সদ্য মা হওয়া নারীদের জন্য রাতে ঘুমানো একটু কঠিনই বটে। শুধু রাতে নয়, দিনেও তারা ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। এভাবে দিনের পর দিন না ঘুমাতে পারার কারণে তারা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় সদ্যোজাতের দেখাশুনা করা আরও কঠিন হয়ে পরে। তবে একটু অভ্যাস এবং ধৈর্য ধরতে পারলেই কিন্তু নতুন এই অবস্থার সঙ্গে অনেকটাই মানিয়ে নেওয়া যায়। এক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এতে করে আপনি যেমন ভালো ঘুমাতে পারবেন তেমনি বাচ্চাও থাকবে সুরক্ষিত। নতুন মায়েদের ঘুমের সমস্যা কাটাতে সেলেনি ইন্সটিটিউট নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের (যা নারী এবং নতুন মায়েদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে) গবেষণায় বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে। এগুলো নিম্নরূপ-
নিজের যত্ন নবজাতকের যে কোন প্রয়োজনে আপনি সবর্দা প্রস্তুত থাকতে চান বলেই মস্তিষ্কের স্ট্রেস হরমোনগুলো আপনাকে জাগিয়ে রাখে। এছাড়া নবজাতকের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক দায়িত্বের চিন্তাও আপনার রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে। যাহোক, বাচ্চাকে বিছানার পাশের আলাদা কটে ঘুম পাড়ান। পাশাপাশি নিজেও ঘুমানোর চেষ্টা করুন। আপনার শিশুটি যখন ঘুমিয়ে আছে তখন নিজেকে সময় দিন। ভাল একটি নাটক দেখুন, গল্প করুন, ম্যাগাজিন বা গল্পের বই পড়ুন। মনকে শান্ত রাখুন দিনের বেলা টিভি, স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট দিয়ে নিজেকে কিছুটা রিল্যাক্স করা যায়। কিন্তু রাতে? নিজেকে বোঝান যে, বাচ্চাটি যেহেতু এখন ঘুমাচ্ছে আপনাকেও এখনই ঘুমিয়ে নিতে হবে। তাই টিভি, মোবাইলও বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়ুন। শিশুটি তার প্রয়োজনমত জেগে উঠবে আর তার কান্নার শব্দে ঠিকই আপনিও জেগে উঠবেন। চিন্তার কিছু নেই। কফি আপনি হয়ত রাতে ১ মগ কফি খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু সেই কফির ক্যাফেইনের প্রভাব থাকে ৮ ঘন্টা অব্দি। একটি নবাগত শিশুকে সামলাতে সারাদিনে নিশ্চই অনেক ধকল বয়ে যায় আপনার উপর দিয়ে। তাই রাতে ক্যাফেইন জাতীয় কিছু খেয়ে আরও অন্যায় করবেন না নিজের সঙ্গে। তার চেয়ে বরং এক গ্লাস ফ্রেশ ফলের জুস খান আর ঘুমোতে চেষ্টা করুন। পরিবারের অন্য কাউকে দায়িত্ব দিন আপনি মা বলে আপনাকেই শিশুর সমস্ত দায়িত্ব নিতে হবে এমন কোন কথা নেই। বরং একা একা সব সামলাতে গিয়ে আপনি নিজের এবং শিশুর উভয়েরই ক্ষতি করছেন। পরিবারের বড় কাউকে কিছু সময়ের জন্য দায়িত্ব দিন। মা, শ্বাশুড়ি বা স্বামী কারও দায়িত্বে তাকে রেখে নিজেও একটু ঘুমান। ঘুমের উপযোগী বিছানা আমাদের দেশের মায়েরা ভাবতেই পারে না যে তাদের শিশুটি আলাদা বিছানায় ঘুমাবে। নিজের বিছানায় শিশুর ঘুমানোর আয়োজন করতে গিয়ে তারা নিজেদের স্বাচ্ছন্দ্য পুরোই নষ্ট করে ফেলেন। যৌন জীবনকেও ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলেন। অথচ শিশুটিকে আলাদা বেবি কটে রাখলে তারও শান্তি, আপনারও শান্তি। এতে সে পড়ে যাবে না। আপনার বা তার বাবার হাত পা অসচেতনভাবে লাগার সম্ভাবনা থাকবে না। সর্বপোরি, আপনার স্ট্রেস কমবে, আর একটু ঘুমাতেও পারবেন। নিজের সঙ্গে সহজ হোন আপনি যা যা অসুবিধা বোধ করছেন তা সকল নতুন মায়েরাই বোধ করেন। নিজেকে অযথা দোষারোপ করবেন না। একইভাবে দোষ আপনার শিশুরও নয়। পারফেক্ট মা হওয়ার চেষ্টায় বেশি স্ট্রেস নেবেন না। অন্যের সাহায্য নিন। স্বামী, আত্মীয় স্বজনের সাহায্য তো নেবেনই। প্রয়োজনে থেরাপিস্ট এর সাহায্য নিন। থেরাপিস্টের কাছে যাওয়া মানে এই নয় যে আপনি মানসিক রোগী। আপনার সাহায্য প্রয়োজন। শুধু আপনি নন, আসলে সব নতুন মায়েদেরই এই সাহায্য প্রয়োজন হয়।