া যায়! দাম তেমন বেশি না। তবে চাওয়ার সময় কে কম চায়? নেয়ার ক্ষেত্রে একটু দামাদামি করে নিলেই হয়।’
নিউমার্কেট এলাকায় নিরাপত্তা ও শঙ্খলা রক্ষায় বসানো হয়েছে তিনটি পুলিশ কন্ট্রোল রুম। ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। চুরি-ছিনতাই বা যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মার্কেটের ভেতরে ও বাইরে চলছে টহল। অবৈধ পার্কিং রোধেও কাজ করছে পুলিশ।
চাঁদনি চক শপিং কমপ্লেক্সের সামনের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত নিউমার্কেট থানার এসআই শহিদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। নারীদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আমাদের ১০ জন নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছেন।’