দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে আরও ১১ মাদক বিক্রেতা গুলিতে নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে নয়জন নিহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে। আর দুইজন নিহত হয়েছেন নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে।
এর মধ্যে কুমিল্লা, কুষ্টিয়া ও যশোরে দুইজন করে এবং ঢাকার দক্ষিণখান, ময়মনসিংহের ভালুকা ও ঠাকুরগাঁওয়ে একজন করে নিহত হয়েছেন পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া এবং সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যারা নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য।
সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এই অভিযোগে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১৯ জনে।
পুলিশ ও র্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী নিহতরা সবাই মাদক কারবারে জড়িত। তাদের সবার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদকবিরোধী আইনে মামলা আছে। ঢাকাটাইমসের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।
রাজধানী
রাত সাড়ে ১২টার দিকে দক্ষিণখানের আশিয়ান সিটির মাঠে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হয়েছেন। তার নাম সুমন ওরফে খুকু সুমন। তিনি ওই এলাকার একজন চিহ্নিত ‘মাদক বিক্রেতা’ এবং তার বিরুদ্ধে থানায় মাদক আইনের চারটি মামলা রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার নূরুল আলম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের একটি দল রাতে আশিয়ান সিটির মাঠে অভিযানে যায়। পুলিশ সেখানে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।
কিছুক্ষণ পর তারা পিছু হটলে ঘটনাস্থলে খুকু সুমনের লাশ পাওয়া যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, চারটি ককটেল এবং এক হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
কুমিল্লা
জেলায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মাদক চোরাকারবারে জড়িত দুইজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন লিটন ওরফে কানা লিটন এবং বাতেন।
সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জর এলাকায় গোমতী প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশে ভাই ভাই ব্রিক ফিল্ডের সামনে এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি পাইপগান ও ৪০০ বোতল ফেন্সিডিল।
নিহত লিটন উপজেলার পৈয়াপাথর এলাকার আবদুস ছামাদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে সাতটি মাদকের মামলা রয়েছে। এবং বাতেন একই উপজেলার বাখরনগর গ্রামের সহিদ মিয়ার ছেলে। তার বিরুদ্ধেও আটটি মাদকের মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম মঞ্জুর আলম জানান, রাতে মুরাদনগর উপজেলার গুঞ্জুর এলাকায় গোমতী বাঁধের পাশে মাদক উদ্ধার করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক কারবারি কানা লিটন ও বাতেন নিহত হয়। আহত হয় থানার এসআই মোজাম্মেল, এএসআই রোকন ও এএসআই মাসুদুর রহমান।
এই নিয়ে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে গত এক সপ্তাহে কুমিল্লায় মোট ১২জন মাদক কারবারি পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হলেন।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মোকাদ্দেশ হোসেন ও ফজলুর রহমান টাইটেল নামে দুইজন নিহত হয়েছেন, যারা মাদক কারবারি বলে দাবি করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। এ সময় পুলিশের চার সদস্যও আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ অস্ত্র, গুলি ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে।
সোমবার দিবাগত তিনটার দিকে দৌলতপুরের শিয়ালা মাঠে এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ দারা খান।
নিহতদের মধ্যে মোকাদ্দেশ হোসেন দৌলতপুর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ এলাকার রেজাউল হকের ছেলে এবং ফজলুর রহমান টাইটেল একই উপজলার প্রাগপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে। দুজনই মাদক কারবারে জড়িত বলে দাবি করছে পুলিশ।
ঠাকুরগাঁও
জেলার হরিপুরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে হারুন নামে এক মাদক কারবারি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে এই জেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা চারজনে দাঁড়ালো। মঙ্গলবার ভোরে জেলার হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকায় এই বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
নিহত হারুন হরিপুর উপজেলার শীতলপুর এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে।
‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক কারবারি হারুন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুহুল কুদ্দুস বলেন, নিহত হারুনের বিরুদ্ধে হরিপুর থানায় মাদকবিরোধী আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় জনি মিয়া নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি আখাউড়া পৌরশহরের রেলওয়ে পূর্ব কলোনির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। জনি কুমিল্লা দেবিদ্বার উপজেলার খয়েরবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মিয়ার ছেলে।
মঙ্গলবার ভোরে পৌর শহরের খালাজোড়া-কল্যাণপুর সড়কের জনৈক কুদ্দুস মিয়ার কাঠ বাগান এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
আখাউড়া থানার ওসি মোশারফ হোসেন তরফদার বলেন, পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকায় ডাকাতদলের গোলাগুলির খবর পেয়ে সেখানে যায় পুলিশ। এ সময় তল্লাশি করে জনৈক কুদ্দুস মিয়ার কাঠ বাগানে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জনির লাশ পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও দেশে তৈরি বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।
জনির বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে নয়টি মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি মোশারফ।
সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরায় এক মাদক বিক্রেতার গুলিবিদ্ধ গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে দেয়াড়া ইউনিয়নের পিছলাপোলের মাঠে মাদক চোরাচালানিদের দুটি বিবাদমান গ্রুপ মাদক ভাগাভাগি করছে এমন খবর পেয়ে সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারিরা পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।
এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে একটি দেশি পিস্তল, দুই রাউণ্ড গুলি ও ৭০ ইয়াবা। নিহতের নাম আনিছুর রহমান (৪৫)। তিনি সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের মৃত সুরত আলী গাজীর ছেলে। তবে নিহতের স্ত্রী নাজমার দাবি কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে পুলিশ আনিছুরকে গুলি করে হত্যা করেছে।
ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শীর্ষ মাদক বিক্রেতা ও একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি মিজান (৪৫) নিহত হয়েছে। সোমবার রাত দুইটার দিকে ভালুকা থানাধীন পাড়াগাঁও চটনপাড়া সামাদ ফকির বাড়ীর পাকা রাস্তার পাশে মাদক ভাগাভাগি হচ্ছে এমন খবরে ময়মনসিংহ ডিবির ওসি আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে এবং ভালুকা থানার পরির্দশক (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম নেতৃত্বে একটি দল যৌথ অভিযান চালায়। এসময় যৌথবাহিনীর সঙ্গে মাদক কারবারিদের বন্দুক যুদ্ধে মিজান মারা যান। এসময় দেশিয় অস্ত্রসহ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। মিজানের বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, ডাকাতিসহ ৮-৯টি মামলা আছে।