মাসুদ মোশাররফ,শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ
বাসের চেইন নিয়ে সিরাজগঞ্জ ও শাহজাদপুর মটর মালিক সমিতির দ্ব›েদ্বর জের ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে পাবনা-শাহজাদপুর-বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য সকল প্রকার বাস-কোচ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এ রুটে চলাচলকারী প্রায় ২ লাখ যাত্রী গন্তব্যে যেতে চরম দূর্ভেগে পড়েছে। গত ৩ দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসন এ সমস্যার সমাধান করতে না পারায় এ দূর্ভেগ আরো চরম আকার ধারণ করেছে।
শাহজাদপুর মটর মালিক সমিতির নের্তৃবৃন্দ জানান, গত ৩০ জুন সিরাজগঞ্জ মটর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের সমিতির প্যাডে হাতে লেখা একটি চিঠিতে জানায়,এখন থেকে শাহজাদপুরকে স্টার্টিং পয়েন্ট করে তাদের সমিতিভুক্ত ৪টি বাস-কোচ রাজশাহী,বগুড়া ও দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে প্রতিদিন ছেড়ে যাবে। এ সিদ্ধান্ত এ পত্র দ্বারা আপনাদের জানানো হল। তাদের এ সিদ্ধান্ত শাহাজদপুর মটর মালিক সমিতি মেনে না নিয়ে গত রবিবার সকালে সিরাজগঞ্জ মটর মালিক সমিতিভুক্ত জেরিন পরিবহণ নামের একটি কোচ শাহজাদপুর থেকে ফেরত পাঠায়। এর জের ধরে সোমবার সকালে শাহজাদপুর ট্রাভেল্সে’র একটি গাড়ি সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড়ে আটকে ওই গাড়ির সুপারভাইজার সাহেব আলী ও হেলপার রাজুকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে পুলিশ গাড়িটি উদ্ধার করে ঢাকা পাঠায়। এ খবর শাহজাদপুরে পৌছালে শাহজাদপুর থেকে সিরাজগঞ্জের সকল গাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দেয়। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। এর জের ধরে মঙ্গলবার সকাল থেকে পাবনা, বেড়া, নগরবাড়ী, শাহজাদপুর, কুষ্টিয়া, যশোর, রাজশাহী, নাটোর,বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর ও হিলিতে চলাচলকারী সকল বাস-কোচ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ঢাকা সহ উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গের সড়ক যোগাযোগ চরম আকারে ভেঙ্গে পড়েছে। এতে সাধারণ যাত্রীরা চরম দূর্ভেগে পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাহজাদপুর মটর মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম বাবলু, সদস্য আবু শামীম সূর্য্য ও শহিদুল ইসলাম মুক্তা জানান, সিরাজগঞ্জ মটর মালিক সমিতির অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত ও সিরাজগঞ্জ মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলীর নেতৃত্বে শাহজাদপুর ট্রাভেলস এর সুপারভাইজার ও হেলপারকে ন্যাক্কারজনক ভাবে মারপিটের প্রতিবাদে আমরা দুরপাল্লা এবং লোকাল সব গাড়ি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সিদ্ধান্তের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে পাবনা-নগরবাড়ি-বগুড়া-দিনাজপুর মটর মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ তাদের সকল গাড়িও এ রুটে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এর স্থায়ী সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। তারা এক অভিযোগে আরও জানান, যমুনা সেতু সিরাজগঞ্জে হওয়ায় সিরাজগঞ্জ মটর মালিক সমিতি অতিরিক্ত সুবিধা আদায় করতে নানা সময়ে নানা অজুহাতে আমাদের হেনস্থা করে আসছে। নতুন কোন রুটে গাড়ি দিতে চাইলে তাদেরকে মোটা অংকের উৎকোচ দিতে হয়। তারা এর স্থায়ী সমাধান চান। এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর আসনের ৩ এমপির হস্তক্ষেপেও এ দ্ব›দ্বর নিরসন হয়নি। ফলে এ জন দূর্ভোগ কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ বলতে পারছেনা।
সিরাজগঞ্জ মটর মালিক সমিতির এক নেতা জানিয়েছেন, গত ৫/৬ মাস আগে শাহজাদপুর থেকে এম এস পরিবহন এবং উল্লাপাড়া থেকে উল্লাপাড়া ট্রাভেল্স নামে দুইটি কোচ রাজশাহী রুটে চালানোর জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সিরাজগঞ্জ মটর মালিকেরা এর বিরোধীতা করলে এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধের এক পর্যায়ে সিরাজগঞ্জ-শাহজাদপুর রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গত এপ্রিল মাসে বিষয়টি সুরাহা করতে সিরাজগঞ্জ সদরের এমপি ডাঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না ,উল্লাপাড়ার এমপি তানভীর ইমাম এবং শাহজাদপুরের এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন উভয় পক্ষের বাস মালিকদের নিয়ে ঢাকায় বৈঠক করেন। বৈঠকে সিরাজগঞ্জের মটর মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক লিটন পোদ্দারকে আহবায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। এই কমিটি সিরাজগঞ্জে ফিরে এসে কয়েক দফা সভা করেন। পরে তারা বাস চলাচলের সময় সূচী নির্ধারনের জন্য লিটন পোদ্দারকে আহবায়ক করে ৩ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠন করেন। