নির্মম মৃত্যুর পর আদরের সাত বছরের ছেলের সব অঙ্গ অন্যের জীবন বাঁচাতে দান করে দিয়েছেন মা। ১৩ নভেম্বর নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসে এই ঘটনা ঘটেছে।
নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ নভেম্বর সাউন্ডভিউ এলাকার ব্রঙ্কস রিভার হাউসেসের বাসার ১০ তলার জানালা দিয়ে নিচে পড়ে যায় কিংস্টোন স্পেনসার নামের সাত বছর বয়সী ওই শিশুটি। পরে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় জ্যাকোবি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ১৩ নভেম্বর তার মৃত্যু হয়। সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে যান কিংয়ের মা রোজি মানসেবো। পরে নিজের ও সন্তানের আত্মার শান্তির জন্য তিনি কিংয়ের সব অঙ্গ অন্যের সেবায় দান করে দেন। তার অঙ্গ দিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশুসহ পাঁচজনের জীবন রক্ষা হবে।
কিংয়ের মা রোজি মানসেবো বলেন, ‘যদি আপনি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন, তাহলে অন্যদের নিয়েও আপনাকে ভাবতে হবে। আপনার খুব কষ্টের মুহূর্তেও তা ভাবতে হবে।’
রোজি মানসেবো আরও বলেন, ‘কিং তো বয়স সাতেই আটকে গেল। কিন্তু আমরা তা চাই না। আমরা চাই সে অন্যের জীবনে আরও অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকুক। আর আমাদের সন্তান কিং আমাদের কাছে অনেক অনেক বছর বেঁচে থাকার আবদার করেছিল। তাহলে আজ আমরা কেন তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করব না?’
পুলিশের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কিং শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিল। তারা পুরো পরিবার কিছুদিন আগেই একটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ওই বাসায় উঠেছে। ঘটনার দিন সকালে কিং ১০ তলার জানালার কাছ থেকে একটি কার্ডবোর্ড সরাতে গিয়ে পিছলে নিচে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। এ কারণে ছেলে কিংয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে তেমন কিছু জানাননি ৩৮ বছর বয়সী মানসেবো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত কিংয়ের ১২ ও ১৯ বছর বয়সী দুই বোন রয়েছে। তারা সবাই মা মানসেবোর সঙ্গেই থাকত। মানসেবো হান্টার কলেজে স্প্যানিশ ও ইংরেজি অনুবাদের শিক্ষার্থী।
কিংয়ের অঙ্গ ‘লাইভ অন এনওয়াই’ নামে নিউইয়র্কের একটি অলাভজনক অঙ্গ দান গ্রুপের কাছে দেওয়া হয়েছে। তার দান করা অঙ্গ দিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ও শিশুসহ পাঁচজনের জীবন রক্ষা হবে।
মানসেবো বলেন, ‘আমার ছেলে আমার পুরো অস্তিত্ব পরিবর্তন করে দিয়েছে। তার সব অঙ্গই তো দান করে দিলাম। তবে একটা বিশেষ অংশ নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। সেটা হলো কিংয়ের হাসি। যেটা আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে।’