বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে লাতিন আমেরিকা অঞ্চল থেকে সরাসরি ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে অংশ নিতে পারবে চার দল। আর প্লে-অফের মাধ্যমে একটি। এ অঞ্চলে বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে পাঁচ ম্যাচ। ১০ দলের অংশ গ্রহণে সবগুলো ম্যাচই ছিল মহা গুরুত্বপূর্ণ। জয়-পরাজয়ের হিসাব কষে সরাসরি বিশ্বকাপ টিকিট নিশ্চিত করেছে চারটি দল। দলগুলো হলো ব্রাজিল, উরুগুয়ে, আর্জেন্টিনা ও কলম্বিয়া। আর প্লে-অফের অপেক্ষা থাকতে হচ্ছে চিলিকে।
বাছাই পর্বে ১৮ ম্যাচ খেলে ১২ জয়, ৫ ড্র ও ১ পরাজয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা দলটির সংগ্রহ ছিল ৪১। তারপই ৩১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উরুগুয়ে। সমান সংখ্যক ম্যাচে ৯ জয় ৪ ড্র ও ৫ ম্যাচের পরাজয় নিয়ে বিশ্বকাপে উঠে উরুগুয়ে।
এদিকে ইতিহাস গড়ে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের তৃতীয় স্থানে থেকে নিজেদের বিশ্বকাপ টিকিট নিশ্চিত করে মেসির আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ ৮ দশক পর ইকুয়েডরের মাটিতে জয় পায় তারা। ১৮ ম্যাচে ৭ জয়, ৭ ড্র ও ৪ পরাজয় নিয়ে শেষ মুহূর্তে রাশিয়ার টিকিট কাটে সাম্পাওলির দল।অপরদিকে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ স্থানে থেকে ২৭ পয়েন্ট নিয়ে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের চতুর্থ দল হিসেবে বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে কলম্বো। ৭ জয়, ৬ ড্র ও ৫ পরাজয়ে তাদের সংগ্রহ ২৭ পয়েন্ট।
এদিকে প্লে-অফে ভাগ্য ঝুলে আছে পেরুর। বিশ্বকাপে যেতে তাদের খেলতে হবে প্লে-অফ ম্যাচ। ২৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে পেরুর অবস্থান ৫ এ।
মেসিকে দেয়া কথা রেখেছেন নেইমার
ক্লাব বার্সায় তাদের সম্পর্কটা বেশ জটিল ছিল। দু’জনের হাত ধরে অসখ্য ম্যাচের সাফল্য পেয়েছে কাতালান ক্লাবটি। জাতীয় দল হিসেবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলেও লিওনেল মেসি ও নেইমার ডি সিলভা জুনিয়র একে অপরের ভক্ত, দারুণ বন্ধুও বটে। এমনকি বার্সা ছেড়ে পিএসজি চলে যাওয়ার পরও নেইমার বার্সেলোনা শহরে গিয়ে মেসিদের সঙ্গে পার্টিও করে এসেছেন। নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন দুজন।
অথচ ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে নেইমারের দল টিকিট নিশ্চিত করলেও পিছিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। এমনকি তাদের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিয়ে চলছিল অনিশ্চিয়তা। কারণ ইকুয়েডরের চ্যালেঞ্জিং মাঠে মেসিদের জয় লাভ করা ছাড়াও তাকিয়ে থাকতে হতো নেইমারদের দিকে। আমরা জানি যে, ইকুয়েডরের রাজধানী কুইটোর মাঠটি সমূদ্রপৃষ্ঠ হতে ৯ হাজার ফুটেরও উঁচুতে। যেখানে স্বাগতিকদের মুখোমুখি হতে হতো মেসিদের। উচ্চতা সমস্যা না আবার মেসিদের বিপদে ফেলে দেয়, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় রয়েছে সবাই।
তবে বুধবারের (১১ অক্টোবর) ম্যাচে কঠিন পরিসংখ্যানের সহজ সমাধান দিলেন দুই বন্ধু মেসি-নেইমার। আর্জেন্টিনাকে জেতাতে হ্যাটট্রিক করেন মেসি। অন্যদিকে ব্রাজিলকে জয় লাভে সাহায্য করেন নেইমার।
আজকের ম্যাচের আগে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল যে, এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিল যদি চিলিকে হারিয়ে দেয়, তাহলে বিষয়টা আর্জেন্টিনার জন্য কিছুটা সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে না পারলেও প্লে-অফ খেলার সুযোগ পেতে পারে মেসির দল। সেটা মাথায় রেখেই ব্রাজিল তারকা প্রতিশ্র“তি দিলেন, ‘লিওনেল মেসি এবং তার দল আর্জেন্টিনাকে নিয়েই আগামী বিশ্বকাপ খেলতে যেতে চাই।’
স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেড স্প্যানিশ পত্রিকা স্পোর্টের বরাতে নেইমারের বক্তব্য দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল, ‘নেইমার বুঝতে পারছেন, চিলিকে অবশ্যই হারাতে হবে। নিজেদের সমর্থকদের সামনে ইমেজ ধরে রাখার বিষয়ই নয় শুধু, বন্ধু লিওনেল মেসিকেও এ ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান তিনি।’
তবে শেষ পর্যন্ত বন্ধু মেসির হয়ে কথা বলা নেইমার কথা রাখলেন। তাকে নিয়েই বিশ্বকাপের পথে ব্রাজিল। জয় হোক বন্ধুত্বের। জয় হোক ফুটবলের।