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন আব্দুস সামাদ ও আব্দুল অলি খান অরুণ। কমিটির এই দুই সদস্য এম এস পরিবহন ও উল্লাপাড়া ট্রাভেল্স নামের দুইটি নতুন কোচ রাজশাহী রুটে চলাচলের জন্য সময় ঠিক করে তা স্বাক্ষরের জন্য লিটন পোদ্দারের নিকট জমা দেন। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও লিটন পোদ্দার তাতে স্বাক্ষর না করার এক পর্যায়ে উল্লাপাড়া ট্রাভেল্স রাজশাহী রুটে চলাচল শুরু করে। এর কিছু দিন পর শাহজাদপুর থেকে এম এস পরিবহনও রাজশাহী রুটে চলাচল শুরু করে। এতে সিরাজগঞ্জের মটর মালিকরা ক্ষিপ্ত হন। এমন অবস্থায় গত দুই সপ্তাহ আগে সিরাজগঞ্জের এক বাস মালিক রয়েল টাচ নামের একটি নতুন বাস শাহজাদপুর থেকে রাজশাহী রুটে চালু করেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যকার দ্ব›দ্ব আরো চরম আকার ধারণ করে। এর এক পর্যায়ে গত সোমবার শাহজাদপুর ট্রাভেল্স ঢাকা যাওয়ার সময় কড্ডার মোড় এলাকায় সিরাজঞ্জের কিছু শ্রমিক ঐ কোচ টির চালককে মারধর করে এবং কোচটিকে ফিরিয়ে দেয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহজাদপুরের মালিক শ্রমিকরা সিরাজগঞ্জের মালিকদের পাবনা- কুষ্টিয়াগামী সকল প্রকার বাস কোচ বন্ধ করে দেয়। এ ভাবে সোমবার থেকেই এ সব রুটে সকল প্রকার মটর চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে গত তিন দিন ধরে সিরাজগঞ্জ,উল্লপাড়া, শাহজাদপুর,বগুড়া,নগরবাড়ি,কুষ্টিয়া,রাজশাহী,রংপুর,দিনাজপুর,হিলি ও পাবনার মধ্যে সকল ধরনের বাস -কোচ চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ অতিরিক্ত ভাড়া ও সময় ব্যয় করে বনপাড়া হয়ে পাবনা যাতায়াত করছে।
শাহজাদপুর মটর মালিক সমিতির সহ সভাপতি শাহজাদপুর ট্রাভেল্স এর মালিক ওয়ালি খান অরুণ অভিযোগ করে বলেন বাস চলাচলের চেইন মেইন্টেইন করা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সিরাজগঞ্জ , উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর মটর মালিকদের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছে। এমতাবস্থায় পরিস্থতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
সিরাজগঞ্জ মটর মালিক সমিতির সভাপতি জিন্নাহ আলমাজী অভিযোগ করে বলেন এই সিরাজগঞ্জ ও রাজশাহী,বগুড়া রুটে শাহজাদপুরের মালিকদের ৩০টি গাড়ী চলে। অথচ সিরাজগঞ্জের একজন মালিকের একটি গাড়ী শাহজাদপুর থেকে রাজশাহী রুটে চালাতে গেলে তা বন্ধ করে দেয়। তা ছাড়া শাহজাদপুরের মটর মালিকরা আমাদেরকে চাপে ফেলার জন্য পাবনার সকল গাড়ীও বন্ধ করে দিয়েছে। যা অনভিপ্রেত।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিরাজ উদ্দিন বলেন, গতকাল বিশেষ ব্যবস্থায় শাহজাদপুর থেকে ঢাকাগামী এসি কোচ গুলো ছেড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আজ থেকে সকল প্রকার বাস কোচ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এখন উভয় পক্ষের মালিক শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনছার আলী জানান, রমজান মাসের শুরু থেকে রাজশাহী রুটে চেইন ছাড়াই দু’টি বাস পরিচালনা করছে শাহজাদপুর মালিক সমিতি। ঈদের আগে আমরা বিষয়টি মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু ঈদ পার হবার পর ধীরে ধীরে তারা আরও গাড়ি বাড়িয়ে দেয় এ রুটে। এ নিয়ে দুই সমিতির দ্বন্ধের জেরে ৩দিন আগে জেনিন পরিবহন নামে একটি বাস আটকে রেখেছে শাহজাদপুর মালিক সমিতি। এর প্রতিবাদে আমরা শাহজাদপুরে রুটে কোনো গাড়ি দিচ্ছি না, তাদের গাড়িও আসতে দেওয়া হচ্ছে না।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী এ বিষয়ে জানান, দুই সমিতির দ্ব›েদ্বর কারণে বাস শাহজাদপুর-পাবনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। একই সাথে পাবনার সঙ্গে ঢাকা-বগুড়ার বাস চলাচলও করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বিকল্প রাস্তায় পাবনা-ঢাকার কিছু দূরপাল্লার বাস চলছে। সুষ্ঠ সমাধানের লক্ষে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। #