ঢাকা: ভুটান সীমান্তের কাছে ডোকলাম নিয়ে দু’দেশ সমঝোতার পথে হাঁটছে বলে মনে হলেও ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)’র মধ্যে উত্তেজনা কমেনি। ওই অঞ্চল থেকে সেনা সরিয়ে নেয়ার পর প্রায় মাস পার হয়েছে।
এমনই পরিস্থিতিতে প্রথা ভেঙে সীমান্তে বার্ষিক ‘বর্ডার পার্সোনাল মিটিং’ বা বিপিএম বৈঠক থেকে বিরত থাকল দু’দেশের সেনাবাহিনী। ফলে বার্ষিক বৈঠকটি না হওয়ায় দুটি দেশের মধ্যে যে কূটনৈতিক সম্পর্কের বরফ যে গলেনি তার প্রমাণ পাওয়া গেল।
অন্যদিকে, চলতি মাসের শেষের দিকে চীন ও ভারতের মধ্যে সপ্তম ‘হ্যান্ড ইন হ্যান্ড’ মহড়া হওয়ার কথা থাকলেও তাতেও কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
প্রতিবছর চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে ভারতীয় ও চীনা সেনাবাহিনীর মধ্যে বিপিএম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৪ হাজার কি.মি. দীর্ঘ ভারত-চীন সীমান্তের পাঁচটি জায়গায় মিলিত হন দুই সেনা প্রতিনিধিরা। এ বছর ১ অক্টোবর ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রথা ভেঙে এবার বাতিল করা হয় ওই বৈঠক।
ভারতীয় সেনা সূত্র টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানায়, এবছর দৌলতবেগ, চুশুল, বুমলা, কিবিথু ও নাথুলায় বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে এবার ভারতীয় পক্ষকে পিএলএ আমন্ত্রণ জানায়নি। ফলে বাতিল হয়ে যায় বৈঠক।
উল্লেখ্য, দোকলামে সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করেছে চীন। তবে সেখানে এখনও মোতায়েন রয়েছে চীনা সেনা। একই ভাবে সীমান্তের এপারে টহল দিচ্ছে ভারতীয় বাহিনী। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, বিপিএম বৈঠক হলে দু’পক্ষের মধ্যে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারত।
দোকলামের ৭৩ দিন মুখোমুখি অবস্থানের পর এখনও সিকিম-ভুটান-তিব্বত ত্রি-জংশনের কাছাকাছি অঞ্চলে দুই বাহিনীই ধাপে ধাপে শক্তি বজায় রাখছে।
একটি সূত্র জানায় “পিএলএ ঘটনাস্থল থেকে জামফেরী ঢালের দিকে গাড়ি চলাচল উপযোগী রাস্তার নির্মাণ বন্ধ করলেও ওই অঞ্চলে তাদের শক্তি বজায় রেখেছে”
মুখোমুখি অবস্থানের সময় দু’পক্ষ অতিরিক্ত পদাতিক ব্যাটালিয়নের পাশাপাশি সাঁজোয়া যান(ট্যাংক), আর্টিলারি, ক্ষেপণাস্ত্র এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। আগে এখানে সৈন্য সংখ্যা বর্তমানের তুলনায় অনেক কম ছিল।
বলা হচ্ছে, আগামী ১৮ অক্টোবর চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ কংগ্রেস হওয়া পর্যন্ত ডোকলাম পরিস্থিতি একই থাকবে। এই কংগ্রেসে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দ্বিতীয়বারের মত আরও পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, কংগ্রেস শেষ হওয়ার পর পিএলএ’র আচরণ কী হয় তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।
প্রতিবছর চীন-ভারত সীমান্তের বিভিন্ন ‘বর্ডার পার্সোনাল মিটিং পয়েন্ট’ এ সাত থেকে আটটি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। যার মধ্যে আছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উপহার বিনিময়, বক্তৃতা ইত্যাদি থাকে। গত জুনের মাঝামাঝি ডোকলাম সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে ভারতীয় সৈন্যরা চীন সীমান্ত অতিক্রম করেনি।
এমনকি গত আগস্টে পিএলএ’র ৯০ তম বার্ষিকী উদযাপনকালেও নয়।
এছাড়াও, ভারত ও চীনের মধ্যে ‘হ্যান্ড ইন হ্যান্ড’ সামরিক মহড়াও বাতিল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভারত বিষয়টি নিয়ে চীনের বারবার সাথে যোগাযোগ করলেও এখন পর্যন্ত চীন কোন জবাব দেয়নি।