
অনলাইন ডেস্ক: রাজধানীর হাজারীবাগ থানাধীন একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাত আরা রুমীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে জিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার রোড এলাকায় অবস্থিত জান্নাতী ছাত্রী হোস্টেলের পঞ্চম তলা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জান্নাত আরা রুমী জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ঢাকা মহানগর দক্ষিণ (ধানমন্ডি থানা) সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, ঝিগাতলা পুরান কাঁচা বাজার এর পাশে একটি ছাত্রী হোস্টেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন দুপুরে ধানমন্ডিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে মারধরের ঘটনায় রুমীর নাম আলোচনায় আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেওয়ায় ওই নারীকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
এ ঘটনার পর থেকেই জান্নাত আরা রুমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ধমকির শিকার হচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা। ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কিভাবে লিখবো বুঝতেছি না। আমার হাত কাঁপতেছে। আপনাদের মনে থাকার কথা, গত মাসে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২-এ ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামীলীগাররা কী সিন ক্রিয়েট করেছিলো। সেখানে একজন জেন-জি নারীকে আপনারা দেখেছিলেন এক আওয়ামীলীগারকে (যে জিয়ার কবর খুড়তে চাইছিলো) পিটায়ে পুলিশের কাছে ধরায়ে দিতে।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘সেই জেন-জি নারী গত এক মাস ধরে আওয়ামীলীগের ক্রমাগত সাইবার বুলিং, হ/ত্যা ও রেপ থ্রেটে অতিষ্ঠ হয়ে আজ রাতে আত্মহত্যা করেছে। ধানমন্ডির ভাইব্রাদারদের সাথে কথা হলো। তারা গত এক মাসে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে তার পাশে থাকার। কিন্তু সাইবার বুলিং আর ফোনকলে সারাদিন থ্রেট পাওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তবে কারোর কল্পনাতেও ছিলো না, বুলিংয়ের মাত্রা এত তীব্র যে সে আত্মহননের পথ বেছে নেবে।’
তারেক রেজা আরও লেখেন, ‘এটাকে আমরা আত্মহত্যা হিসেবে দেখতে রাজি নই। এটা খুন। যারা আমার বোনের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে, তাদের জীবন আমরা শান্তিতে কাটাতে দেবো না। আমার বোনের রক্তের শপথ!’এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলেই ধারণা করা হচ্ছে। রুমি পারিবারিকভাবে মানসিক চাপে ছিলেন বলেও প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে পুলিশ।হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক এসআই কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে জান্নাত আরা রুমিকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
তিনি জানান, সকালে হোস্টেলের কাজের বুয়া রুমের দরজায় ধাক্কা দিলে দরজা খুলে যায়। ভেতরে ঢুকে তাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। পরে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে।
এসআই কামরুজ্জামান আরও বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত নারী জীবনে দুইবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রথম স্বামীর ঘরে তার একটি মেয়ে এবং দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে একটি ছেলে রয়েছে। বর্তমানে তিনি কোনো স্বামীর সঙ্গে বসবাস করছিলেন না। তার সন্তানরা নওগাঁয়ে থাকলেও তিনি ঢাকায় একাই হোস্টেলে বসবাস করতেন।ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে।
নিহত জান্নাত আরা রুমি নওগাঁ জেলার পত্নীতলা থানার নাজিরপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা। তার পিতা মো.জাকির হোসেন ও মাতা নুরজাহান বেগম।নিহতের সাবেক স্বামী মো. বিপ্লব সরকার জানান, তার সঙ্গে চার–পাঁচ মাস আগে জান্নাত আরা রুমির ডিভোর্স হয়। এর আগে তার আরেকজন স্বামী ছিলেন এবং সেখানেও ডিভোর্স হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে বিয়ের পর আমরা নওগাঁর নজিপুর এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতাম। তার প্রথম স্বামীর ঘরে আট বছরের একটি মেয়ে রয়েছে, নাম মুনতাহা। আর আমার সঙ্গে সংসারে তার সাড়ে তিন বছরের একটি ছেলে রয়েছে, নাম আয়মান। একদিন সে আমাকে বলে—তুমি ঘর থেকে বের হয়ে যাও, তোমাকে আমার দরকার নেই। এরপর গত তিন–চার মাস ধরে তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
তিনি আরও জানান, জান্নাত আরা রুমি আগে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করতেন। পরে ৫ আগস্টের আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং পরবর্তীতে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে পুলিশ ফোন করে তাকে আত্মহত্যার খবর জানায় বলে তিনি দাবি করেন।নিহতের খালাতো ভাই সোয়েইব হোসেন জানান, জান্নাত আরা রুমি ঢাকায় ওই ছাত্রী হোস্টেলে একাই থাকতেন। তার দুইটি সন্তান রয়েছে—একটি ছেলে ও একটি মেয়ে। তারা দু’জনই নওগাঁয়ের গ্রামের বাড়িতে বসবাস করে। তিনি বলেন, ‘ঢাকায় সে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে চাকরি করত। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়। পরে এনসিপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়।’