পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্রীকরণে প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া। এছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসতে এখনও আগ্রহী উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। মাত্র চার সপ্তাহের ব্যবধানে শনিবার বিকালে দুই কোরীয় নেতার দ্বিতীয়বার বৈঠকের পর এসব কথা বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন। এছাড়া ১২ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা নির্ধারিত সময়েই হবে বলে আশাবাদী দুই কোরিয়া।
রবিবার সকালে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান জানিয়ে এসব কথা বলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে পরমাণু অস্ত্র সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্রীকরণের পূর্ণাঙ্গ কোনো ব্যাখ্যা দেননি তিনি। খবর ওয়াশিংটন পোস্টের।
আগামী মাসের ১২ তারিখে সিঙ্গাপুরে কিম জং উনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা কয়েক দফা উত্তর কোরিয়া সফরও করেন। এছাড়া কোরীয় উপদ্বীপে শান্তি ও ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক উপলক্ষে দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ফলপ্রসু বৈঠকও করেন উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন। এই দুই নেতার বৈঠকের ব্যাপারে আশার সঞ্চার হলে গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে বৈঠক বাতিলের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বৈঠক বাতিলের পেছনে তিনি উত্তর কোরিয়ার শত্রু মনোভাবকে দায়ী করেন।
ট্রাম্পের এমন ঘোষণায় তীব্র সমালোচনা করে উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যেকোনো সময় বৈঠকে বসার আগ্রহের করা জানায়।
ট্রাম্পের বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করে বৈঠকের মধ্যস্ততাকারী দেশ দক্ষিণ কোরিয়াও। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ফ্রান্স ও ব্রিটেন ট্রাম্পের বৈঠক বাতিলের সিদ্ধান্তকে পুনর্বিবেচনা করতে বলে। এরপর গত শুক্রবার ট্রাম্প সুর বদল করে কিম জংয়ের সঙ্গে তার বৈঠক হতে পারে বলে জানান।
দুই দেশের বৈঠক নিয়ে যখন অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে, ঠিক তখনই আবারও দুই কোরিয়ার সীমান্তের মাঝখানে অসামরিক এলাকা পানমুনজমে জরুরি বৈঠক করেন কিম জং ও মুন জায়ে। মূলত ট্রাম্পের সঙ্গে কিমের সঙ্গে বৈঠক কেমন হবে এবং কিভাবে এর আয়োজন হবে এসব বিষয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর।
দীর্ঘ কয়েক দশকের বৈরিতার প্রেক্ষাপটে এই বৈঠক তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ দুই কোরিয়ার নেতাদের মধ্যে এনিয়ে মুখোমুখি বৈঠক হয়েছে মাত্র চার বার।
সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের এক যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিবাদ জানায় উত্তর কোরিয়া। তারপর থেকে দুদেশের মধ্যে আবারও বৈরিতা বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিকে নিয়ন্ত্রণে আনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যে শনিবারের এই বৈঠক এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে আভাস পাওয়া যায় যে দুই কোরিয়া একসাথে কাজ করার একটা পথ বের করতে চায়।
সমস্যা হচ্ছে কোরিয়া উপদ্বীপকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করার ব্যাপারটিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়া ভিন্ন ভিন্ন ভাবে দেখছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা চান উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি এবং অস্ত্রগুলোর পূর্ণ বিলুপ্তি। কিন্তু উত্তর কোরিয়া বলছে, তাদের পরমাণু অস্ত্র ত্যাগ করার বিনিময়ে ওয়াশিংটনকেও সমতুল্য কিছু একটা করতে হবে। খবর বিবিসির।
যুক্তরাষ্ট্রের বড় আকারের সামরিক উপস্থিতি আছে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ায়। উত্তর কোরিয়া আশা করছে যে এর মাত্রা কমানো হবে এবং এই নিশ্চয়তা দেয়া হবে যে রাষ্ট্র হিসেবে তার অস্তিত্ব এবং তাদের নেতৃত্ব কখনোই বিপন্ন হবে না।
কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা সমাধানের কর্মপন্থা হিসেবে লিবিয়া মডেলের উল্লেখ করার পর উত্তর কোরিয়া ক্ষিপ্ত হয়। লিবিয়ার নেতা গাদ্দাফি তার পরমাণু কর্মসূচি ত্যাগ করার কয়েক বছর পর পশ্চিমা-সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতেই নিহত হন।