
শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমী ও কুমারী পূজায় পূজামণ্ডপ ও মন্দিরগুলোয় ভক্ত, দর্শনার্থী ও পূজারিদের ঢল নেমেছিল। বুধবার রামকৃঞ্চ মিশনসহ দেশের বেশ কিছু জায়গায় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মহানবমী।
শুক্রবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এ ধর্মীয় উৎসবের শেষ হবে।
মহাষ্টমীতে মণ্ডপে মণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। বিহিত পূজার মধ্য দিয়ে সকালে মহাষ্টমীর আচার অনুষ্ঠান শুরু হয়। দুর্গা দেবীর মহাষ্টমী কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীবিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৬ মিনিটের মধ্যে সন্ধিপূজা হয়। চণ্ডিপাঠ ও মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে আসন, বস্ত্র, নৈবেদ্য, ধুপ ও দীপ দিয়ে পূজা করা হয়।
রাজধানীর গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামণ্ডপে কুমারী পূজায় বুধবার সকাল থেকে হাজারও ভক্ত ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে। ঢাক-ঢোলের বাজনা, ফুল-চন্দন আর আরতিতে পরিবেশ মুখরিত হয়ে ওঠে।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে দেবীর আসনে এক কুমারী কন্যাকে বসানো হয়। এরপর তাকে ঘিরে চলে নানা আচার-অনুষ্ঠান। এবার ৮ বছর বয়সী মিতালী চক্রবর্তীকে কুমারী দেবী করা হয়। তার মধ্যে দেবী দুর্গার শুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে পূজা করেন ভক্তরা।
কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দেবী শক্তির বন্দনা ও অসুর বধের প্রত্যয় করা হয়। কুমারী পূজা শেষে ভক্তদের মধ্যে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্র“বেশানন্দ বলেন, পূজার উদ্দেশ্য সব মানুষের কল্যাণ কামনা করা। সব ধর্ম, সব জাতি ও সব বর্ণের মানুষের সুখ-শান্তি কামনা করা।
কুমারী পূজাকে ঘিরে রামকৃষ্ণ মিশনে নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, র্যাব, আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। মিশন গেটে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশির পরই ভক্তদের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়।
গোপীবাগ মোড় থেকে গোপীবাগ মাজার পর্যন্ত সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। দর্শনার্থী ও পূজারিদের ভিড়ে টিকাটুলী, ইত্তেফাক মোড়সহ ওই এলাকায় যানজট দেখা দেয়। মোড় থেকে হেঁটে মানুষ কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে মণ্ডপে প্রবেশ করেন।
বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর জাতীয় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রচুর ভক্ত-সমর্থক জড়ো হন। দুপুরে মণ্ডপ পরিদর্শনে আসেন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বাংলাদেশের মানুষের জীবনে শান্তি, সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করেন।
বিকাল ৫টায় শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি বলেন, আপনাদের কোনো ভয় নেই দেশের জনগণ, লাখ লাখ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, প্রশাসন আপনাদের পাশে আছে। তারা আপনাদের ভাই-বন্ধু। আপনাদের ভয় বা আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। আশা করব বাকি ২ দিন ও শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালন করবেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল বলেন, স্বাধীনতার প্রথম প্রহরেই সাম্প্রদায়িকতার হিংস্র থাবায় রমনা মন্দিরকে ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু আজ সেটা আবার পূর্ণ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
সন্ধ্যা থেকে রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হচ্ছে। ধর্মীয় আবহে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করছেন দেশি-বিদেশি নামকরা শিল্পীরা।
এবারও রাজধানীর উল্লেখযোগ্য পূজামণ্ডপগুলোতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। শ্রীশ্রী রমনা কালীমন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম পূজামণ্ডপে মহাষ্টমীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের পরিবেশনায় চলে সঙ্গীতানুষ্ঠান।
এখানে মহানবমীর দিনে সন্ধ্যা থেকে থাকছে জনপ্রিয় শিল্পীদের অংশগ্রহণে সঙ্গীতসন্ধ্যা। ধানমণ্ডি সার্বজনীন পূজামণ্ডপে মহাষ্টমীতে ছিল কলকাতার ইন্দ্রানী হালদারের নেতৃত্বে গীতিআলেখ্য। ছিল ‘রাই কৃষ্ণ পদাবলী’ নৃত্যনাট্য। শিবলী মহম্মদ ও শামীম আরা নীপাসহ এ নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণ করেন নৃত্যাঞ্চলের শিল্পীরা।
গুলশান-বনানী সার্বজনীন পূজামণ্ডপে মহাষ্টমীতে গান পরিবেশন করেন শিল্পী ফাহমিদা নবী, রফিকুল আলম, প্রিয়াঙ্কা গোপ, চম্পা বণিক, নন্দিতা দাস, চন্দনা মজুমদার ও শাহ আলম সরকার। মহানবমীতে কলকাতা থেকে কীর্তন গাইতে আসছেন শিল্পী অদিতি মুন্সী।
এ ছাড়া ধর্মীয় বিষয় নিয়ে একটি নাটক থাকবে। গান করবেন ফকির শাহাবুদ্দিন। রাজধানীর অন্যসব পূজামণ্ডপেও সন্ধ্যায় থাকছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।