সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া ১২টি শর্তকে অর্থহীন বলে আখ্যায়িত করেছে রাশিয়া। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা- আইএইএ’তে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানোভ বলেছেন, এসব শর্ত নতুন যেকোনো চুক্তির সম্ভাবনা নষ্ট করে ফেলেছে।
সোমবার ইরানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে দেশটির বিরুদ্ধে ‘ইতিহাসের কঠিনতম নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের হুমকি দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। এরপর তিরি ইরানের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে চাইলে ইরানকে ১২টি শর্ত মেনে নিতে হবে।
এর প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল উলিয়ানোভ মঙ্গলবার ভিয়েনায় বলেন, ‘এগুলো সব অর্থহীন ও বাজে বক্তব্য। এগুলোকে ভিত্তি করে কোনো সমঝোতা অর্জন সম্ভব নয়।’ খবর পার্সটুডের।
ইরানকে ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার যে শর্ত পম্পেও দিয়েছেন তার তীব্র সমালোচনা করে উলিয়ানোভ বলেন, ‘ইরানের যে বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি চালানোর সার্বভৌম অধিকার রয়েছে সেকথা উপলব্ধি করার যোগ্যতা হারিয়েছে ওয়াশিংটন।’
ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায় ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের পরমাণু সমঝোতা উপলব্ধি করতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
এ সময় ইরানের পরমাণু সমঝোতা চুক্তিতে রাশিয়ার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সোমবার ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে তেহরানকে ১২টি শর্ত দিয়েছে দেশটি। ওয়াশিংটনে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, এ নিষেধাজ্ঞার কারণে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থা বাঁচাতে হিমশিম খাবে ইরান।
নিষেধাজ্ঞাগুলোর মধ্যে রয়েছে- সামরিক কাজে পরমাণু কর্মসূচি চিরদিনের জন্য পরিত্যাগের ঘোষণা দেয়া ও নিশ্চিত করা, অভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্রনীতি পরিবর্তন করা, সিরিয়া থেকে সব ধরনের সেনা প্রত্যাহার করা, হামাস-হিজবুল্লাহ-হুতি-ইসলামি জিহাদের মতো সংগঠনগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করা, পরমাণু বোমা বহনে আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করা, যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি, ইসরায়েল ও অন্যদের ক্রমাগত হুমকি বন্ধ করা ইত্যাদি।
মাইক পম্পেও’র এ হুমকির কয়েক ঘন্টার মধ্যেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইরান। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে ধোঁকাবাজি আখ্যা দিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেন, ইরান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নেই। প্রত্যেকটি দেশ স্বাধীন দেশ, বিশ্ব আর কখনোই মার্কিন কর্তৃত্ব মেনে নেবে না বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি পাল্টা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন হাসান রুহানি।