আমাদের অন্যতম উৎসব ঈদ। আর যে কোনো উৎসবেই পোশাক প্রিয় অনুষঙ্গ। সেই প্রিয় পোশাকের কাপড়টি পছন্দের কাট-ছাঁটে তৈরির ইচ্ছা সবারই। কিন্তু নকশা কিংবা জামার মাপ গরমিল হলেই সব আনন্দের গুড়েবালি। তাই দক্ষ দর্জির প্রয়োজন। কিন্তু বেশির ভাগ দর্জিই ১০-১৫ রোজার পর থেকেই সব অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দেয়। তাই এখনই শুরু হোক দর্জিবাড়ির খোঁজ।
ঈদের পোশাক তৈরি করে নেওয়ার বিষয়ে জেন্টল পার্কের ফ্যাশন ডিজাইনার জাহিদ হোসেন আকাশ বলেন ‘এখন রেডিমেট পোশাকের ট্রেন্ড। কিন্তু ফ্যাশন-সচেতনরা নকশা, প্যাটার্ন আর ফিটিংস মিলিয়ে নিখুঁত পোশাক পেতে পছন্দ করে। তাছাড়া রেডিমেট পোশাক কখনোই যেমন পুরোপুরি ফিট হয় না, তেমনি নকশার ধরনও একই রকম হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে নকশাটা একটু নান্দনিক ও ব্যতিক্রম করতে তারা গজ কাপড় কিনতে পারে। তবে ব্যস্ত মানুষরা গর্জিয়াস লুক পেতে রেডিমেট পোশাক কিনলেই ভালো। রেডিমেট কিংবা গজ কাপড় যাই হোক না কেন দর্জিবাড়ির বিকল্প নেই।’
মেয়েদের জন্য…
হাল ফ্যাশনের তরুণীদের ফিউশনধর্মী পোশাকের প্রতি আগ্রহ আছে। নিজেরাই রুচি আর সৃজনশীলতা দিয়ে নকশা ও প্যাটার্ন নির্ধারণ করে। সেই বৈচিত্র্যময় ও ব্যতিক্রমী নকশার পোশাকটির বাস্তবরূপ দিতে একজন দক্ষ দর্জির প্রয়োজন। পোশাক বানানোর আগে প্রস্তুতি দরকার। ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক কিনতে হবে। পোশাকে কোন ধরনের কাট-ছাঁট ও নকশার ব্যবহার চলছে সে সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে হবে। তাহলেই পোশাকে নতুনত্ব থাকবে। তবে ঈদের পোশাকটিকে জাঁকজমক রূপ দিতে লেস, অ্যামব্রয়ডারি, পুঁতি, স্টোনসহ আরো উপাদান দিয়ে তৈরি করতে পারেন। এখন আর্টিফিশিয়াল মুক্তা এবং পুঁতির মালার তৈরি ইয়োক বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া অ্যামব্রয়ডারি কিংবা হ্যান্ডপেইন্টও করিয়ে নিতে পারেন।
ছেলেদের দর্জি
ঈদ কিংবা যেকোনো উৎসবে ছেলেদের নজর পাঞ্জাবির দিকেই থাকে। আবার শার্ট, প্যান্ট, স্যুট, ব্লেজারের মতো ফরমাল ড্রেসেরও কদর রয়েছে। চাকরিজীবী অথবা ব্যবসায়ীদের মতো কর্মব্যস্ত পুরুষরা শার্ট-প্যান্টের জন্য বেছে নিতে পারেন এমন টেইলার্স, যেখান থেকে কাপড়ও কিনতে পারবেন। পোশাকে কী ধরনের ফিটিং, হাতা, কলার, কাটিংয়ে কেমন পরিবর্তন দরকার দর্জিকে বুঝিয়ে বলুন। কুচি-ছাড়া প্যান্ট এখন ট্রেন্ড। তবে বৈচিত্র্য আনতে এক কুচি দিতেও পারেন। ঈদের দিনগুলোতে গরম থাকবে। পাঞ্জাবির জন্য কাপড় সুতি, হালকা খাদির হলে ভালো হয়। এছাড়া বাটিক অথবা টাইডাইয়ের মধ্যে পোশাক কেনাও ভালো। পাঞ্জাবি কখনোই টাইট ফিটিং মানায় না। আবার কুর্তা বানাতে চাইলেও টাইট ফিটিং এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
খলিফার খোঁজ
সেলাই কারিগরদের কেউ কেউ খলিফা বলে থাকে। এই খলিফারা রাজধানী ঢাকার যেসব এলাকায় আছে, সেই তালিকা দিব এবার। এর মধ্যে ছেলেদের পোশাকের জন্য বিখ্যাত এলিফ্যান্ট রোড, রমনা ভবন, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটিসহ বেশকিছু মার্কেট। এছাড়া স্টার টেইলার্স, ফিট এলিগেন্স, দ্য রেমন্ড শপ, টপটেন, আইকন টেইলর অ্যান্ড ফেব্রিকস, আইডিয়াল টেইলর অ্যান্ড ফেব্রিকস, আজিজ টেইলার্স অ্যান্ড ফেব্রিকস, বসুন্ধরা শপিংমল, সোনারগাঁও রোড, ধানমন্ডি আনাম র্যাঙ্গস প্লাজা, মগবাজার বিশাল সেন্টার, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গুলশানের ইউনিকর্ণ প্লাজা অন্যতম। আর মেয়েদের জন্য চাঁদনী চক, নিউমার্কেট, মৌচাক ও আনারকলি মার্কেটে বেশকিছু ভালোমানের টেইলার্স রয়েছে। তার মধ্যে চাঁদনী চকের লেডিস ফ্যাশন, ওমেন্স টেইলার্স বেশ ভালো মানের। গাউছিয়ায় রয়েছে লেসি বিউটি ফ্যাশন, ইউনিকসহ বেশকিছু টেইলার্স। নকশার ভিন্নতা এবং মার্কেট অনুযায়ী রয়েছে মজুরি ভিন্নতাও।
সেলাইয়ের খরচ
ঈদের আগমনে সেলাইকারিগররা কাপড়, নকশা ও কাট-ছাঁটের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করেন। একেক এলাকায় একেক রকম মজুরি। সালোয়ার-কামিজ ৪০০-৮০০ টাকা, সুতি ব্লাউজ ৩৫০ টাকা, লাইনিং ব্লাউজ ৬০০ টাকা, লেডিস ফতুয়া ২৫০ টাকা, লেহেঙ্গা ৬০০-১০০০ টাকা, শাড়ির ফলস ২০০ টাকা, শাড়ি পিকু ৫০ টাকা, ওড়না পিকু ৫০ টাকা, ফ্রক নরমাল ৪০০-৮০০ টাকা, শাড়ি নেট গজপ্রতি ২৫০ টাকা, ছেলেদের শার্ট ৪০০ টাকা, প্যান্ট ৫০০ টাকা, পাঞ্জাবি ৬০০ টাকা, জেন্টস ফতুয়া ৩৫০ টাকা।