মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের মধ্যে রাজধানীর একটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকের সরবরাহের যে চেইন রয়েছে, সেটি আছে আগের মতোই। এমনকি চাইলে বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসছে ইয়াবা।
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমল থেকে দেশে ব্যাপকভাবে ইয়াবার প্রচলনের তথ্য পাওয়া যায়। এরপর দিকে দিনে বেড়েছে এই মাদকের বিস্তার। মাদক নিয়ে কাজ করেন, এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকাসক্তদের ৭০ শতাংশই এখন ইয়াবায় আসক্ত। আর মাদকসেবীদের সংখ্যা এখন কমসেকম ৭০ লাখ।
অর্থাৎ প্রায় ৫০ লাখই ইয়াবায় আসক্ত। তার তাদের কাছে মাদক পৌঁছে দিতে চোরাকারবারে যে বিপুল পরিমাণ মানুষ কাজ করে, সেটি সহজেই অনুমেয়।
দেশের অন্যান্য এলাকার মতো রাজধানীতেও মাদকের এই চেইন রয়েছে। নগীরর অন্যান্য এলাকার মতো মোহাম্মদপুরও এর বাইরে নয়।
গত ৪ মে থেকে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর পর মোহাম্মদপুরের দুটি এলাকায় মাদকের চেইনে কী প্রভাব পড়েছে, সেটি খতিয়ে দেখার চেষ্টা করে ঢাকাটাইমস।
এটা স্পষ্ট যে, ইয়াবার কথা বললে অবিশ্বাস নিয়ে তাকায় মানুষ। তবে কথা দিয়ে আস্থায় নিতে পারলে পাওয়া যায় মাদকের চেইনের সন্ধান।
মোহাম্মদীয়া হাউজিং এলাকায় ইয়াবার কারবারে দীর্ঘদিন ধরে ‘ম’ এবং ‘র’ অদ্যাক্ষরের দুই জনের নাম প্রচার পেয়েছে। দুজনেরই আছে বেশ বড় সড় দল।
পাঁচ থেকে ছয়শ টাকার বিনিময়ে একেকটি ইয়াবা বিক্রি হয় সেখানে। মোহাম্মদীয়া হাউজিং লিমিটেড ৩ ও ৫ নং রোডের খাল সংলগ্ন এলাকায় সহজলভ্য এই বড়ি।
বিক্রেতাদের কেউ কেউ মাঝেমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছে। কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে আবার তারা জড়ান একই পেশায়।
তবে ‘ম’ ও ‘র’ অদ্যাক্ষরের সেই দুই জন ধরা পড়েননি।
একাধিক ইয়াবা আসক্তের সঙ্গে কথা হয়েছে ঢাকাটাইমসের। তারা জানান, এই ‘গুরু’ ফোন করলে বাসায় ইয়াবা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। চাহিদা অনুপাত যায় ইয়াবার ছোট-বড়, খুচরা-পাইকারি যে কোন ধরনের চালান।
সংবাদকর্মী পরিচয় গোপন করে ইয়াবার সন্ধান চাইলে স্থানীয় এক চা দোকানদার বলেন, ‘সারাদিন এই দিকেই থাকে। সবাই জানে কারা বিক্রি করে। পুলি (কালভার্ট) গিয়ে কাউকে জিজ্ঞেস করেন, পেয়ে যাবেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, ‘কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। পুলিশ আসার আগেই এরা আর এলাকায় থাকে না। পুলিশেরই কেউ আগে থেকে এদের জানিয়ে দেয়। না হলে, এরা আগে থেকে কীভাবে জানে পুলিশ আসবে?’
‘এরা পুরা এলাকাটাকে নষ্ট করে ফেলছে। যে চায় ইয়াবা কিনতে পারে। বাসায় গিয়েও দিয়ে আসে। এদের সাথে থেকে ছোট ছোট ছেলেগুলোও দিন দিন নষ্ট হচ্ছে।’
ঢাকাটাইমসের অনুসন্ধানে উঠে ‘ম’ ও ‘র’ অদ্যাক্ষরের দুই ইয়াবা ‘গুরুর’ সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী একজনের সরাসরি সম্পর্ক আছে যার মানও ‘ম’ দিয়ে শুরু। তাকে এই দুই ‘গুরুর’ ‘গুরু’ বলা যায়। কারণ, লাভের একটা অংশ তাকে নিয়ে থাকেন ওই দুই জন।
মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে ইয়াবাসহ যে কোনো মাদক পাওয়া যায় ২৪ ঘণ্টা। এটা আর কোনো গোপন বিষয় না। এই ক্যাম্পে প্রায়ই পুলিশ অভিযান চালিয়ে বেকায়দা অবস্থায় ফিরে এসেছে। ক্যাম্পে প্রবেশ করলেই চোখে পরবে ইয়াবা বিক্রেতাদের।
অন্যান্য জায়গার মত এখানে খুঁজতে হলো না বিক্রেতাদের। প্রবেশের প্রতি নজর রেখেই ডাকছে ‘ভাই, কয়ডা লাগব?’, ‘কয়ডা?’, ‘ছোড বা বড়?’
এসব স্বরেই ক্রেতাদের ডাকেন জেনেভা ক্যাম্পের ইয়াবা বিক্রেতারা।
ক্যাম্পে ইয়াবা চক্রের সংখ্যা অন্য যেকোনো এলাকার চেয়ে বড় বলেই ধারণা করা হয়। বর্তমানে ক্যাম্পের ইয়াবা বিক্রি চলছে কয়েকজন ডিলারের হাত ধরে। বড় ডিলারদের মধ্যে একজন ‘প’ একজন ‘আ, একজন ‘শ, এবং একজন ‘ম’ অদ্যাক্ষরের।
এদের মধ্যে আবার প্রায়শ উত্তাপ বিরাজ করে আধিপত্য নিয়ে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ঢাকাটাইমসের সাথে কথা বলতে রাজি হলেন জেনেভা ক্যাম্পের এক বাসিন্দা। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পে এখন কোনো পরিবেশ নেই। সুস্থ মানুষ এখানে থাকতে পারছে না। নেশা-মাদক দিয়ে পুরো ক্যাম্প ভরা। এগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
‘সকাল-বিকাল চোখের সামনে মাদক বিক্রি হতে দেখছি। এগুলো সহ্য করার মতো না। কিন্তু যারা এগুলো করছে তাদের বিরুদ্ধেও কথা বলার কেউ নেই। সরকারের এদিকে নজর দেয়া উচিত।’
একাধিক খুচরা বিক্রেতা জানান, ক্যাম্পে দিনে ৬০০ টাকা বেতন ও খাওয়া দাওয়া ফ্রি- এমন চুক্তিতে ইয়াবা বিক্রি করেন তারা। এখানেও বড় চালায় বাসায় বা অন্য কোথাও চাইলে তা পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা আছে।
ইয়াবা মিলবে মোহাম্মদপুরের আদাবর ১০ ও ১৬ নম্বর সড়কের শেষ মাথায়। নবোদয় হাউজিং, ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যান এলাকাসহ মোহাম্মদপুরের প্রায় অলিতে গলিতে মিলবে মাদক।