দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বা প্রবাসী আয় দিন দিনই কমছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টোটা। কারণ আগের তুলনায় অনেক বেশি বাংলাদেশি বিদেশে কাজ করতে যায় এবং তারা দেশে থাকা পরিবার-পরিজনের কাছে টাকা পাঠায়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই অর্থ বৈধ পথে না এসে অবৈধ বিভিন্ন পথে, বিশেষ করে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আসছে। এর ফলে বৈধ পথে আসা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। এটা যেকোনো দেশের অর্থনীতি ও নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এতে যে শুধু রেমিট্যান্স প্রবাহই কমে তা নয়, মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা চলে যায় চোরাচালানকারী, সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদীসহ নানা অপরাধীদের হাতে। এই অর্থ ব্যবহৃত হয় মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের মতো ভয়ংকর অপরাধে। বাংলাদেশে পেপ্যাল জুম সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে দ্রুততম সময়ে, নিরাপদে ও নামমাত্র ফি দিয়ে অর্থ পাঠানো যাবে। সংগত কারণেই আশা করা হচ্ছে, এর ফলে হুন্ডিও অনেকাংশে কমে যাবে।
কোনো দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভর করে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের ওপর। তাতে দুর্নীতির সুযোগ যেমন কমে যায়, মানুষের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হয়। পেপ্যাল সার্ভিস উদ্বোধনের পর তেমন আশার কথাই শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, এখন থেকে সরকারের বিভিন্ন সেবার ফি, বেতন-বোনাস, লাইসেন্স ফি, গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি অনলাইনে পরিশোধের ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এর আগেও সেই চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু দক্ষ জনবলের অভাবসহ আরো কিছু কারণে তা করা যায়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেব। মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সিস্টেম বানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেব। ভাতার টাকা, সেবার টাকা মেরে দেওয়ার কিংবা ঘুষ নেওয়ার সুযোগ কারো হাতে থাকবে না। ’ সেটি করা একান্ত জরুরি। এখন এমন কোনো সরকারি সেবা খাত নেই বললেই চলে, যেখানে ঘুষ ছাড়া কাজ হয়। এতে সরকারের জনকল্যাণের উদ্দেশ্য যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি এসব সেবা পেতে মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
কোনো সার্ভিস বা সেবা শুধু চালু করলেই হয় না, ব্যাপক মানুষের কাছে তা সহজলভ্যও করতে হয়। শুরুতে ৯টি ব্যাংকে এই সেবা চালু হয়েছে। আরো বেশিসংখ্যক ব্যাংককে দ্রুত এই সেবার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সরকারি ব্যাংকে সেবা পেতে গ্রাহকদের বিলম্বসহ নানা রকম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পেপ্যাল সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে যেন সে রকম ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ব্যাংকের অনেক শাখায় এখনো অনলাইন সার্ভিস সহজলভ্য নয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদেশ থেকে আসা অর্থ পেতে কোনো গ্রহীতাকে যেন নূন্যতম ভোগান্তি পোহাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি হুন্ডিসহ অন্যান্য অবৈধ লেনদেন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।