1. rajubdnews@gmail.com : 24jibonnews : admin
সোমবার, ৩০ জুন ২০২৫, ০৮:০৫ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ সংবাদ:
এনবিআর- এর কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি প্রত্যাহার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা সাধারণ মানুষের পক্ষে এখন আর সিনেমা হলে যাওয়া সহজ নয়: আমির খান ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের রাউন্ড অব সিক্সটিনে বেনফিকাকে ৪-১ গোলে হারালো চেলসি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও বন্দর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যানকে মারধর ইউক্রেনের পোক্রভস্ক দখলে ১ লাখ ১০ হাজার সেনা মোতায়েন রাশিয়ার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে অর্থ উপদেষ্টা এনবিআরকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা, কাজে যোগ না হলে কঠোর ব্যবস্থা: সরকারের বিবৃতি পণ্যের মান যাচাইয়ে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের আর ঢাকামুখী হতে হবে না: শিল্প উপদেষ্টা পাকিস্তানে দক্ষিণাঞ্চলে একই পরিবারের ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার,প্রাণ হারিয়েছে ১১ জন

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি যা দেখেছি তার ভয়াবহতা প্রকাশ করা অসম্ভব

প্রতিনিধির নাম :
  • আপডেট এর সময় : রবিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
গত মার্চে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছিলেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত প্রখ্যাত অভিনেত্রী কেট ব্ল্যানচেট। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে গত ২৮ আগস্ট তিনি এই ভাষণটি দেন

ধন্যবাদ মি. প্রেসিডেন্ট, মহাসচিব, গণ্যমান্য প্রতিনিধি, ভদ্রমহিলা ও মহোদয়েরা।

এই সংকটময় সন্ধিক্ষণে নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি। এখানে আমি একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য দেব না। আমি এখানে শুধু একজন প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে হাজির হয়েছি। আমি এখানে সেই ধরনের একজন মানুষ হয়ে উপস্থিত হয়েছি, যে নিজের চোখে কিছু জিনিস দেখে এসেছে এবং তা থেকে তার পক্ষে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

গত মার্চ মাসে আমি ইউএনএইচসিআরের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। সেখানে কোন মাত্রায় মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে এবং সেখানে কী কী মানবিক সহায়তা দরকার, তা নিজের চোখে দেখে এসেছি। আমি যা দেখেছি, তার ভয়াবহতার ব্যাপ্তি কোনোভাবেই আমার পক্ষে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

সেখানকার যেসব চরিত্র আমার স্মৃতিজুড়ে ছড়িয়ে আছে, তার মধ্যে প্রধান চরিত্র হলো লায়লা নামের একজন অষ্টাদশী নারী। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে গত আগস্টে যে ৭ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে, লায়লা তাদের একজন। জ্বালিয়ে দেওয়া নিজ গ্রাম থেকে শিশুপুত্র ইউসুফকে নিয়ে তিনি কোনোরকমে পালিয়ে বাংলাদেশে গেছেন। সন্তানকে কোলে দোলাতে দোলাতে লায়লা বলছিলেন, তাঁর স্বামীকে কয়েকজন এসে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। পাঁচ দিন পর সেই লোকগুলোই আবার ফিরে এসেছিল। তারা তাঁর ঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তাঁকে বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যেতে বলল। লায়লার চোখের সামনে তাঁর চাচাকে তারা কুপিয়ে মেরে ফেলল। লায়লা আমাকে বললেন, ‘আমি চাচাকে মারার দৃশ্য দেখার পর উন্মাদের মতো ছুটেছিলাম।’ লায়লা তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে পালিয়ে জঙ্গলের মধ্যে ছিলেন। শুধু গাছের পাতা আর ফলমূল খেয়ে তিনি জীবন বাঁচিয়ে আসতে পেরেছেন। এরপর তিনি এক বিভীষিকাময় পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পৌঁছাতে পেরেছেন। সেখানে এখন তিনি অন্য রোহিঙ্গাদের মতো এক মহা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শরণার্থী শিবিরে থাকা একটি পরিবার লায়লাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখানে তিনি শিশুপুত্র ইউসুফকে নিয়ে আছেন।

আমি যখন লায়লার পাশে বসে তাঁর কথা শুনছিলাম, তখন দেখলাম, ছোট একটি ছেলের পায়ে দগদগে পোড়া ক্ষত। এই ক্ষত কীভাবে হলো? জিজ্ঞেস করতেই ছেলেটার পরিবারের সদস্যরা বললেন, তাঁদের বাড়িতে যখন আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়, তখন ছেলেটা ঘরে আটকা পড়েছিল। কপাল ভালো, ছেলেটাকে তাঁরা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তার গা পুড়ে যায়। এখন তার দেহে ক্ষত। ছেলেটির এই ক্ষত কোনো দিন শুকাবে না। তার মনের ক্ষতও না।

