1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:
জাতীয় সংসদ ভবনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সিন্ধু নদে হয় পানি বইবে নাহয় ভারতীয়দের রক্ত: বিলওয়াল ভুট্টো জারদারি কাশ্মির ইস্যু ও ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা; যা বললেন ট্রাম্প রাঙামাটির কাউখালীতে পিকআপ ও সিএনজি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত রাজশাহীতে আগুনে পুড়ে ছাই ৮০ কৃষকের ২০ বিঘা পানের বরজ পর্দায় অনুপস্থিত আরিফিন শুভ ফিরলেন স্বরূপে কুয়েট উপাচার্য ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য ড. শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত এলাকা থেকে শতাধিক ককটেল ও পেট্রোল বোমা উদ্ধার করেছে বিজিবি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১০টি দোকান পুড়ে গেছে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটায় বাসচাপায় মা ও তার শিশু সন্তান নিহত

দূষণের শিকার দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ নদী

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : শনিবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৮

রিয়াদুল ইসলাম (আফজাল): নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও কল-কারখানার বর্জ্যে দেশের সব নদীই মাত্রা ছাড়িয়েছে। যদিও নদী দূষণ রোধে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
কারখানায় বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (ইটিপি) স্থাপন বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও থামছে না নদী দূষণ। পরিবেশ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের প্রধান নদীগুলোর দূষণ নিয়ে এক গবেষণায় মতে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়েছে ঢাকার বাইরের নদীগুলোও। নদীর পানি ও তলদেশে জমে থাকা মাত্রাতিরিক্ত ভারি ধাতু খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুস, কিডনি, লিভার ও হার্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্ণফুলী নদীর পানিতে ভারি ধাতুর উপস্থিতি ইতিমধ্যে মাত্রা ছাড়িয়েছে। কর্ণফুলীর উপকূলের পানিতে আর্সেনিক, লৌহ, সিসা ও ক্যাডমিয়াম সহনীয় মাত্রার উপরে অবস্থান করছে। একই অবস্থা দেশের প্রায় সব নদ-নদীরই। কোনো কোনো নদীর পানিতে সীমা ছাড়ানো লৌহের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কোনোটিতে আবার ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি অস্বাভাবিক। সিসা, ক্যাডমিয়াম, আর্সেনিক ও ক্রোমিয়ামের মতো ভারী ধাতুও আছে সহনীয় মাত্রার উপরে।
সূত্র জানায়, দূষণে সব নদীকে ছাড়িয়ে গেছে বুড়িগঙ্গা। শিল্পবর্জ্য ও কীটনাশকের কারণে নদীটির মাছ, পানি দূষিত হচ্ছে। সবচেয়ে সাধারণ দূষণ হলো ধাতু দূষণ। ওই নদীর পানিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। ওই মাত্রা আন্তর্জাতিক মান তো বটেই, স্থানীয় মানমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে। বুড়িগঙ্গা নদীর পানি, মাছ কোনোটাই মানবস্বাস্থ্যের অনুকূলে নেই। আর বুড়িগঙ্গার পরই সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার শীতলক্ষ্যা। রাজধানী ঢাকার উত্তর-পশ্চিমের এ নদীর তীরে অনেক শিল্প-কারখানার অবস্থান। বুড়িগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ততা ও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ নদীতে অতিমাত্রায় ভারী ধাতুর উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মানের চেয়ে উচ্চমাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম, ক্যাডমিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ পাওয়া গেছে শীতলক্ষ্যায়। সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ক্রোমিয়াম, নিকেল, সিসা ও দস্তার উপস্থিতিও পাওয়া গেছে নদীটিতে। তাছাড়া পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা ও শিল্প-কারখানার বর্জ্যে দূষণের শিকার রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বালু নদ। পরিশোধন ছাড়াই শিল্প-কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়ছে ওই নদীর পানি। