ফরিদপুর: জেলার আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে জিন্নাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) সকালে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মুজিব সড়কে এ মানববন্ধনে নিহত জিন্নাতের বয়োবৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ৫ বছরের শিশু কন্যা কান্নাজড়িত কন্ঠে জিন্নাত হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা দেয়। তারা জিন্নাত হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানায়। আসামিরা পাল্টা মামলা দায়ের এবং সাক্ষিদের হুমকি দিচ্ছে বলে জানা যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শিশু কন্যা জাকিয়া মানববন্ধনে মায়ের কোলে ছিল। তাঁর দু’চোখ বেয়ে ঝরছিল অশ্রু। আসামিদের নাম উল্লেখ করে জাকিয়া ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে পিতা হত্যার বর্ণনা দেয়। জাকিয়া বলে, আব্বারে ওরা আমার সামনেই কুপাইয়্যা মারছে। মা ঠেকাইতে গেছিল। মা-রেও মারছে।
স্ত্রী নুরুননাহার বিলাপ করে বলেন, পরিবারের সবার সামনে তাঁর স্বামীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্বামীকে বাঁচাতে অনেক অনুনয় বিনয় করলেও পাষানদের মন গলেনি। আমি ঠেকাতে গেলে আমাকেও মেরেছে। আমি ওদের ফাঁসি চাই। একইভাবে বিলাপ করছিল মা মহিরুননেসাও। সত্তোরোর্ধ বৃদ্ধা মহিরুননেসা জানান, তাঁর ছেলে শান্তশিষ্ট ও নিরীহ প্রকৃতির ছিল।
নিহতের চাচা পিজিরুদ্দিন মোল্যা বলেন, হত্যার পর আসামিরা নিজেরাই তাদের বাড়ির মালামাল সরিয়ে নেয়। পরে পাল্টা ডাকাতি মামলা দেয়ার জন্য পুলিশের নিকট মিথ্যা অভিযোগও করে।
জিন্নাত হত্যা মামলার স্বাক্ষি জুয়েল মিয়া (২৪) অভিযোগ করে, মামলার আসামি মুসা মোল্যার মেয়ে জামাই শহরের লক্ষিপুরের বাসিন্দা জিয়াদ তাকে ও তার ভাই রাজু আহম্মেদ (৩২) কে হুমকি দিচ্ছে। আসামিদের বিরুদ্ধে সাক্ষি দিলে তাদেরকে গ্রামের বাইরে বের হতে দেয়া হবে না বলে হুমকি দিচ্ছে তারা।
মানববন্ধনে বোয়ালমারী মহিলা পরিষদের সম্পাদিকা হাসিনা বেগম বলেন, নিহত জিন্নাতের বিধবা স্ত্রী, বোন ও মাসহ পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৯ সেপ্টেম্বর রামদা, ছ্যানদা, লোহার রড, ঢাল-সড়কি, বল্লম ও বাঁশের লাঠিসহ সশস্ত্র একদল সন্ত্রাসী জিন্নাতের বাড়ির আঙিনায় এসে কুপিয়ে ও পিটিয়ে জিন্নাতসহ তাঁর চাচা গোলাম রব্বানী মোল্যা, চাচাত ভাই কামরুল ও স্ত্রীকে আহত করে। গুরুতর আহত জিন্নাতকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণের পর ১১ সেপ্টেম্বর সে মারা যায়।
ঘটনার পরপরই পুলিশ অস্ত্রশস্ত্রসহ জড়িত সেলিমুজ্জামান ওরফে সেলিম (৫২), ওবায়দুর মোল্যা (৩৮), সাবু (২৮) ও সাহাবুদ্দিন (২২) কে আটক করে। আটককৃত ৪ জনসহ মোহাম্মদ (৪০), নয়ন (২৫), সবুজ (২৭), মুসা মোল্যা (৫৫) ও তার দুই ছেলে রাব্বি (২৫) ও রনি (৩০), আরফিন মোল্যা (৬০), ইব্রাহিম (২৭), শান্ত (২৫), মান্নান মোল্যা (৫৫), রমিন (২৫) ও মঞ্জুর মোল্যাসহ (৪৫) অজ্ঞাতনামা আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে আলফাডাঙ্গা থানায় এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়।