 প্রায় প্রতিটি শরণার্থী পরিবারের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পেছনে এ রকম একেকটি গল্প রয়েছে। আপনাদের সবার মতো আমিও সেখানকার রক্ত হিম করা ঘটনার কথা শুনেছি। নিদারুণ নির্যাতন, নারীদের ধর্ষণ এবং প্রাণাধিক প্রিয় স্বজনকে চোখের সামনে নৃশংসভাবে মেরে ফেলার গল্প আপনাদের মতো আমিও শুনেছি। শরণার্থী শিবিরে এমন কিছু শিশু-কিশোর আছে, যাদের চোখের সামনে তাদের চাচা-চাচি, দাদা-দাদিকে ঘরের মধ্যে বেঁধে রেখে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আমি একজন মা। আমি শরণার্থী শিবিরে যাওয়ার পর সেখানকার প্রতিটি শিশুর মধ্যে নিজের সন্তানকে দেখেছি। প্রত্যেক বাবা-মায়ের জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখেছি। কোন মা তাঁর সন্তানকে আগুনে ছুড়ে ফেলার দৃশ্য সহ্য করতে পারেন? তাঁদের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার গল্প কোনো দিন আমাকে ছেড়ে যাবে না। আমি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত নিরাপত্তা পরিষদের কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ এ জন্য যে তারা এই সংকটমোচনের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

আমি বিশেষ করে মহাসচিব মহোদয়ের কাছে কৃতজ্ঞ এ জন্য যে তিনি এ বিষয়ে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। আমি প্রয়াত সাবেক মহাসচিব কফি আনানকেও শ্রদ্ধা জানাই। তিনি আমাদের রাখাইন পরিস্থিতির বিষয়ে একটি স্বচ্ছ ও বাস্তবসম্মত চিত্র দিয়ে গেছেন। তাঁর প্রতিবেদনের আলোকে নিরাপত্তা পরিষদ একটি রূপরেখা দিয়েছে, যা মিয়ানমার সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকার করেছে। এই রূপরেখা যদি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে রাখাইন রাজ্যে ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব ধরনের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের নারী-পুরুষ-শিশুরা শান্তিতে বসবাস করতে পারবে। তবে সেটি নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘ ও মিয়ানমার সরকারকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের যত দ্রুত সম্ভব সব ধরনের সহায়তা দিতে হবে।

 মাননীয় প্রেসিডেন্ট

এটি মনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে গত ৪০ বছরে মিয়ানমার থেকে গণহারে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এই ৪০ বছরে মিয়ানমার থেকে এত বেশি রোহিঙ্গা বিতাড়িত হয়েছে যে আজ মিয়ানমারে যত রোহিঙ্গা আছে, তার চেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গা আছে মিয়ানমারের বাইরে।

হত্যা-নির্যাতনের মুখে পড়ে ১৯৭৮ সালে দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েছিল। পালিয়ে যাওয়া এই দলে গুল জাহার নামের এক নারী ছিলেন। তখন তাঁর বয়স খুব কম ছিল। বাংলাদেশ থেকে আবার তিনি সেখানে ফিরে গিয়েছিলেন। এর ১৪ বছর পর ১৯৯২ সালে আবার গণনির্যাতনের মুখে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। সেই দলেও গুল জাহার ছিলেন। আবার তিনি ফিরে গিয়েছিলেন।

আজ বাংলাদেশে ৯ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। আজ গুল জাহারের বয়স ৯০ বছর। কী দুঃখের বিষয়, এই বয়সে আবারও তাঁকে নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে। চার দশক ধরে গুল জাহার ছোটাছুটি করেছেন। এখন তিনি বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের ঝুপড়ি ঘরে থাকেন। তাঁর আশা, তাঁর নাতিপুতিরা একদিন একটু ভালো থাকতে পারবে। তাদের ভবিষ্যৎ একদিন উজ্জ্বল হবে। কিন্তু মিয়ানমারে তাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য এর আগে কোনো দিনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। আমরা যদি আজ সেই পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হই, তাহলে গুল জাহারের নাতিপুতিদের মতো নতুন প্রজন্মের অগণিত রোহিঙ্গা এই নিষ্ঠুরতার চক্র থেকে কোনো দিনও বেরিয়ে আসতে পারবে না।