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বালু নদের পানিতে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, নিকেল, সিসা ও দস্তার উপস্থিতি বেশি। একইভাবে ভয়াবহ দূষণের শিকার ঢাকার পার্শ্ববর্তী তুরাগ নদ। টঙ্গী পৌরসভা ও শিল্প এলাকার পয়োনিষ্কাশন ও শিল্পবর্জ্যরে কারণে নদটি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে নদের পানি কালো রঙ ধারণ করেছে। পানিতে ব্রবীভূত অক্সিজেনও শূন্যে নেমে এসেছে। তবে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারি ধাতুর দূষণ। তুরাগের পানিতে ম্যাঙ্গানিজ, লৌহ ও ক্যাডমিয়ামের মাত্রা আগেই সহনীয় সীমা ছাড়িয়েছে। ক্রোমিয়াম ও দস্তার উপস্থিতিও বেশি মাত্রায় পাওয়া গেছে। তবে সহনীয় মাত্রায় আছে সিসা ও ক্যাডমিয়াম। তাছাড়া বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে সংযুক্ত কর্ণফুলী চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান নদী। কর্ণফুলীর তীরে ছোট-বড় অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠলেও অধিকাংশেরই বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা নেই। ওসব শিল্প-কারখানার বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই নদীতে গিয়ে পড়ছে। জাহাজ ও তেল ট্যাংকারের বিভিন্ন বর্জ্যও নদীতে মিশছে। তাছাড়া নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের পানিতে আর্সেনিক, লৌহ, সিসা ও ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা বলছে, কর্ণফুলীর আশপাশে গড়ে ওঠা ডায়িং, ওয়াশিং, ট্যানারি ও পেপার মিলের বর্জ্য পরিশোধন ছাড়াই ছেড়ে দেয়া হচ্ছে নদীতে। তাতে দূষিত হচ্ছে কর্ণফুলীর পানি। যথাযথ অয়েল ওয়াটার সেপারেটর না থাকায় নদী দূষণ করছে বিদ্যুকেন্দ্রগুলোও।
সূত্র আরো জানায়, শিল্পনগরী খুলনার নদীগুলোর অন্যতম রূপসা। নদীটির দুই তীরঘেঁষে অসংখ্য শিল্প-কারখানা। নগরীর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত রূপসার পানিতে অন্যান্য ভারী ধাতুর উপস্থিতি সহনীয় মাত্রায় থাকলেও সীমা ছাড়িয়েছে লৌহ। নদীর পানিতে লৌহের উপস্থিতি পাওয়া গেছে প্রতি লিটারে দশমিক ৩ মিলিগ্রামের বেশি, যা সহনীয় মাত্রার উপরে। সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ভারী ধাতুতে জলজপ্রাণী, বিশেষ করে মাছও দূষিত হচ্ছে, মানবস্বাস্থ্যের জন্যও যা হুমকি তৈরি করছে। আর বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, শাজাহানপুর ও শেরপুরসহ ৪টি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে করতোয়া নদী। শহরের বেশির ভাগ ড্রেনেজের সংযোগ করতোয়ার সঙ্গে। ওই ড্রেন দিয়ে বিভিন্ন বর্জ্যরে পাশাপাশি করতোয়ার পানিতে বিসিক শিল্পনগরীর বর্জ্যও পড়ছে। তাতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি। করতোয়ার পানিতেও সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। সাতটি ভারী ধাতুর মধ্যে করতোয়ায় সবচেয়ে বেশি মাত্রায় রয়েছে লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ। তাছাড়া অপরিকল্পিত শিল্পায়নের শিকার দেশের অন্যতম বড় নদী মেঘনাও। মেঘনার পানি, তলদেশের মাটি ও মাছে সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা ও দস্তার উপস্থিতি রয়েছে নদীটির ১৫ ধরনের মাছে। ওই নদীর পানিতে ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও দস্তার পরিমাণ নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম থাকলেও লৌহের উপস্থিতি রয়েছে গ্রহণযোগ্য মাত্রার অনেক উপরে। মেঘনার তলদেশ অতিমাত্রায় দূষণের জন্য দায়ী নিকেল। আর শিল্পবর্জ্যরে কারণে দূষিত হচ্ছে ময়মনসিংহের খিরু নদী। ওই নদীর পানিতে ক্যাডমিয়াম, পটাশিয়াম ও সোডিয়ামের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি। নদীর তলদেশে ক্যাডমিয়ামের উপস্থিতি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।অপরিশোধিত বর্জ্য পানির কারণে ক্রমাগত দূষিত হচ্ছে বংশী নদী। নদীর পানিতে ম্যাঙ্গানিজ ও ক্যাডমিয়ামের পরিমাণ পাওয়া গেছে নির্ধারিত মানের চেয়ে বেশি মাত্রায়।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কাজী সারওয়ার ইমতিয়াজ হাশমী জানান, ঢাকার বাইরেও অনেক নদীর দূষণের বিষয়টি অধিদপ্তরের পরিদর্শনেও বেরিয়ে এসেছে। করতোয়া, বংশী, বালু, হালদা, কর্ণফুলীর মতো অনেক নদীর পানিই এখন দূষিত। খুব শিগগির বিশ্বব্যাংকের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকার বাইরের নদীগুলোর দূষণের ধরন, মাত্রাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করবে অধিদপ্তর। পাশাপাশি দূষণ কমিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনাও নেয়া হবে।

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews