সিলেট প্রতিনিধি: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী সাত মেয়র প্রার্থী একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে নগরকে সুন্দর ও পরিকল্পিতভাবে গড়তে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন । গতকাল বুধবার দুপুর পৌনে ১২টায় নগরের রিকাবিবাজার ইনডোর জিমনেশিয়ামে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট জেলা কমিটির অনুষ্ঠানে তারা এই প্রতিশ্রুতি দেন। এতে সাত মেয়র প্রার্থীদের সকলেই উপস্থিত ছিলেন। পরে নাগরিকরাও অনুষ্ঠানে সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার শপথ নেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভোটারদের মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামার তথ্যাবলী সম্বলিত প্রচারপত্র বিলি করা হয়। এর মূল সঞ্চালক ছিলেন সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। সুজন সিলেট জেলা সভাপতি ফারক মাহমুদের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকট শাহ শাহেদা আক্তার। মেয়র প্রার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি উপস্থিত ভোটারদের সামনে তুলে ধরেন এবং নগরবাসীর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। পরাজিত হলে ফলাফল মেনে নেওয়া এবং করপোরেশনের উন্নয়নে বিজয়ী প্রার্থীকে সহযোগিতা করাসহ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য উদ্যোগ গ্রহণেরও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রার্থীরা। এসময় বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, মেয়র হিসেবে শুধু রাস্তা-কালভার্ট ঠিক করা নয়। নাগরিকদের সকালে ঘর থেকে বের হওয়া ও ঘরে ফেরা পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্ব থাকে। রাস্তাঘাট ড্রেন নির্মাণ রুটিন ওয়ার্কের অংশ। নাগরিক সমস্যা থাকবে, সমাধানও করতে হবে। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন এলে আমরা হয়ে যাই রোগী আর ভোটাররা ডাক্তার। নির্বাচন যাওয়ার পর ভোটাররা হয়ে যান রোগী, আর জনপ্রতিনিধিরা ডাক্তার। আসন্ন সিসিক নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। যদি নির্বাচন কমিশন প্রশাসনকে সহযোগিতা করে, তাহলে নিশ্চই আমরা সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারব। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বিগত নির্বাচনে জনগণ আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন। আমি পাঁচ বছরের মধ্যে তিনটি বছর কারাগারে থাকায় মাত্র দুই বছর সেবা দিতে পেরেছি। আমি যা করেছি, তা বাস্তবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এখন আর নগরীতে জলাবদ্ধতা হয় না। এরপরও আমরা পরিকল্পিত নগরায়নে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী নাগরিক কমিটির বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, বিগত দিনে দুই মেয়র যা করতে পারেননি। মেয়র নির্বাচিত হলে আমি তা করে দেখাব এক বছরে। এই সিলেটকে পরিকল্পিত তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। নাগরিক ফোরামের ব্যানারে টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট এহসানুল হক জুবায়ের বলেন, দেশ-বিদেশে মানুষের কাছে সম্মানের স্থান সিলেট। আমরা সেই স্থানের বাসিন্দা। আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর বা নির্বাচিত না হলেও সিলেটকে দেখতে চাই আকর্ষণীয় সুন্দর, পরিবেশবান্ধব শহর হিসেবে। এজন্য আদর্শ নীতিবান মানুষের প্রয়োজন। আমরা যে স্বপ্নের শহর দেখতে চাই, এজন্য সিলেট শহর সম্প্রসারণ করা দরকার। নতুবা কিছু সম্ভব না। হরিণ প্রতীকে মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এহছানুল হক তাহের বলেন, স্বপ্ন আমি দেখি না, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করি। সংগঠক হিসেবে মশা নিধনে মশারি মিছিল করি। আমার টার্গেট তরুণদের কাজে লাগিয়ে যেমন সোনার বাংলা গড়া সম্ভব। তেমনি আমি মেয়র হলে সবার মতামতের প্রেক্ষিতে আধুনিক শহর গড়ে তুলব। মই প্রতীকে সিপিবি বাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবু জাফর বলেন, সকলের জন্য বাসযোগ্য শহর গড়তে আমরা কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরতে চাই। সিলেটকে সুন্দর করতে পুনর্বাসনে ফুটপাত হকারমুক্ত করার জন্য দ্রুত কাজ করব। সিসিকের নিজস্ব অর্থায়নে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। মাদকমুক্ত যুব সমাজ গড়তে পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ করে দেবে। ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে সকালে মসজিদ-মন্দিরে শিশুদের ধর্মীয় বিষয়ে পড়ার ব্যবস্থা করা। শিশু ও নারীদের চিত্তবিনোদনে আলাদা পার্ক করব। যেখানে পুরুষরা প্রবেশ করতে পারবেন না। ভোট আল্লাহর পবিত্র আমানত, তথা সাক্ষ্য দেওয়া। আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া পাপ। এসব কারণে কাকে দিয়ে নগরবাসীর উপকার হবে জেনে শুনে ভালো প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান রইল আমার।