প্রেসিডেন্ট মহোদয়

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে যে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে, তা আমাদের এই চলমান ইতিহাসের এক বিরল দৃষ্টান্ত। তবে এই শরণার্থীদের দরকার আরও অনেক কিছু। তাদের দুর্দশা তীব্র। এ অবস্থায় আরও অনেক বেশি আন্তর্জাতিক সহায়তা দরকার।

 এই বর্ষা মৌসুমে রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশ সরকার, স্থানীয় লোকজন, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং নানা এনজিও যে ভূমিকা রেখেছে, তার জন্য সব পক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। রোহিঙ্গা শিবিরের কাছাকাছি বহু বাংলাদেশি গ্রামবাসী আছেন, যাঁরা নিজেরাই হতদরিদ্র—এরপরও তাঁরা এক বছর ধরে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে আসছেন। এই হতদরিদ্র মানুষগুলো যদি তাঁদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন, তাহলে আমরা কেন পারব না?

এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের খাবার দরকার। খাওয়া ও রান্নাবান্নার জন্য বিশুদ্ধ পানি দরকার। বাথরুম ও গোসলের জন্য পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা দরকার। খরতাপ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য মাথার ওপরে একটু মজবুত ছাউনি দরকার। তাদের বাচ্চাদের লেখাপড়া শেখানো দরকার। এই শিশুদের বৃদ্ধ দাদা-দাদির দেখভাল করা দরকার।

সবচেয়ে বড় কথা হলো রোহিঙ্গাদের শুধু খাবার, পানি, অনানুষ্ঠানিক স্কুল, অস্থায়ী ছাউনি—এসব দিলে হবে না। তাদের একটি ভবিষ্যৎ দরকার। মিয়ানমার থেকে ধর্ষণের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা নারীরা এখন শরণার্থী শিবিরে বাচ্চা প্রসব করছেন। এই নবজাতকেরা রাষ্ট্রহীন রোহিঙ্গাদের ঘাড়ে বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

লায়লার মতো বহু নারী তাঁদের শিশু নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অনেকে এখনো শারীরিক ও মানসিক আঘাত কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

 মাননীয় প্রেসিডেন্ট

আমাদের এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা দরকার, যাতে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পায় এবং মিয়ানমারে এমন পরিবেশ তৈরি করা যায়, যাতে তারা আবার সেখানে ফিরে যেতে পারে। আমি অনেক শরণার্থীর সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, যারা নিজের বসতবাড়িতে ফিরে যেতে চায়, কিন্তু তাদের সেখানে ফিরে যাওয়ার বাস্তবসম্মত ভীতি রয়েছে।

তাদের সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে অসম্পূর্ণ সমাধান নিয়ে তারা ঘরে ফিরতে পারবে না। তাদের অবশ্যই বুঝতে দিতে হবে, তাদের আসলে কতটুকু অধিকার দেওয়া হবে। তাদের আসলে পূর্ণ নাগরিকত্ব দেওয়ার একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে। এটি তাদের জন্য বিলাসী চাওয়া নয়। এটি তাদের অগ্রাধিকার নয়। আমাদের সবার মতো এটি তাদেরও মানুষ হিসেবে প্রাপ্য মৌলিক অধিকার।

আমি এই কাউন্সিলের কাছে বাস্তব অবস্থা বুঝে তাদের দাবির পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

আমার মন সব সময় লায়লা এবং তাঁর প্রতিবেশীদের কাছে পড়ে থাকে। সব সময় আমি ভাবি, লায়লা কি আজও জানতে পেরেছেন তাঁর স্বামীর ভাগ্যে কী ঘটেছে? এই বর্ষায় তাঁর চালাঘরটি কি টিকে আছে? এবারের ঈদ কি সে উদ্‌যাপন করতে পেরেছে? লায়লার ছেলে ইউসুফ কি কোনো দিন মিয়ানমারে তার বাড়িতে যেতে পারবে এবং স্কুলে ভর্তি হতে পারবে?

 মাননীয় প্রেসিডেন্ট

আমরা সবাই মিলে লায়লা অথবা ইউসুফ অথবা গুল জাহার এবং বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বা যেকোনো দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ভবিষ্যৎ বদলে দিতে চাই। আমাদের সামনে এর কোনো বিকল্প নেই। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা দিতে আমরা ইতিপূর্বে ব্যর্থ হয়েছি। আর যেন ব্যর্থ না

পোস্টটি আপনার স্যোশাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© All rights reserved © জীবন নিউজ ২৪ ডট কম
Theme Customized BY LatestNews